শ্রম ও কর্মসংস্থান উপদেষ্টা এম সাখাওয়াত হোসেন বলেছেন, শিল্প খাতে এক ধরনের অস্থিরতা চলছে। বিশেষ করে তৈরি পোশাক খাতে এই অস্থিরতা সৃষ্টি করা হয়েছে। পতিত সরকার ও তাদের বন্ধুরাষ্ট্র জড়িত হয়ে কিছু সমস্যা তৈরি করছে। কিছু সমস্যা শ্রমিকেরা না বুঝে করছেন।
বুধবার ভোটার সচেতনতা ও নাগরিক সক্রিয়তা কার্যকম নিয়ে আয়োজিত ‘নাগরিক উৎসবে’ তিনি এসব কথা বলেন। দ্য হাঙ্গার প্রজেক্ট বাংলাদেশ ও সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) যৌথভাবে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের মিলনায়তনে ওই উৎসবের আয়োজন করে।
পোশাক খাতের অস্থিরতা নিয়ে এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, শ্রমিকেরা সমস্যা তৈরি করছেন না। তাদের দিয়ে সমস্যা তৈরি করানো হচ্ছে। এটি দুর্ভাগ্যজনক। যারা দেশের বাইরে থেকে অস্থিরতা তৈরির ইন্ধন দিচ্ছে, তাদের বিষয়ে সচেতন থাকতে হবে।
অনুষ্ঠানে জাতীয় নির্বাচন নিয়েও কথা বলেন সাবেক নির্বাচন কমিশনার এম সাখাওয়াত। তিনি বলেন, এ পর্যন্ত চারটি জাতীয় নির্বাচন দেশে–বিদেশে মোটামুটি গ্রহণযোগ্য হয়েছে।
আওয়ামী লীগ সরকারের আমলের সর্বশেষ তিনটি নির্বাচনের সমালোচনা করে তিনি বলেন, কীভাবে নির্বাচনকে নষ্ট করতে হয়, তা নিয়ে পিএইচডি করতে দেশের বাইরে যেতে হবে না। এই নির্বাচন ছিল গণতন্ত্রের কফিনে শেষ পেরেক। তার পরিণতি ইতোমধ্যে দেখা গেছে। রাষ্ট্রের প্রতিটি কাঠামো ধ্বংস করা হয়েছে।
শ্রম ও কর্মসংস্থান উপদেষ্টা বলেন, আগামী দিনে যে নির্বাচন হবে, তাতে যারা অংশ নেবেন, তারা নিশ্চয় গত তিনটি নির্বাচন থেকে শিক্ষা নিয়েছেন। যদি শিক্ষা না নেন, তাহলে তা দুর্ভাগ্যজনক। যাতে কারও ভোট ছিনতাই না হয়ে যায়, সে জন্য নাগরিকদের ভোটাধিকার নিয়ে সতর্ক থাকার আহ্বান জানান তিনি।
সুজনের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি বিচারপতি এম এ মতিন বলেন, মানুষের মধ্যে অধিকার–সচেতনতা জাগিয়ে তুলতে হবে। মানুষের কিছু জন্মগত অধিকার রয়েছে। গণতন্ত্রের চেতনা জাগ্রত থাকলে শাসনতন্ত্র ও আইনের প্রয়োজন হয় না। আর সেই চেতনা মরে গেলে শাসনতন্ত্র ও আইন দিয়েও তা জাগানো যাবে না। তিনি বলেন, মানুষ এখন স্বাধীনতার যে স্বাদ পাচ্ছে, তা ধরে রাখার জন্য সতর্ক থাকতে হবে।
সুজন সম্পাদক ও নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান বদিউল আলম মজুমদার বলেন, বর্তমান পরিস্থিতির জন্য সবার দায় আছে। এ ক্ষেত্রে দায় বেশি রাজনীতিবিদদের। তাঁরা যেসব অঙ্গীকার করেছিলেন, সেগুলো বাস্তবায়ন করেননি। বিচারপতি হাবিবুর রহমান বলেছিলেন, দেশ বাজিকরের হাতে।
বদিউল আলম মজুমদার বলেন, এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পেতে হলে অবশ্যই রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সংস্কার প্রয়োজন। এটি চাপিয়ে দিলে হবে না। রাজনৈতিক দলগুলোকে নিজ থেকেই সংস্কারের উদ্যোগ নিতে হবে। তবে নাগরিকেরা সোচ্চার না হলে কোনো কিছুই সফল হবে না। এই রাষ্ট্রের মালিক হলো জনগণ।
সবাই চায় নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা ফিরে আসুক- এমন মন্তব্য করে বদিউল আলম মজুমদার বলেন, তারা আশা করছেন, ১৭ ডিসেম্বর আদালতের রায়ের মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা ফিরে আসবে। এটা যাতে আর কখনো বাতিল না হয়, সে জন্য সবাইকে ‘ওয়াচ ডগের ভূমিকা’ পালন করতে হবে।