‘স্যালুট, ইবাদত হোসেন!’
এ কথাটা এখন বলতেই পারেন আপনি। মাউন্ট মঙ্গানুইয়ের বে ওভালে ইবাদত হোসেন যা করলেন, তাতে তাঁকে শুধু একটা স্যালুট দেওয়া যথেষ্ট কি না—সে প্রশ্নটাও তুলতেই পারেন।
এ ম্যাচের আগে ইবাদত হোসেনের টেস্ট গড় ছিল ৮১.৫৪। ইতিহাসে কমপক্ষে ১০ উইকেট নিয়েছেন, এমন বোলারদের মধ্যে সবচেয়ে ‘বাজে’ গড় সেটি। আবু জায়েদ রাহির বদলে নির্বাচকেরা বেছে নিলেন সেই ইবাদতকেই। প্রথম ইনিংসে সে আস্থার প্রতিদান সেভাবে দিয়েছেন, সেটা বলা যাবে না। তবে নিউজিল্যান্ড ইনিংসের দ্বিতীয় ইনিংসে, টেস্টের চতুর্থ দিন বিকেল থেকে ইবাদত যা করা করলেন, সেটা রূপকথার গল্পর মতোই।
আগের দিন ৪ উইকেট নিয়ে বাংলাদেশকে জয়ের স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন, পঞ্চম দিন নিজের প্রথম ওভারে রস টেলরকে ফিরিয়ে বড় করলেন সেটাই। ইবাদত পেয়ে গেলেন ৫ উইকেট, ২০১৩ সালের পর প্রথম বাংলাদেশি পেসার হিসেবে। ডানহাতি এ পেসার এরপর নিলেন আরেকটি উইকেট, গড়লেন নিউজিল্যান্ডের মাটিতে বাংলাদেশ বোলারদের সেরা বোলিং ফিগার। বাংলাদেশ পেল স্বপ্নের জয়—যে কোনো সংস্করণেই নিউজিল্যান্ডের মাটিতে যেটি প্রথম।
প্রথম ইনিংসে ১ উইকেট নেওয়ার পর দ্বিতীয় ৪৬ রানে ৬ উইকেট নিয়ে ম্যাচসেরাও হয়েছেন ইবাদতই। এরপর বলেছেন, পরবর্তী প্রজন্মকে একটা বার্তা দেওয়া লক্ষ্য ছিল তাঁদের।
এর আগে নিউজিল্যান্ডের মাটিতে ৩২টি ম্যাচ খেলেও জয়শূন্য ছিল বাংলাদেশ। ৩৩তম ম্যাচে এসে খুলল সে গেরো। তবে ইবাদত বলছেন, তাঁরা জয়ের মানসিকতা নিয়েই নেমেছিলেন, ‘আল্লাহকে ধন্যবাদ। শেষ ১১ বছর আমাদের ভাইয়েরা, আমাদের দল খেলেছে এখানে, জিততে পারেনি। যখন নিউজিল্যান্ডে এলাম,, আমরা লক্ষ্য ঠিক করেছিলাম। সব সতীর্থ আমরা হাত তুলে বলেছি—আমরা পারব নিউজিল্যান্ডকে তাদের মাটিতে হারাতে। আরেকটা জিনিস—নিউজিল্যান্ড টেস্ট চ্যাম্পিয়ন। যদি আমরা এগিয়ে এসে নিউজিল্যান্ডকে হারাতে পারি তাদের মাটিতে, তাহলে পরবর্তী প্রজন্মও জানবে—তারাও নিউজিল্যান্ডকে হারাতে পারে। এটাই মূল লক্ষ্য ছিল।’
লাইন-লেংথের দুর্দান্ত ধারাবাহিকতার সঙ্গে রিভার্স সুইং—ইবাদত যেন খুলে বসেছিলেন ফাস্ট বোলিংয়ের অসাধারণ প্যাকেজ। দেশে কন্ডিশনের তেমন সহায়তা না পাওয়া পেসাররাই নিউজিল্যান্ডের মাটিতে অসাধারণ জয়ের কারিগর বনে গেলেন। পেস বোলিং কোচ ওটিস গিবসনের সঙ্গে কাজ করার ফল মিলছে, ইবাদত বলেছেন সেটাও, ‘সত্যি বলতে গত দুই বছর ধরেই ওটিস গিবসনের সঙ্গে কাজ করছি। সে আমাদের সহায়তা করছে। ব্যাপারটা হচ্ছে, আমাদের কন্ডিশন বেশিই ফ্ল্যাট। আমরা তেমন সহায়তা পাই না। আমরা এখনো শিখছি, শুধুই শিখছি। দেশের বাইরে কীভাবে বোলিং করা যায়, রিভার্স করানো যায়। গুডলেংথে করা যায় নিউজিল্যান্ড। আমি শুধু টপ অফ দ্য স্টাম্প হিট করার চেষ্টা করেছি। একটু ধৈর্য্য ধরেছি। সাফল্য এসেছে।’
এমনিতে উইকেট পেলে ‘স্যালুট’ দেন ইবাদত। বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর সদস্য হিসেবে তাঁর উদ্যাপনের একটা অংশ সেটা। ভলিবল খেলোয়াড় হিসেবে ঢুকে এখন টেস্ট ক্রিকেটার, ইবাদতের গল্পটা আগ্রহজাগানিয়াই। সেটা মনে করিয়ে দেওয়াতে ইবাদত হেসে বলেছেন, ‘আমি বাহিনীর সৈন্য, ফলে ‘স্যালুট’ দিতে জানি। আর এটা লম্বা গল্প—ভলিবল থেকে ক্রিকেটে (আসা)। আমি চেষ্টা করছি বিমানবাহিনী ও বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করতে।’
ইবাদত আপাতত সে চেষ্টায় সফল, সেটা তো বলাই যায়।
পিএসএন/এমঅাই