সাতক্ষীরার শ্যামনগরে বেসরকারি একটি হাসপাতালে অস্ত্রোপচারের পর তামান্না সুলতানা রূপা (২০) নামের এক প্রসূতির মৃত্যু হয়েছে। এ জন্য চিকিৎসকের অবহেলাকে দায়ী করেছেন স্বজনরা। মঙ্গলবার রাতে ওই তরুণীর মৃত্যু হয়। তবে সদ্যজাত শিশুটি বেঁচে আছে।
তামান্না উপজেলার জয়াখালী গ্রামের মো. হাবিবুর রহমানের স্ত্রী। তাঁর চাচি নারগিছ সুলতানার ভাষ্য, সন্তানসম্ভবা রূপাকে সোমবার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেছিলেন। প্রসব বেদনা শুরুর পর সেখানে অ্যানেসথেসিয়ার চিকিৎসক পাওয়া যায়নি। বাধ্য হয়ে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় তামান্নাকে পাশের রিডা বেসরকারি হাসপাতালে নেওয়া হয়। আলট্রাসনোগ্রামের প্রতিবেদন দেখে ডা. রিতা রানী তাঁকে তাৎক্ষণিক অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে সন্তান জন্মদানের পরামর্শ দেন। তাঁর কথা মতো রাত ১২টার দিকে সন্তানের জন্ম হয়। তবে কিছুক্ষণের মধ্যেই তামান্নার খিঁচুনি দেখা দেয়। এ সময় এক সেবিকা ফোনে চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলে ইনজেকশন দেন। তখনই তামান্না নিস্তেজ হয়ে যায়।
স্বজনরা জানান, বেসরকারি হাসপাতালের লোকজন তড়িঘড়ি করে তামান্নাকে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে নেওয়ার জন্য অ্যাম্বুলেন্সে তুলে দেয়। তবে পথেই তিনি মারা যান। তারা মরদেহ নিয়ে বাড়িতে ফিরে যান।
মৃত্যুর জন্য চিকিৎসক রিতা রানীকে দায়ী করেন ওই তরুণীর মামা আওছাফুর রহমান। তিনি বলেন, এ বিষয়ে অভিযোগ করা হলে মরদেহ কাটাছেঁড়া (ময়নাতদন্ত) করা হতে পারে। তাই তারা আইনগত ব্যবস্থা না নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
তবে একাধিক সূত্রে জানা গেছে, ওই তরুণীর মৃত্যুর পর তাঁর পরিবারের সঙ্গে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ মোটা অঙ্কের টাকায় আপস করেছে। মরদেহের জানাজা ও দাফনের সবকিছুই হাসপাতালের লোকজনের তদারকিতেই সম্পন্ন হয়েছে। এলাকাবাসীর ভাষ্য, রিডা হাসপাতালের চেয়ারম্যান মাসুদুল আলমের বাবা বিএনপির রাজনীতিতে সম্পৃক্ত। যে কারণে ভুক্তভোগীর পরিবার অভিযোগ করার সাহস পায়নি।
বক্তব্য জানতে ডা. রিতা রানীর ফোনে কল দিলেও ধরেননি। হাসপাতালের চেয়ারম্যান মাসুদুল আলমের বক্তব্যও পাওয়া যায়নি। তবে প্রতিষ্ঠানের পরিচালক আব্দুল্লাহ ওই তরুণীর মৃত্যুর ঘটনায় নিজেদের দায় অস্বীকার করেন। তাঁর ভাষ্য, রোগীর স্বজনের পরামর্শেই অস্ত্রোপচার করেন তারা। পরিস্থিতি খারাপ হলে সাতক্ষীরায় স্থানান্তরের সময় পথেই রোগীর মৃত্যু হয়। মৃত তামান্নাকে নিকটাত্মীয় হিসেবে দাবি করে তিনি বলেন, এ জন্যই দাফন ও জানাজায় অংশ নিয়েছেন।
শ্যামনগর থানার ওসি মো. হুমায়ুন কবীর বলেন, ভুক্তভোগীর পরিবার অভিযোগ করেনি। লিখিত পাওয়া গেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।