নতুন বছরের শুরুতেই দেশের বাজারে ঊর্ধ্বমুখী চালের দর। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার চালের আড়তগুলোতে গত ১৫ দিনে সব ধরনের চালের দাম পাইকারিতে বেড়েছে অন্তত ১০০ টাকা।
মূলত দেশের পূর্বাঞ্চলের সবচেয়ে বড় মোকাম আশুগঞ্জে ধানের সংকট দেখা দেওয়ায় দাম বেড়েছে। যার প্রভাব পড়ছে চালের বাজারেও। যদিও, গত এক মাস ধরেই চালের বাজার ঊর্ধ্বমুখী বলে জানিয়েছেন চাল ব্যবসায়ীরা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার প্রায় আড়াইশ চালকল থেকে সিলেট ও চট্টগ্রামের সবকটি জেলায় এবং ঢাকা বিভাগের কয়েকটি জেলায় চাল সরবরাহ করা হয়। আর এসব চালকলগুলোতে ধানের যোগান দেয় আশুগঞ্জ মোকাম। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার চালকলগুলো থেকে প্রতিদিন অন্তত ১০ কোটি টাকার চাল বাজারজাত করা হয়।
আমন ধান পাকার সময় কয়েকদিনের ঝড়ে ব্যপাক ক্ষতি হয়। এর ফলে ধানের ফলন কম হয়েছে। আর এজন্য আশুগঞ্জ মোকামে ধানের সংকট তৈরি হয়েছে। ফলে ধানের দাম বাড়ায় স্বাভাবিকভাবে চালের দাম বেড়েছে। সংকট কাটা না পর্যন্ত চালের বাজার ঊর্ধ্বমুখীই থাকবে
মো. ওবায়দুল্লাহ, সাবেক সাধারণ সম্পাদক, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা চালকল মালিক সমিতি
ব্রাহ্মণবাড়িয়া ছাড়াও কিশোরগঞ্জ, ময়মনসিংহ, সিলেট, সুনামগঞ্জ ও হবিগঞ্জসহ হাওরাঞ্চলে উৎপাদিত ধান কৃষকের কাছ থেকে কিনে আশুগঞ্জ মোকামে নিয়ে আসেন বেপারীরা। বর্তমানে মোকামে বিআর-২৮ জাতের ধান প্রতিমণ ১৪৩০ টাকা, বিআর-২৯ ধান ১৩৮০ টাকা, বিআর-৩৯ ধান ১ হাজার ৩০০ থেকে ১ হাজার৩২০ টাকা, বিআর-৪৯ ধান প্রতিমণ ১ হাজার ৩২০ থেকে ১ হাজার ৩৫০ টাকা এবং মোটা ধান প্রতিমণ কেনাবেচা হচ্ছে ১ হাজার ২০০ টাকা মণ দরে।
আশুগঞ্জ মোকামের কয়েকজন বেপারী ও চালকল মালিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আমন মৌসুমের ধান কাটার আগে ঝড়ের কারণে অনেক স্থানে ধানের ক্ষতি হয়েছে। এর ফলে ফলন তুলনামূলক কম হয়েছে। এজন্য মোকামে চাহিদা মতো ধানের যোগান দেওয়া যাচ্ছে না। বর্তমানে প্রতিদিন ১০ থেকে ১৫ হাজার মণ ধান কেনাবেচা হচ্ছে। যদিও প্রতিদিন চাহিদা রয়েছে প্রায় ১ লাখ মণ ধানের।
গত এক মাসেরও বেশি সময় ধরে ধানের এ সংকট তৈরি হয়ে আছে। আর এ সংকটের কারণে সব ধানেই মণপ্রতি ৮০ থেকে ১০০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। সংকট যত প্রকট হবে, ধানের দামও তত বাড়বে বলে জানিয়েছেন বেপারীরা। আর ধানের সংকটের কারণে অনেক চালকল বন্ধ রাখতে হচ্ছে বলে জানিয়েছে চালকল মালিক সমিতি।
এ দিকে, ধানের দর বাড়ায় চালের বাজারও ঊর্ধ্বমুখী। গত ১৫ দিনের ব্যবধানে পাইকারিতে চালের দাম বেড়েছে অন্তত ১০০ টাকা। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আড়তগুলো থেকে প্রতি বস্তা (৫০ কেজি) বিআর-২৮ জাতের চাল ২ হাজার ৭০০ থেকে ২ হাজার ৭৫০ টাকা, বিআর-২৯ চাল ২ হাজার ৬০০ টাকা বস্তা, বিআর-৩৯ জাতের চাল প্রতি বস্তা ২ হাজার ৪০০ টাকা এবং বিআর-৪৯ চাল কেনাবেচা হচ্ছে ২ হাজার ৫০০ থেকে ২ হাজার ৫৫০ টাকা দরে। খুচরা বাজারে এসব চাল প্রতি বস্তা আরও অন্তত ১০০ টাকা বাড়তি দরে বিক্রি হচ্ছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা চালকল মালিক সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক মো. ওবায়দুল্লাহ বলেন, আমন ধান পাকার সময় কয়েকদিনের ঝড়ে ব্যপাক ক্ষতি হয়। এর ফলে ধানের ফলন কম হয়েছে। আর এজন্য আশুগঞ্জ মোকামে ধানের সংকট তৈরি হয়েছে। ফলে ধানের দাম বাড়ায় স্বাভাবিকভাবে চালের দাম বেড়েছে। সংকট কাটা না পর্যন্ত চালের বাজার ঊর্ধ্বমুখীই থাকবে।