চীনের হাজার হাজার মাইলজুড়ে সৌন্দর্য ছড়িয়ে দিচ্ছে লাখ লাখ পরিযায়ী পাখি। দিন দিন দেশটির পরিবেশ ও প্রকৃতি যতই নির্মল হচ্ছে, ততই বাড়ছে এসব পাখির আনাগোনা। আর এসব যাযাবর পাখির চালচলন বোঝার জন্য চীনে গড়ে উঠেছে কিছু স্মার্ট প্রযুক্তির পর্যবেক্ষণ ব্যবস্থা।
২০২২ সালে উত্তর চীনের ইনার মঙ্গোলিয়া স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের তুমুজি নেচার রিজার্ভ থেকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছিল একটি ধূসর সারস।পাখিটিকে সুস্থ করে তোলার পর ওটার শরীরে অতিক্ষুদ্র ক্যামেরা ও স্যাটেলাইট ট্র্যাকার জুড়ে দেন গবেষকরা। পাখির ওপর নজর রাখতে শুরু করে চীনের শক্তিশালী বেইতৌ স্যাটেলাইট সিস্টেম।
এ প্রযুক্তিতে হুনান প্রদেশের তংথিং হ্রদে পাখির অভিবাসন প্রক্রিয়াও পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে।তংথিং হ্রদটি চীনের একটি গুরুত্বপূর্ণ জলাভূমি এবং সুরক্ষিত এলাকা। শীতকালে পরিযায়ী পাখিদের অন্যতম আবাসস্থলও এটি।হুনান গ্লোবাল মেসেঞ্জার টেকনোলজি কোং লিমিটেডের প্রযুক্তিবিষয়ক পরিচালক ছেন চেনরং বলেন, ‘পাখির পুরো মাইগ্রেশনটি একবারে সম্পন্ন হয়েছিল। সময় লেগেছিল ছয় দিন।
এর মধ্যে দুটি ছোট বিরতি ছিল। পুরো উত্তর-দক্ষিণের যাত্রাপথ ছিল ৯০০ কিলোমিটারেরও বেশি। পাখিটি প্রতিদিন গড়ে প্রায় সাড়ে চার শ কিলোমিটার উড়েছিল। এর সর্বোচ্চ গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ৬৯ কিলোমিটার।’
স্যাটেলাইট ট্র্যাকার থেকে পাখির বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করা যায়।
যেমন—চীনা গবেষকরা জানতে পারেন, সেই সারসটি গত বছরের ২৩ নভেম্বর দুপুর ১টায় ২৩ কিলোমিটার গতিতে ৬৬০ মিটার উঁচুতে উড়েছিল।
বেইতৌ স্যাটেলাইট ডেটায় জানা যাচ্ছে, পরিযায়ী পাখিরা কোথায় কত দিন উড়েছে, কোথায় কতক্ষণ ঘুমিয়ে কাটিয়েছে এসবের বিস্তারিত।
অন্যদিকে হ্যবেই প্রদেশের ছাংচৌয়ের বিস্তৃর্ণ নানতাকাং জলাভূমিতেও চলছে অত্যাধুনিক প্রযুক্তির সাহায্যে পাখির চলাফেরা ও অন্যান্য তথ্য সংগ্রহের কাজ।সেই সঙ্গে বিশেষ পদ্ধতিতে রেকর্ড করা হচ্ছে জলচর পাখির ডাক। প্রযুক্তির মাধ্যমে সেই ডাক শুনেই চেনা যাচ্ছে পাখির প্রজাতি।
নানতাকাং ওয়েটল্যান্ড অ্যান্ড বার্ড নেচার রিজার্ভ ম্যানেজমেন্ট অফিসের কর্মী চাং চিনসিং বলেন, ‘পাখির ডাক সংগ্রহ করা হয় দুটি নৌকার মতো দেখতে ভয়েসপ্রিন্ট সংগ্রাহক যন্ত্র এবং একটি খুঁটির মতো ডিভাইসের মাধ্যমে। রেকর্ড করা ডাকগুলো আমাদের এআই ডেটাবেইসে সংরক্ষিত এক হাজার ৫৬৯টি প্রজাতির পাখির ডাকের সঙ্গে মিলিয়ে দেখা হয়। এতে প্রজাতিটা শনাক্ত করতে পারি। আমরা এক লাখ ৯০ হাজার পাখির শব্দের নমুনা সংগ্রহ করেছি এবং এর মাধ্যমে ১৯৭টি প্রজাতি চিহ্নিত করেছি।’
জলচর প্রাণীর এ অভয়ারণ্যে রয়েছে ১১টি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন ভিডিও পর্যবেক্ষণ ব্যবস্থা। পাখি শনাক্ত করার পাশাপাশি সংখ্যাও গুনতে পারে এটি।চাং চিনসিং আরো বলেন, ‘ক্যামেরায় পাখিগুলো ফ্রেমবন্দি হচ্ছে। তাদের প্রজাতি এবং সংখ্যাটা এখানে দেখা যায়। এআই ডেটাবেসে পাখির ছবি পাঠানোর পর পাখিদের শনাক্ত করা হয়। এটি একটি বিশাল ডেটাবেইস। এটি আমাদের মনিটরিং সিস্টেমের আওতা বাড়িয়ে দেয় এবং ম্যানুয়াল পর্যবেক্ষণের ত্রুটি কমাতে পারে। এই প্ল্যাটফরমের সাহায্যে আমরা পাখিদের বিরক্ত না করেই পর্যবেক্ষণ করতে পারি।’
এদিকে শরৎ ও শীতের শুকনা মৌসুমে পূর্ব চীনের চিয়াংসি প্রদেশের পোয়াং হ্রদে বিস্তীর্ণ জলাভূমি তৈরি হয়। তখন এখানে উড়ে আসে ঝাঁকে ঝাঁকে পরিযায়ী পাখি।এ জলাভূমিতে পাখি পর্যবেক্ষণে আছে একটি বুদ্ধিমান ব্যবস্থাপনা প্ল্যাটফরম।সিস্টেমটি প্রাথমিকভাবে পোয়াং হ্রদে ৭০টিরও বেশি প্রজাতির পাখি পর্যবেক্ষণ করে এবং পাখির সংখ্যা গোনে। এমনকি এখানকার জলাভূমির গভীরে পর্যবেক্ষণ করতে ব্যবহৃত হচ্ছে স্মার্ট ড্রোন।
এই ড্রোনগুলোর সঙ্গে যুক্ত আছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, যা তাৎক্ষণিকভাবে পাখি শনাক্তকরণ সিস্টেমের সঙ্গে যুক্ত হয়ে পরিযায়ী পাখির যাবতীয় তথ্য সংরক্ষণ করতে পারে।