প্রতীক বরাদ্দের পর জমজমাট প্রচার-প্রচারণা শেষ। এখন অপেক্ষা নির্বাচনের। একদিন বিরতি নিয়ে আগামী বুধবার (১৫ জুন) অনুষ্ঠিত হবে কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের (কুসিক) ভোট। ২৭ ওয়ার্ডে মোট ১০৮ জন কাউন্সিলর, ৩৬ জন সংরক্ষিত কাউন্সিলর ও পাঁচজন মেয়র প্রার্থী লড়বেন ভোটযুদ্ধে। আর পছন্দের প্রার্থীকে নির্বাচিত করতে সিটির মোট ১০৫টি কেন্দ্রে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের (ইভিএম) মাধ্যমে ভোটযুদ্ধে শরীক হবেন ভোটাররা।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়ালের ‘দেখভালে’ কুসিক নির্বাচনে এবার দুই লাখ ২৯ হাজার ৯২০ জন ভোটার নিজেদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন। এর মধ্যে দুইজন তৃতীয় লিঙ্গের ভোটারও রয়েছেন। বিপুল সংখ্যক এই ভোটারের নিরাপত্তাসহ পুরো নির্বাচন প্রক্রিয়া নির্বিঘ্ন করতে তাই কোনোকিছুরই কমতি রাখেনি নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
ইতোমধ্যে যে কোনো ধরনের সহিংসতা এড়াতে ভোটের এলাকায় বৈধ অস্ত্র বহন ও প্রদর্শনের ওপর নিষেধাজ্ঞাও দিয়েছে ইসি। সেই সঙ্গে বিশৃঙ্খলা এড়াতে মাঠে তৎপর রয়েছে র্যাব, পুলিশ, বিজিবিসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। নগরীর প্রতিটি অলি-গলিতে টহল দিচ্ছে তারা। সঙ্গে সাদা পোশাকেও তৎপর রয়েছেন বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তারা।
এদিকে, সোমবার (১৩ জুন) মধ্যরাতে (১২টা) আনুষ্ঠানিক প্রচার-প্রচারণা শেষ হওয়ার আগ মুহূর্তেও ভোটারদের নানা প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন প্রার্থীরা। এমনকি কর্মী-সমর্থক ছাড়াও খোদ প্রার্থীদের স্ত্রী, ছেলে-মেয়ে ও আত্মীয়স্বজনদেরও প্রচারণার মাঠে দেখা গেছে। প্রতীক বরাদ্দের পর প্রতিদিন দুপুর ২টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত নির্বাচনি আচরণবিধি মেনে জমজমাট প্রচারণায় ব্যস্ত কেটেছে সবার। যদিও প্রচারণায় নিত্যসঙ্গী ছিল একে-অপরের ওপর অভিযোগের কাদা ছোড়াছুড়ি।
অন্যদিকে, নির্বাচনে জয়ী হওয়ার দৌড়ে এখন অবধি এগিয়ে কে- তাতে নিশ্চিত নন ভোটাররা। তবে দলীয় কোন্দলে থাকা কুসিক নির্বাচনের বড় দুই প্রতিদ্বন্দ্বী- বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত (সদ্য পদত্যাগী) মেয়র মনিরুল হক সাক্কু ও আওয়ামী লীগের প্রার্থী আরফানুল হক রিফাতের সমর্থকদের দাবি- তাদের প্রার্থীই জয়ী হবেন। এছাড়া অন্যরাও জয়ের প্রত্যাশা ব্যক্ত করেছেন। তবে শেষ ফলটা মিলবে ভোটযুদ্ধের পরই।
সিটির হাল ধরতে নির্বাচনে মেয়র পদে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছিলেন ছয়জন প্রার্থী। তাঁরা হলেন- বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ মনোনীত আরফানুল হক রিফাত, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মো. রাশেদুল ইসলাম, স্বতন্ত্র হিসেবে কামরুল আহসান বাবুল, মো. মনিরুল হক সাক্কু (বিএনপি নেতা ও দুইবারের মেয়র), মোহাম্মদ নিজাম উদ্দিন ও মাসুদ পারভেজ খান। এরমধ্যে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী মাসুদ পারভেজ খান ইতোমধ্যেই মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেছেন। এতে কুমিল্লা সিটির দায়িত্ব কাঁধে নিতে মেয়র পদে লড়ছেন পাঁচজন প্রার্থী। যদিও নির্বাচনে কাউন্সিলর পদে ৫ নম্বর সাধারণ ওয়ার্ড ও ১০ নম্বর সাধারণ ওয়ার্ডের দুজন প্রার্থী এরই মধ্যে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন।
২০১৭ সালের ৩০ মার্চ কুসিকে সর্বশেষ নির্বাচন হয়। এরপর ওই বছরের ১৭ মে প্রথম সভা অনুষ্ঠিত হয়েছিল। আইন অনুযায়ী প্রথম সভা থেকে পরবর্তী পাঁচ বছর নির্বাচিত করপোরেশনের মেয়াদ থাকে। সে হিসেবে সিটির মেয়াদ শেষ হয় চলতি বছরের ১৬ মে। আর মেয়াদ শেষ হওয়ার ১৮০ দিনের মধ্যে ভোটগ্রহণ করতে হয়।
২০১১ সালে দুটি পৌরসভাকে একীভূত করে কুমিল্লা সিটি করপোরেশন গঠিত হয়। পরে ওই বছরই প্রথম নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এরপর ২০১৭ সালে সিটির পার্শ্ববর্তী বেশ কয়েকটি ইউপিকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এতে আয়তন বাড়ে প্রায় তিন গুণ। বর্তমানে এই সিটিতে ২৭টি সাধারণ ওয়ার্ড আছে।
পি এস/এন আই