শুধু আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নয়, দেশের পরিস্থিতি সার্বিকভাবে ভালো নয় মন্তব্য করেছেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় উপনেতা জি এম কাদের।
তিনি বলেন, ‘মানুষের জীবনের কোনো নিরাপত্তা নেই। মানুষের ইজ্জতের কোনো মূল্য নেই। ঘর থেকে বের হলে দুর্ঘটনা ঘটছে। বেকার সমস্যার কারণে মাদক কারবারি বাড়ছে। কোটি কোটি মানুষ মাদকের দিকে চলে যাচ্ছে। এটা আগামী প্রজন্মের জন্য ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরি করতে পারে।’
মঙ্গলবার (১১ জানুয়ারি) দুপুরে রংপুর সার্কিট হাউসে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এসব কথা বলেন।
জি এম কাদের বলেন, লাখ লাখ নয়, ‘কোটি কোটি মানুষ বেকার। বেকার সমস্যা একটা চরম পর্যায়ে চলে গেছে। আমি অবজার্ভ করে দেখেছি, মানুষ ফুটপাতের অর্ধেকটা দখল করে থাকে কেন? বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করা ছেলেরা ফুটপাতে বসে হকারি করছে। তারা স্কুটার চালায়, সিএনজিচালিত অটোরিকশা চালায়। পাঠাও বা উবার চালিয়ে তারা জীবিকা নির্বাহের চেষ্টা করে। বেকার সমস্যা এমন একটা পর্যায়ে গেছে যে, মানুষ তাদের ভিটেমাটি বিক্রি করে ছেলেদের বিদেশে পাঠাতে বাধ্য হচ্ছে।’
করোনা মোকাবেলায় সরকারের প্রস্তুতি বিষয়ে জি এম কাদের বলেন, ‘এবার ওমিক্রন যদি বড় ধরনের আঘাত হানে তাহলে আমরা সম্পূর্ণ প্রস্তুত, এ কথা বলা ঠিক হবে বলে মনে হয় না। আমাদের স্বাস্থ্যব্যবস্থা কতটা নাজুক তা গতবার করোনা পরিস্থিতিতে বোঝা গেছে। আমরা মনে করি, সরকারকে এখনই এ বিষয়ে দৃষ্টি দিতে হবে। উপজেলা পর্যায়ে আইইসিইউ সুবিধা, সব মানুষকে টিকার আওতায় আনা ও উন্নত বিশ্ব যেভাবে ব্যবস্থা নিচ্ছে সেভাবে ব্যবস্থা গ্রহণের কথা আমরা বারবার বলেছি। কিন্তু সরকার যেটা করেছে সেটা যথেষ্ট নয়।’
তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা প্রসঙ্গে জি এম কাদের বলেন, ‘অনেক সময়ে অনেকেই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি করছেন। আমরা সংলাপে রাষ্ট্রপতিকে নতুন আইনের মাধ্যমে গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিদের নিয়ে নির্বাচনকালীন এ ধরনের সরকার ব্যবস্থা করার ব্যাপারেও মতামত জানিয়েছি।’
তিনি অভিযোগ করে বলেন, বর্তমান নির্বাচন কমিশন নির্বাহী বিভাগকে কাজে লাগাতে পারছে না। অথচ সংবিধানের ১২৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী নির্বাহী বিভাগ নির্বাচনসংক্রান্ত বিষয়ে নির্বাচন কমিশনকে সহযোগিতা করবে। কিন্তু বাস্তবে চিত্র উল্টো। কমিশন এই ধারা ব্যবহার করতে পারছে না। নির্বাচন কমিশন নির্দেশ দিলেও নির্বাহী বিভাগ তা পালন করছে না।
নির্বাচন কমিশন গঠনে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সংলাপ যুক্তিসংগত হয়েছে দাবি করে তিনি আরো বলেন, ‘মহামান্য রাষ্ট্রপতি নির্বাচন কমিশন গঠন করবেন। তবে সংবিধানের ৪৮ অনুচ্ছেদের ৩ উপধারা মোতাবেক দুটি কাজ ছাড়া সমস্ত কাজের জন্য রাষ্ট্রপতিকে প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শ মোতাবেক করার বিধান রয়েছে। এই কারণে যদি নতুন কোনো আইন না হয়, তাহলে রাষ্ট্রপতিকে প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শক্রমে নির্বাচন কমিশন গঠন করতে হবে। আর এটা হলে কারো কাছেই সেই নির্বাচন কমিশন গ্রহণযোগ্যতা পাবে না। শুধু তা-ই নয়, নির্বাচনও গ্রহণযোগ্য হওয়ার সম্ভাবনা অনেক কম থাকবে।এ কারণেই আমরা নতুন আইন করে নির্বাচন কমিশন এবং নির্বাচনকালীন ব্যবস্থার ওপর গুরুত্বারোপ করেছি।’
এর আগে বিমানযোগে ঢাকা থেকে সৈয়দপুরে আসেন জি এম কাদের। পরে সড়কপথে রংপুর সার্কিট হাউসে পৌঁছলে রংপুর জেলা ও মহানগর জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীরা তাঁকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান। সেখান থেকে তিনি দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে দর্শনায় পল্লীনিবাসে গিয়ে প্রয়াত রাষ্ট্রপতি ও দলের প্রতিষ্ঠাতা হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের কবরে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন রংপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র ও মহানগর জাতীয় পার্টির সভাপতি মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা, জেলা সাধারণ সম্পাদক হাজি আব্দুর রাজ্জাক, মহানগর জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক এস এম ইয়াসীরসহ দলীয় নেতাকর্মীরা।
পিএসএন/এমঅাই