পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন বলেছেন, বিদেশে প্রবাসীদের রাজনৈতিক বিভেদে দেশের ইমেজ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এ থেকে বেরিয়ে এসে প্রবাসীদের সে দেশের স্থানীয় রাজনীতিতে জড়িত হতে হবে।
তাহলেই বাংলাদেশকে ব্র্যান্ডিং করা সম্ভব হবে।
শনিবার (১১ জানুয়ারি) রাজধানীর প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেল এক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
বছরব্যাপী বিশ্বের বিভিন্ন দেশে প্রবাসীদের নিয়ে অনুষ্ঠেয় ‘ব্র্যান্ডিং বাংলাদেশ’ শীর্ষক ‘ওয়ার্ল্ড কনফারেন্স সিরিজ-২০২৫’ উদ্বোধনী ও ব্যাংক রেমিটেন্স অ্যাওয়ার্ড অনুষ্ঠানের আয়োজন করে সেন্টার ফর নন রেসিডেন্স বাংলাদেশি।
এতে প্রধান অতিথির বক্তব্যে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা এম তৌহিদ হোসেন বলেন, আমি প্রথমে বাংলাদেশের ব্র্যান্ডিংয়ের বিষয়ে বলবো। আমাদের পজিটিভ ইমেজ বাড়াতে হবে। ইমেজ একদিনে সৃষ্টি হয় না। দীর্ঘ সময়ে গড়ে তুলতে হয়। আমাদের শান্তিরক্ষীরা আফ্রিকায় আমাদের বিশাল ইমেজ গড়ে তুলেছেন। এসব পজিটিভ ইমেজ। আবার ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিলে আমাদের ইমেজ ক্ষুণ্ন হয়।
উপদেষ্টা বলেন, আওয়ামী লীগ, বিএনপি পৃথিবীর মধ্যে সবচেয়ে বড় দল। বিশ্বের সব দেশে তাদের শাখা পাবেন। প্রবাসে এই রাজনৈতিক বিভেদ ইমেজ ক্ষতি করছে। ভারতের দিকে তাকান। তাদের প্রবাসে এমন দল নেই। এ থেকে বেরোতে হবে। আমাদের প্রবাসীদের সেই দেশের স্থানীয় রাজনীতিতে জড়িত হতে হবে। এটাই আমাদের ব্র্যান্ডিংয়ের আসল রাস্তা।
বিদেশে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে এখন অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। ভারতীয় মিডিয়া সংখ্যালঘুদের নিয়ে এই মিথ্যা প্রচারণা চালাচ্ছে। এ বিষয়ে প্রবাসীদের সঠিক ভূমিকা পালন করতে হবে।
তিনি বলেন, প্রবাসীরা বিমানবন্দরে হয়রানি যেন হয়, এটা দেখতে হবে। বিমানবন্দরে সম্প্রতি একজন প্রবাসীকে হয়রানি করা হয়েছে। এই ঘটনায় দোষীদের শাস্তি যেন হয়।
উপদেষ্টা বলেন, আশা করি দ্রুত সময়ে নির্বাচনী রোডম্যাপ এসে যাবে। এটা হলে বিনিয়োগকারীরা নিরাপদ বোধ করবে, তখন বিনিয়োগ আসবে। এই অনিশ্চয়তা থেকে খুব শিগগিরই দেশ মুক্ত হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
অনুষ্ঠানে লন্ডনের টাওয়ার হ্যামলেটের স্পিকার ব্যারিস্টার সাইফ উদ্দিন খালেদ বলেন, বাংলাদেশে আমাদের রক্তঋণ আছে। এখানে আঘাত হলে, লন্ডনেও আমরা গর্জে উঠি। আপনাদের যখন কিছুতে আঘাত লাগে, আমাদেরও আঘাত লাগে। আপনাদের দুঃখে আমাদেরও বুক ভেসে ওঠে। আমরা সব সময় আপনাদের পাশে আছি।
অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ ব্যাংক গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, আমাদের দুর্বলতা অনেকাংশেই কাটিয়ে উঠেছি। রেমিট্যান্স গত ছয় মাসে গড়ে ২৬ শতাংশ করে আছে। ছয় মাসে তিন বিলিয়ন ডলার। রপ্তানি ২ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার। আমরা একটি ভালো পরিবেশ তৈরির চেষ্টা করছি।
ব্যাংকার অ্যাসোসিয়েশন সভাপতি আব্দুল হাই সরকার বলেন, অনেক সময় দেখি বিদেশে প্রবাসীরা ঝগড়া-বিবাদ করে। এটা খুব খারাপ। এ থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। আমাদের কর্মীদের দক্ষতা আরও বাড়াতে হবে।
জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী ফোর্সের সাবেক কমান্ডার মে. জেনারেল ফজলে এলাহী আকবর (অব.) বলেন, সেনাবাহিনী বিদেশে বাংলাদেশকে ব্র্যান্ডিং করেছে। এর পেছনে অন্যতম কারণ তারা খুব সুশৃঙ্খল বাহিনী। এছাড়া তাদের নামে কোনো যৌন হয়রানির অভিযোগ নেই। দেশের বাণিজ্য বাড়াতে শান্তি মিশনরক্ষীদের সম্পৃক্ততা করা যেতে পারে।
রেমিট্যান্স বিশেষজ্ঞ ও বিশিষ্ট ব্যাংকার আব্দুল মান্নান বলেন, রেমিট্যান্সযোদ্ধারা বাংলাদেশকে বিশ্বে চিনিয়েছেন। তাদের আমাদের মূল্যায়ন করতে হবে। রেমিট্যান্সকে শুধু টাকার অংকে দেখা উচিত নয় । এটাকে আরও গভীরভাবে দেখতে হবে।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন এনআরবি চেয়ারপারসন এম এস সেকিল চৌধুরী।