বগুড়া কারাগারে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন সদর আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রাগেবুল আহসান রিপু। বুধবার সন্ধ্যা ৭টায় কারাগারে অসুস্থ হয়ে পড়লে তাঁকে দ্রুত জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসক উন্নত চিকিৎসার জন্য তাঁকে ঢাকায় নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। কারাবিধি মেনে তাঁকে ঢাকায় পাঠানো হয়।
এদিকে দেড় মাসে বগুড়া কারাগারে হৃদরোগে অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে চারজন আওয়ামী লীগ নেতার মৃত্যু নিয়ে নানা প্রশ্নের সৃষ্টি হয়েছে। এ নিয়ে নেতাকর্মীদের মাঝে আতঙ্ক বিরাজ করছে।
জানা গেছে, ৯ ডিসেম্বর কারাবন্দী অবস্থায় অসুস্থ হয়ে বগুড়া জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও পুলিশ লাইন্স স্কুল অ্যান্ড কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ শাহাদত আলম ঝুনুর মৃত্যু হয়। সকাল সাড়ে ৯টার দিকে শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের কার্ডিওলজি বিভাগের ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে (আইসিইউ) মারা যান তিনি।
সাবেক এমপি রাগেবুল আহসান রিপুকে হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে
এর আগে, ২৫ নভেম্বর বগুড়া কারাগারে অসুস্থ হয়ে হাসাপাতালে চিকিৎসাধীন আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুল মতিন মিঠুর মৃত্যু হয়। ১১ নভেম্বর বগুড়া পৌরসভার ১৫ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম রতন মারা যান। এছাড়া শিবগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ ও উপজেলা দলিল লেখক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবদুল লতিফ মারা যান।
তদন্ত কমিটি গঠন: বগুড়ায় দেড় মাসে কারাগারে আটক চারজন আওয়ামী লীগ নেতা অসুস্থ হয়ে মারা যাওয়ার ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন করেছে জেলা প্রশাসন। মৃত নেতাদের পরিবারের পক্ষ থেকে কারা কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে অবহেলার অভিযোগ তোলায় এই তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। সিভিল সার্জনকে আহ্বায়ক করে ৫ সদস্যবিশিষ্ট কমিটি করা হয়। ১১ নভেম্বর থেকে ৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত কারাবন্দীদের মধ্যে চারজন আওয়ামী লীগ নেতা অসুস্থ হয়ে মারা যান। তাঁরা হচ্ছেন বগুড়া পৌরসভার ১৫ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম রতন, শিবগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের কোষাধক্ষ আব্দুল লতিফ, বগুড়া জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শাহাদত আলম ঝুনু এবং গাবতলী উপজেলা আওয়ামী লীগের নির্বাহী সদস্য আব্দুল মতিন মিঠু।
৫ আগস্ট রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর বগুড়া জেলার ১২টি থানায় আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীদের নামে হত্যা ও বিস্ফোরকদ্রব্য আইনে অসংখ্য মামলা হয়। গ্রেপ্তার এড়াতে অধিকাংশ নেতাকর্মী আত্মগোপনে চলে যান। এর মধ্যে গত তিন মাসে গ্রেপ্তার হন অর্ধশতাধিক নেতাকর্মী।
মৃত নেতাদের পরিবারের অভিযোগ কারাগারে চিকিৎসাজনিত অবহেলা ও অব্যবস্থাপনার কারণে তাঁদের মৃত্যু হয়েছে। কারাগারে অসুস্থ হয়ে পড়লে তাৎক্ষণিক হাসপাতালে নেওয়া হয়নি।
তবে বগুড়া জেলা কারাগারের জেল সুপার ফারুক আহমেদ বলছেন, যাঁরা মারা গেছেন তাঁরা বয়স্ক এবং তাঁরা কারাগারে আসার আগে থেকেই অসুস্থ ছিলেন। কারাগারে তাঁদের প্রতি বিন্দুমাত্র অবহেলা হয়নি। কারাগারের পরিবেশ আগের তুলনায় অনেক ভালো বলে উল্লেখ করেন তিনি।
বগুড়া জেলা প্রশাসক হোসনা আফরোজা বলেন, ‘কারাগারে চারজনের মৃত্যুর সঠিক কারণ আমি জানি না। ময়না তদন্ত রিপোর্ট পেলে কারণ জানা যাবে। তবে এক মাসে কারাবন্দী চারজনের মৃত্যুর ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। যদি কারা কর্তৃপক্ষের অবহেলার কারণে আসামিদের মৃত্যু হয়, তবে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।