রাতের মেঘমুক্ত আকাশে প্রায়ই আমাদের চোখে পড়ে উজ্জ্বল আলোর এক রেখা, যা মুহুর্তের মধ্যেই আবার অদৃশ্য হয়ে যায়। এ ঘটনাটিকে উল্কাপাত বা তারার খসে পড়া বলেন অনেকে। রাতের আকাশে উল্কা যখন পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে প্রবেশ করে তখন এমন দৃশ্য চোখে পড়ে।
পৃথিবীতে আছড়ে পড়া বেশিরভাগ উল্কাপিণ্ড আসলে কোথা থেকে আসে? সম্প্রতি এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজে বের করেছেন বিজ্ঞানীরা।গবেষণায় উঠে এসেছে, সব ধরনের উল্কাপিণ্ডের প্রায় ৭০ শতাংশই আসে কেবল তিনটি গ্রহাণু পরিবারের কাছ থেকে। গ্রহাণু বেল্টের মধ্যে সংঘর্ষের ফলে তৈরি হয়েছে এসব গ্রহাণু পরিবার, যার মধ্যে একটি পরিবার ৫৮ লাখ বছর আগে, দ্বিতীয়টি ৭৫ লাখ বছর আগে ও তৃতীয়টি তৈরি হয়েছে চার কোটি বছর আগে।বেশিরভাগ গ্রহাণু পরিবারের অবস্থান গ্রহাণু বেল্টে। এই গ্রহাণু বেল্টের অবস্থান মঙ্গল আর বৃহস্পতির কক্ষপথের মাঝখানে। এতে বেশ কিছু অংশে অসংখ্য গ্রহাণু গুচ্ছ আকারে আছে যেগুলোকে গবেষকরা বলছেন গ্রহাণু পরিবার।
এসব গ্রহাণু পরিবারের মধ্যে ‘মাসালিয়া’ নামের গ্রহাণু পরিবারটি নিজেই ৩৭ শতাংশ গ্রহাণু তৈরির জন্য দায়ী বলে প্রতিবেদনে লিখেছে ব্রিটিশ দৈনিক ইন্ডিপেনডেন্ট।এ তিনটি গ্রহাণু পরিবার এত এত গ্রহাণুর জন্ম দিচ্ছে তার কারণ, তুলনামূলকভাবে এখনও তরুণ বয়সে রয়েছে এরা। মহাকাশের আশপাশে ভাসমান অবস্থায় থাকা ও এদের দ্রুত ঘোরাঘুরির মানে হচ্ছে, এরা সহজেই গ্রহাণু বেল্ট থেকে বেরিয়ে গিয়ে পৃথিবীর দিকে ধেয়ে আসতে পারে।এ ছাড়াও উল্কাপিণ্ডের আরও উৎস খুঁজে পেয়েছেন গবেষকরা। সবমিলিয়ে ৯০ শতাংশেরও বেশি উল্কাপিণ্ডের উৎপত্তি কোথায়, তা এখন গবেষকরা জানেন।এর মানে হচ্ছে, কিলোমিটার আকারের বিভিন্ন গ্রহাণুর উৎস খুঁজে পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা। আর এসব গ্রহাণু হুমকির মুখে ফেলতে পারে পৃথিবীকে এবং সাম্প্রতিক মহাকাশ মিশনে এদের দিকেই বিশেষভাবে নজর দিয়েছেন তারা।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, এসব গ্রহাণু নিয়ে তারা আরও গবেষণা চালাবেন এবং মনোযোগ থাকবে বিভিন্ন তরুণ বয়সের গ্রহাণু পরিবারের উপরও। এতে করে তারা আশা করছেন, বাকি ১০ শতাংশের উল্কাপিণ্ডের উৎপত্তি কোথায় সে সম্পর্কে আরও তথ্য মিলবে।গ্রহাণু বেল্টের মধ্যে থাকা প্রধান উল্কাপিণ্ডের বিভিন্ন পরিবার নিয়ে জরিপ করার পর, এসব উল্কাপিণ্ড কোথা থেকে আসে তা খুঁজে বের করেছেন বিজ্ঞানীরা।বিভিন্ন গ্রহাণুর মধ্যে কীভাবে সংঘর্ষ হয় ও এগুলো কীভাবে ঘুরে বেড়ায় তা বোঝার জন্য কম্পিউটার সিমুলেশন ব্যবহার করেছেন তারা।এ গবেষণার ফলাফল প্রকাশ পেয়েছে বেশ কয়েকটি গবেষণাপত্রে, যার মধ্যে অন্যতম বিজ্ঞানভিত্তিক জার্নাল ‘অ্যাস্ট্রোনমি অ্যান্ড অ্যাস্ট্রোফিজিক্স’ ও ‘নেচার’।