সাপ্তাহিক ছুটি ও ঈদ-উল-ফিতর উপলক্ষে ছুটি থাকায় টানা ৫ দিন বন্ধ থাকবে দেশের সবচেয়ে বড় স্থলবন্দর বেনাপোল ও ভোমরা। এ সময় আমদানি-রপ্তানিসহ বন্দর ও কাস্টমসের কার্যক্রম বন্ধ থাকবে। ফলে স্থবির হয়ে পড়বে বেনাপোল-পেট্রাপোল স্থলবন্দরের কার্যক্রম।
ভোমরা স্থলবন্দর : ঈদুল ফিতর উদ্যাপন উপলক্ষে ৬ দিন বন্ধ থাকছে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম সাতক্ষীরার ভোমরা স্থলবন্দর। গত বুধবার থেকে আগামী সোমবার (২৪ এপ্রিল) পর্যন্ত সময়ের মধ্যে সব ধরনের আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম বন্ধ রাখার ঘোষণা দিয়েছে ভোমরা আমদানি রপ্তানিকারক গ্র“প ও সিএন্ডএফ এ্যাসোসিয়েশন। তবে ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট দিয়ে যাত্রী পারাপার অব্যাহত থাকবে। বন্ধের এই ৬ দিন ভারতীয় পণ্যবাহী ট্রাক বাংলাদেশে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। একই সঙ্গে বাংলাদেশ থেকে ভারতে পণ্য পরিবহন বন্ধ থাকবে। ভোমরা সিএ্যান্ডএফ এজেন্ট এ্যাসোসিয়েশন তথ্যটি নিশ্চিত করেছেন।
এ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মাকসুদ আলম খান জানান, ভোমরা বন্দরের সঙ্গে সম্পৃক্ত ব্যবসায়ী নেতারা ও ভারতের ঘোজাডাঙ্গা এলাকার সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী নেতারা একত্রে বসে আলোচনা করে এই সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করা হয়েছে। গত বুধবার (১৯ এপ্রিল) থেকে সোমবার (২৪ এপ্রিল) পর্যন্ত সব ধরনের আমদানি ও রপ্তানি বন্ধ থাকবে। ২৫ এপ্রিল থেকে আবার সব কার্যক্রম আগের নিয়মে চলবে।
ভোমরা বন্দরের রাজস্ব কার্যালয়ের সহকারী কমিশনার মনিরুল ইসলাম জানান, ঈদুল ফিতর উপলক্ষে ছয় দিন আমদানি-রপ্তানিসহ সব কার্যক্রম বন্ধ থাকবে। তবে ২৫ এপ্রিল থেকে পুনরায় সব কার্যক্রম আগের ন্যায় চালু হবে। ভোমরা ইমিগ্রেশন চেকপোস্টের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা উপ-পুলিশ পরিদর্শক মাজরিহা হোসেন জানান, বাংলাদেশের ভোমরা ও ভারতের ঘোজাডাঙ্গা এলাকার ব্যবসায়ী সংশ্লিষ্টরা নিজেদের মধ্যে আলোচনা সাপেক্ষে পবিত্র শবে কদর এর ছুটি ও ঈদুল ফিতর উদ্যাপন উপলক্ষে ৬ দিন বন্দরের কার্যক্রম বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তবে ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট দিয়ে পাসপোর্ট যাত্রী পারাপার যথারীতি অব্যাহত থাকবে।
বেনাপোল : সাপ্তাহিক ছুটি ও ঈদ-উল-ফিতর উপলক্ষে ছুটি থাকায় টানা ৫ দিন বন্ধ থাকবে দেশের সবচেয়ে বড় স্থলবন্দর বেনাপোল। এ সময় আমদানি-রপ্তানিসহ বন্দর ও কাস্টমসের কার্যক্রম বন্ধ থাকবে। ফলে স্থবির হয়ে পড়বে বেনাপোল-পেট্রাপোল স্থলবন্দরের কার্যক্রম।
দেশের অর্থনীতিতে বেনাপোল বন্দরের ভূমিকা অপরিসীম। ভারত থেকে আমদানিকৃত পণ্যের সিংহভাগই আসে বেনাপোল বন্দর দিয়ে। মাত্র সাত দিনের এলসিতে পণ্য আনা যায় বেনাপোল বন্দর দিয়ে। বেনাপোল চেকপোস্ট থেকে কলকাতার দূরত্ব মাত্র ৮৪ কিলোমিটার। আড়াই ঘন্টায় চলে আসা যায় চেকপোস্টে। সে কারণে আমদানিকারকরা পণ্য আমদানির জন্য বেনাপোল বন্দর ব্যবহার করে থাকেন। লম্বা ছুটিতে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যে পড়বে বিরূপ প্রভাব। এমনিতেই বেনাপোল বন্দরে পণ্যজট লেগেই থাকে। লম্বা ছুটির কারনে অনেক শিল্প প্রতিষ্ঠানে কাঁচামালের সংকট দেখা দিতে পারে। সীমান্তের দু’পাশের ট্রাকজট আরও বাড়বে বলে মনে করছেন বন্দর সংশ্লিষ্টরা। তবে এ ছুটিতে বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে পাসপোর্টযাত্রী চলাচল স্বাভাবিক থাকবে।
