করোনাভাইরাসের সংক্রমণের হার যেভাবে বাড়ছে, এভাবে চলতে থাকলে পুরো ঢাকা শহরকে হাসপাতাল বানানো হলেও মানুষের চিকিৎসা ব্যবস্থা করা সম্ভব হবে না বলে মন্তব্য করেছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক।
মঙ্গলবার (৬ এপ্রিল) বিকেলে রাজধানীর মহাখালীতে ‘ডিএনসিসি এক হাজার শয্যা ডেডিকেটেড করোনা হাসপাতাল’ পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে স্বাস্থ্যমন্ত্রী এ মন্তব্য করেন।
মহাখালী কাঁচাবাজারের স্থাপনায় ওই হাসপাতালটি চালু করা হচ্ছে। এতো দিন এক লাখ ৮০ হাজার ৫৬০ বর্গফুট আয়তনের ফাঁকা এ মার্কেটটি করোনার আইসোলেশন সেন্টার এবং বিদেশগামীদের করোনা পরীক্ষার ল্যাব হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছিল। এখন করোনা হাসপাতাল চালু হলে বিদেশগামীদের জন্য এক পাশে পৃথকভাবে জায়গা রাখা হবে।
জাহিদ মালেক বলেন, ‘যারা করোনা টিকা নিয়েছেন, তাদের অনেকেই স্বাস্থ্যবিধি মানেননি। আমরা খোঁজ নিয়ে জেনেছি, যারা কক্সবাজার-বান্দরবান গেছেন এবং বিয়ে-শাদীসহ বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেছেন তারা বেশি সংক্রমিত হয়েছেন। এখন তারা নিজের পরিবারের সদস্যদের সংক্রমিত করছেন। সর্বোপরি সমাজকে করোনা সংক্রমিত করেছেন।’
মন্ত্রী বলেন, ‘গত কয়েক মাস আগেও করোনা সংক্রমণের হার ৬০০ এর মধ্যে নেমে এসেছিল। মৃত্যুর হারও অনেক কমে গিয়েছিল। এখন মৃত্যু এবং সংক্রমণের হার ১০ থেকে ১২ গুণ বেড়েছে। এই সংক্রমণ থেকে বাঁচতে সরকার ঘোষিত লকডাউন সবাইকে মেনে চলতে হবে।’
স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, ‘এক বছর ধরে মহাখালী কাঁচাবাজারের ওই স্থাপনা ডিএনসিসি আইসোলেশন সেন্টার হিসেবে ব্যবহার করত। পাশাপাশি এই সেন্টারে বিদেশগামী মানুষের করোনা পরীক্ষা করা হতো। এখন এই স্থাপনাটিতে করোনা রোগীদের চিকিৎসায় হাসপাতাল স্থাপন করা হবে। এখানে ২০০টির বেশি আইসিইউ শয্যা স্থাপন করা হচ্ছে। একসঙ্গে এক হাজার ২০০’র বেশি মানুষ করোনা চিকিৎসা নিতে পারবেন।’
হাসপাতালটির পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ কে এম নাসির উদ্দিন। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘আশা করি, এপ্রিলের মাঝামাঝি ২৫০টি শয্যা এবং কিছু আইসিইউ শয্যা চালু করতে পারব। এ মাসের শেষ দিকে প্রায় পূর্ণাঙ্গভাবে হাসপাতালটি যাত্রা শুরু করবে।’
তিনি বলেন, ‘এ হাসপাতালে শুধু করোনা চিকিৎসা দেয়া হবে। এখানে কোনো অপারেশন করা হবে না। কারও অপারেশন দরকার হলে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে করানো হবে।’
স্বাস্থ্যমন্ত্রী পরিদর্শনের আগে জাগো নিউজের সঙ্গে কথা বলেন হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ কে এম নাসির উদ্দিন। তিনি বলেন, ‘ইতোমধ্যে এ হাসপাতাল বাস্তবায়নে কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এপ্রিলের মাঝামাঝি সেবা কার্যক্রম শুরু হবে। চলতি মাসের শেষ দিকে প্রায় পূর্ণাঙ্গভাবে হাসপাতালটি যাত্রা শুরু করবে। হাসপাতালটি পরিচালনা করবে বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনী। এ হাসপাতাল পরিচালনায় ৫০০ চিকিৎসক, ৭০০ সেবিকা, ৭০০ স্টাফ এবং ওষুধ, সরঞ্জাম দিয়ে সহায়তা করবে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।’
গত বছরের ৯ আগস্ট করোনা আইসোলেশন সেন্টার পরিদর্শনে গিয়ে মহাখালীর এই মার্কেটটিকে ৫০০ শয্যার আরবান (নগর) হাসপাতালে রূপান্তরের ঘোষণা দিয়েছিলেন ডিএনসিসি মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম।
মেয়র বলেছিলেন, ‘৭ দশমিক ১৭ একর জমির ওপর ডিএনসিসি মার্কেট মূলত পাইকারি কাঁচাবাজারের জন্য তৈরি করা হয়েছিল। কিন্তু বিভিন্ন কারণে এটি বাজারে বাস্তবায়ন করা যায়নি। এখন এটিকে কিভাবে আরবান হাসপাতালে রূপান্তর করা যায়, আমরা তার পরিকল্পনা করছি। এই ভবনকে আমরা যদি আরবান হাসপাতালে রূপান্তর করতে পারি, তাহলে নগরবাসীর জন্য অনেক সুবিধা হবে।’