করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউ আরও ভয়ঙ্কর বলে জানাচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। এ ভাইরাস শুধু ফুসফুসেই ধ্বংসযজ্ঞ চালায় না বরং শরীরের অন্যান্য অঙ্গ-প্রতঙ্গের উপরও খারাপভাবে প্রভাব ফেলে।
করোনাভাইরাস প্রথমে শ্বাসনালীতে প্রবেশ করে এবং সংক্রামিত করে। এরপর কাশির সৃষ্টি করে, শ্বাসকষ্ট হয়। এটি কিছুদিনের মধ্যেই ফুসফুসের স্বাস্থ্যের মারাত্মক ক্ষতি করতে পারে।
মারাত্মক এই ভাইরাসটি ফুসফুসের সুস্থ কোষগুলোতে প্রবেশ করে বহুগুণে বংশবিস্তার করে। ফুসফুসে প্রদাহজনক পরিবর্তন ঘটে এবং টিস্যু ও থলিগুলোকে মারাত্মকভাবে আক্রান্ত করে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, করোনাভাইরাস শরীরের বিভিন্ন অংশে মারাত্মক প্রদাহের সৃষ্টি করে। এর ফলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা আরও কমে যেতে শুরু করে।
যারা ডায়াবেটিস বা উচ্চ রক্তচাপে আগে থেকেই আক্রান্ত থাকেন কিংবা অতিরিক্ত মোটা হন; তাদের ক্ষেত্রে করোনা মারাত্মক হতে পারে। জেনে নিন ফুসফুস ছাড়া করোনায় শরীরের আরও যেসব অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে-
হার্টের স্বাস্থ্য: যারা আগে থেকেই হৃদরোগে আক্রান্ত; তাদের ক্ষেত্রেও করোনা মারাত্মক হতে পারে। করোনাভাইরাস হার্টের পেশিগুলোতে বড় ধরনের প্রদাহ সৃষ্টি করতে পারে।
হার্ভার্ডের স্বাস্থ্য প্রকাশনা অনুসারে, হাসপাতালে ভর্তি প্রায় এক-চতুর্থাংশ গুরুতর কোভিড-১৯ আক্রান্তদের মধ্যে হার্ট ইনজুরির লক্ষণ থাকে (রক্তের প্রবাহে এনজাইম ট্রপোনিনের মাত্রা বেড়ে যায়)।
এক্ষেত্রে উপসর্গ হিসেবে বুক ধড়ফড়, ঘন ঘন শ্বাস নেওয়া, বুকে ব্যথা এবং দীর্ঘস্থায়ী ক্লান্তির সংক্রমিতদের মধ্যে দেখা যায়।
স্নায়বিক ক্ষতি: বিভিন্ন প্রতিবেদন অনুসারে, কোভিড-১৯ এ আক্রান্তরা প্রায়শই মানসিক বিভ্রান্তি, মাথাব্যথা, হ্যালুসিনেশন, মাথা ঘোরা এবং ঝাপসা দৃষ্টি সমস্যাগুলোর সম্মুখীন হয়ে থাকেন।
জ্যামা নিউরোলজিতে প্রকাশিত একটি সমীক্ষায় আরও দেখা গেছে, চীনের উহানের ২১৪ জন হাসপাতালে ভর্তি করোনা রোগীর এক তৃতীয়াংশের মধ্যে নিউরোলজিক এসব লক্ষণ রয়েছে।
এগুলোর মধ্যে খিঁচুনি এবং স্ট্রোকের মধ্যে কিছু গুরুতর জটিলতা ছিল। বিভিন্ন গবেষণা দাবি করেছে, আলঝাইমার এবং পার্কিনসনস রোগটিও কোভিড-১৯ এর দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব হতে পারে।
কিডনির ক্ষতি: শরীরের অন্যান্য অঙ্গের মতোই গুরুত্বপূর্ণ এ অংশেরও ক্ষতি করে করোনাভাইরাস। যারা কিডনির বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত; তাদের জন্য মারাত্মক হতে পারে করোনার প্রভাব।
করোনাভাইরাস শরীরের সুস্থ কোষগুলোকে প্রথমে সংক্রমিত করে। যেখানে ভাইরাল স্পাইক প্রোটিনগুলি এসিই২ রিসেপ্টরগুলোতে সংযুক্ত হয়, যা কোষের সেলুলার ঝিল্লিতে বসে কিডনিসহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গে বাসা বাঁধে।
ভাইরাস কিডনি কোষে প্রবেশের পরে এটি মারাত্মক প্রদাহ সৃষ্টি করতে পারে এবং কিডনির সুস্থ টিস্যুগুলিকে বড় ধরনের আহত করতে পারে। এটি কম প্রস্রাবের আউটপুট এবং অপ্রতুল প্রস্রাবের কারণ হতে পারে এবং কিডনি-অকার্যকর পোস্ট-কোভিডের পরেও বিকশিত হতে পারে।
রক্ত জমাট বাঁধা: করোনাভাইরাস শরীরে মারাত্মক প্রদাহ সৃষ্টি করতে পারে, যা ফলে রক্ত জমাট বাঁধতে শুরু করে। বিশেষজ্ঞদের মতে, সার্স কোভ-২ ভাইরাসটি যখন শরীরের এসই২ রিসেপ্টরগুলোর সঙ্গে একবার নিজেকে সংযুক্ত করে; তখন রক্তনালীতে রক্ত জমাট বাঁধার প্রোটিন তৈরি করতে চাপ দেয়।
চিকিত্সকরা রক্তের জমাট বাঁধার লক্ষণগুলো শুধু ফুসফুসেই (ফুসফুসীয় এম্বোলিজম) নয়, করোনা রোগীর পায়ে (গভীর শিরা থ্রোম্বোসিস) এবং শরীরের অন্যান্য অংশেও লক্ষ্য করেছেন।