বেনাপোলের সিএন্ডএফ স্টাফ এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক সাজেদুর রহমান বলেন, বুধবার থেকে রোববার (২৩ এপ্রিল) সরকারি ছুটি থাকায় আজ সকাল থেকে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে বেনাপোল-পেট্রাপোলের মধ্যে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম। তারপর সরকার ঈদের তিন দিন আগে পরে ট্রাক ও কাভার্ড ভ্যান চলাচল বন্ধ রাখায় বন্দর থেকে কোন পণ্য খালাসও হবে না। অনেক আমদানিকারক ঈদের ছুটিতে পরিবার পরিজন নিয়ে দেশের বাড়িতে যাবেন। তারা ঢাকা ফিরে না আসা পর্যন্ত কোন পণ্যও খালাস নিবে না। সব মিলিয়ে ৫ দিন ছুটির ফাঁদে বেনাপোল বন্দর। আগামী ২৪ এপ্রিল থেকে পুনরায় বন্দর ও কাস্টমসের কার্যক্রম সচল হবে বলে তিনি জানান।
দু’দেশের সিএন্ডএফ এজেন্টস ও বন্দর সূত্রে জানা গেছে, বুধবার পবিত্র শবে কদরের ছুটি, বৃহস্পতিবার নির্বাহী আদেশে সরকারি ছুটি, ২১ ও ২২ এপ্রিল সাপ্তাহিক ছুটি, ২৩ এপ্রিল ঈদুল ফিতরের ছুটিতে বন্ধ থাকবে দু’দেশের মধ্যে আমদানি-রপ্তানিসহ বন্দর ও কাস্টমসের কার্যক্রম। ২৪ এপ্রিল সোমবার সকাল থেকে আমদানি-রপ্তানি চালু হবে।
এদিকে টানা ছুটির কারনে সীমান্তের দু’পাশের বন্দরে ট্রাকজট আরও বাড়বে বলে আশঙ্কা করছেন বন্দর ব্যবহারকারী বিভিন্ন ব্যবসায়ী সংগঠন। বেনাপোলের মতোই পেট্রাপোল বন্দরেও ট্রাকজট রয়েছে। বন্দরে স্থান সংকুলান না হওয়ায় বন্দরের ট্রাক টার্মিনাল, পেট্রাপোল পার্কিং এ শত শত পণ্য বোঝাই ট্রাক অপেক্ষা করছে বাংলাদেশে প্রবেশের অপেক্ষায়।
বেনাপোল চেকপোস্ট পুলিশ ইমিগ্রেশনের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল কালাম আজাদ জানান, পবিত্র ঈদ-উল-ফিতর ও সাপ্তাহিক ছুটির কারনে বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে আমদানি-রপ্তানি বন্ধ থাকলেও স্বাভাবিক থাকবে পাসপোর্টধারী যাত্রীদের যাতায়াত। এ সময় একটু বেশি ভিড় হয়ে থাকে। সে কারণে ইমিগ্রেশনে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের স্ট্যান্ডবাই রাখা হয়েছে।
বেনাপোল বন্দরের উপ-পরিচালক আব্দুল জলিল জানান, আজ সকাল থেকে ৫ দিন ঈদের ছুটি। ছুটিতে বন্দরের কার্যক্রম ১৯ এপ্রিল থেকে ২৩ এপ্রিল পর্যন্ত বন্ধ থাকবে। ঈদের ছুটির মধ্যে বন্দরে যাতে কোন ধরনের নাশকতামূলক বা অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে তার জন্য নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। বন্দরের নিজস্ব নিরাপত্তা বাহিনী ও আনসার সদস্যরা দিনে রাতে বন্দর এলাকায় টহল দিবে। পাশাপাশি বেনাপোল পোর্ট থানা কর্তৃপক্ষকেও বিষয়টি বলা হয়েছে। আগামী ২৪ এপ্রিল থেকে বন্দরের কর্মতৎপরতা বাড়বে। বেনাপোল পোর্ট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কামাল হোসেন ভূঁইয়া বলেন, ঈদের ছুটির মধ্যে বন্দর এলাকায় যাতে কোনো অপ্রীতিকর ও দুর্ঘটনা না ঘটে সে জন্য বিশেষ নজরদারি নেওয়া হয়েছে।