বাগেরহাটের ফকিরহাটে প্রথমবার পরীক্ষামূলকভাবে রঙ্গীন ফুলকপি চাষ করে ব্যাপক সাফল্য লাভ করেছেন উপজেলার বেতাগার মাসকাটা গ্রামের শ্যামল পাল নামে এক কৃষক। বাহারি রঙের ফুলকপি চাষ করে এলাকায় বেশ সাড়া ফেলেছেন তিনি। প্রতিদিনই হলুদ, বেগুনি রঙের ফুলকপি দেখতে ও কিনতে ভিড় করছেন ক্রেতারা। আকারে বড় এবং দামেও বেশি এসব ফুলকপি থেকে লাভবানও হচ্ছেন তিনি। তার এই সাফল্য দেখে অন্য কৃষকরাও এর চাষে উৎসাহিত হচ্ছেন।
কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, চারা রোপণের দুই মাস পর অর্থাৎ ৬০ থেকে ৬৫ দিনের মধ্যে জমি থেকে ফসল উত্তোলন করে বাজারে বিক্রি করা যায় এই ফুলকপি। এসএসিপি প্রকল্পের আওতায় পরীক্ষামূলকভাবে এটি চাষ করা হয়েছে। উপজেলার বেতাগা ইউনিয়নের মাসকাটা গ্রামে ৫০ শতক জমিতে হলুদ, সাদা ও বেগুনী রঙের ফুলকপি চাষ করেছেন কৃষক শ্যামল পাল। চাষকৃত রঙিন জাতের এই ফুলকপিগুলো পুষ্টিগুণে ভরপুর এবং দাম সাধারণ জাতের ফুলকপির চেয়ে অনেক বেশি। ওই কৃষককে বিভিন্ন পরামর্শ ও সহযোগিতা করেছে কৃষি বিভাগ।
কৃষক শ্যামল পাল জানান, উপজেলা কৃষি বিভাগের সহযোগিতায় তিনি এই প্রথম ৫০ শতক জমিতে রঙিন ফুলকপি চাষ করেন। সাধারণ সাদা জাতের ফুলকপি বাজারে প্রতি পিস ৩০/৪০ টাকা দরে বিক্রি হলেও তিনি এই ফুল কপি প্রতি পিস প্রায় ৫০ থেকে ৬০ টাকা দামে বিক্রি করছেন। নতুন জাত ও দাম বেশি পাওয়ায় আগামী মৌসুমে তিনি আরো বেশি জমিতে এই ফুলকপি চাষ করবেন বলে জানান।
কয়েকজন কৃষক জানান, সাধারণ জাতের মতোই রঙিন ফুলকপির ফলন ভালো হয়েছে। ভালো চাহিদা ও উচ্চমূল্য হওয়ায় বেশি লাভ পাওয়া যায়। তা দেখে তারা উৎসাহিত হয়েছেন। তাই আগামীতে তারা এই জাতের ফুলকপি চাষে আগ্রহ প্রকাশ করেন।
স্থানীয়রা জানান, সবজি বিক্রেতা থেকে শুরু করে পাইকারি বিক্রেতারাও হন্যে হয়ে খুঁজছেন এই রঙিন ফুলকপি। ফলে এই ফুলকপি চাষাবাদ নিয়ে এখন রঙিন স্বপ্ন দেখছেন স্থানীয় কৃষকেরা।
উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা প্রদীপ মন্ডল ও সোলাইমান আলী জানান, রঙিন ফুলকপি সাধারণ ফুলকপির তুলনায় পুষ্টিগুণ বেশি থাকে। পুষ্টিগুণ আর ভিন্ন রঙের কারণে স্থানীয় বাজারে এর প্রচুর চাহিদা রয়েছে। এজন্য কৃষক দামও কিছুটা বেশি পাচ্ছেন। প্রথমবার কৃষক শ্যামল পাল একটু হতাশাবোধ করেছিলেন, তবে চাষাবাদ ভাল ও দাম বেশি পাওয়ায় তিনি খুব খুশি। তাকে কৃষি বিভাগ সব ধরনের সহযোগিতা করেছে। আগামীতে এর প্রসার ঘটাতে কৃষি বিভাগ থেকে কৃষকদের সব ধরনের সহযোগিতা দেবে বলে জানান।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ শেখ সাখাওয়াত হেসেন বলেন, এই ফসল চাষাবাদে রাসায়নিক সার ও কোনো প্রকার কীটনাশক ব্যবহার করতে হয় না। কেবল জৈবসার ব্যবহার করে ভালো ফলন পাওয়া সম্ভব। বেতাগার কৃষক শ্যামল পাল নিজের প্রচেষ্টা আর কৃষি বিভাগের পরামর্শে প্রথমবার রঙিন ফুলকপি চাষ করে সফল হয়েছেন। তিনি আরও বলেন, পুষ্টিবিদদের মতে রঙিন ফুলকপিতে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট থাকে, যা ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়তা করে। এই রঙের সবজিতে অন্য রঙের সবজির তুলনায় প্রায় পঁচিশ গুণ বেশি ভিটামিন এ উপাদান থাকে। কৃষক শ্যামল পালকে আমরা রঙিন ফুলকপির বীজ, জৈব সার ও ফেরোমন ফাঁদ দিয়েছিলাম। নিরাপদ পুষ্টি চাহিদা মেটাতে এবং উচ্চ মূল্য প্রাপ্তির জন্য নিরাপদ রঙিন সবজি চাষাবাদে কৃষকদের এগিয়ে আসতে হবে বলে জানান এ কর্মকর্ত।
ফকিরহাট উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান স্বপন দাশ বলেন, রঙ্গিন ফুলকপি উৎপাদন ভালো হওয়ায় উপজেলার অন্য কৃষকদের মাঝে ব্যাপক সাড়া দেখা গেছে। রঙিন ফুলকপির পুষ্টিগুণ ও বাজারমূল্য অনেক বেশি। খেতেও সুস্বাদু। আগামীতে উপজেলায় রঙিন জাতের ফুলকপির চাষ আরো বাড়বে। উপজেলার কৃষকেরা নিরাপদ ও পুষ্টিগুণ সপন্ন নতুন নতুন সবজি উৎপাদন করছেন। পুষ্টিগুণ আর ভিন্ন রঙের কারণে স্থানীয় বাজারে এর প্রচুর চাহিদা রয়েছে। এজন্য কৃষক দামও কিছুটা বেশি পাচ্ছেন।
Leave a comment