বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে ঘিরে সহিংসতার কারণে দীর্ঘ দিন বন্ধ থাকার পর আজ রোববার (১৮ আগস্ট) থেকে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলেছে। কাঁধে ব্যাগ নিয়ে ক্লাসরুমে ফিরেছে কোমলমতিরা।
প্রাণ ফিরে পেয়েছে শিক্ষাঙ্গণ।
ফের চিরচেনা রূপে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ক্যাম্পাসগুলো। চারিদিকে উচ্ছ্বাস, উৎফুল্ল পরিবেশ। তবে এরইমধ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে একটি ছবি, যা যে কারও হৃদয়কে নাড়া দেবে। চোখ ছলছল করে উঠবে।
সেটি হলো – রাজধানীর বিএএফ শাহীন কলেজের শ্রেণিকক্ষের একটি দৃশ্য। যেখানে দেখা যাচ্ছে, সবাই পরীক্ষা দিতে মগ্ন। যে যার খাতায় লিখতে ব্যস্ত। এদের মধ্যে সামনের বাঁ পাশের বেঞ্চের একটি সিট ফাঁকা। সেখানে পরীক্ষার্থী বসে নেই। তবে বেঞ্চের ওপর রয়েছে নানা ধরনের ফুল দিয়ে তৈরি বুকেট। তার সাথেই একটি কাগজে লেখা – ‘শফিক উদ্দিন আহমেদ আফনান। ’
হৃদয়স্পর্শী ছবিটি শেয়ার করে শফিক উদ্দিন আহমেদ আফনানকে শহীদ আখ্যা দিয়েছেন নেটিজেনরা। তার রুহের মাগফিরাত কামনা করছেন তারা।
বেসরকারি ইন্ডিপেন্ডেন্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের পেজে সেই ছবি পোস্ট করে লেখা হয়েছে, ‘আজকের একাদশ শ্রেণির বার্ষিক পরীক্ষায় আহনাফ নেই। দেশের জন্য তিনি শহীদ হয়ে গেছেন। রোল নাম্বার অনুযায়ী তার বেঞ্চে সুহৃদ সহপাঠীদের পুষ্পাঞ্জলি। আমরা তোমাদের ভুলবো না। ’
নেটিজেনরা বলছেন, শহীদ আফনান একজন বীর। আর বীরদের পরীক্ষা দেওয়া লাগে না, তারা সবকিছুর ঊর্ধ্বে। আফনানকে তার বন্ধুরা-সহপাঠীরা ভুলে যায়নি। ভুলতেও দেবে না। আবু সাঈদ, আফনান, মুগ্ধদের এই প্রজন্ম গর্বিত করেছে। তারা চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে। আফনানরা রয়ে যাবে স্মৃতিতে, দোয়াতে ও বিনম্র শ্রদ্ধায়।
শফিক উদ্দিন আহমেদ আফনান ছিল বিএএফ শাহীন কলেজের একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী। ২০২৫ সালে তার এইচএসসি পরীক্ষা দেওয়ার কথা ছিল তার।
গত ৪ আগস্ট রাজধানীর মিরপুর ১০ নম্বরে গুলিতে নিহত হয় আহনাফ। স্বৈরাচার সরকার পতনে মাত্র ১৭ বছর বয়সেই ঝরে পড়ে একটি তাজা প্রাণ।
আফনানকে নিয়ে এখন গর্বিত তার বিদ্যাপীঠ ও সহপাঠীরা। পরিবারের সদস্যরাও গর্বিত, তবে ছেলের মৃত্যুর মধ্য দিয়ে এভাবে গর্বিত হতে চাননি আফনানের মা সাফাত সিদ্দিকী।
জানা গেছে, কোটা সংস্কার আন্দোলনের পক্ষে শুরু থেকেই আহনাফ সোচ্চার ছিল ছেলেটি। আন্দোলনে অংশ নিয়ে টিয়ার গ্যাস ও রাবার বুলেটে আহত হয়ে সে একবার বাসায় ফিরেছিল।
যতটা করার করেছ, এখন আর আন্দোলনে যাওয়ার দরকার নেই বলে ছেলেকে শাসন করেছিলেন আহনাফের মা আর খালা।
তাদের কথা না শুনে আফনান জবাব দিয়েছিল, ‘তোমাদের মতো ভিতু মা-খালাদের জন্য ছেলেমেয়েরা আন্দোলনে যেতে পারছে না। ১৯৭১ সালে তোমাদের মতো মা-খালারা থাকলে দেশ আর স্বাধীন হতো না। ’
ছেলেকে হারানোর শঙ্কাই এখন সত্যিতে রূপ নিল। বুকে পাথর বেঁধে সেই সত্যটা বাবা-মা মেনে নিলেও আফনানের ছোট ভাই ইফতেখার মুষড়ে পড়েছে।
পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছেন, বড় ভাই মারা যাওয়ার পর থেকে ইফতেখার খাওয়াদাওয়া প্রায় বাদ দিয়েছে। ভাইয়ের টি–শার্ট গায়ে দিয়ে বসে থাকছে। পাল্টাতে বললে ভাইয়ের অন্য টি–শার্ট গায়ে দিচ্ছে। ভাইয়ের গিটার বুকের কাছে জড়িয়ে ধরে চোখের পানি ফেলে সে। গিটারে কেউ হাত দিলেই সে দৌড়ে গিয়ে দেখে, সেটি ঠিক আছে কি না। ভাইয়ের এই স্মৃতি নষ্ট হতে দিতে নারাজ ইফতেখার।