বিদায়ী বছরে রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান দুর্নীতি দমন কমিশনে অন্যান্য বছরের মতো অভিযোগের পাহাড় জমেছে। তবে নানা সীমাবদ্ধতার কারণে বিদয়ী বছরেও অভিযোগ নিষ্পত্তি করায় গতি আসেনি দুদকে। ২০২২ সালের ১১ মাসে ১৮ হাজার অভিযোগ থেকে নিষ্পত্তি হয়েছে মাত্র ৩১২টির।
তবে নানা ধরণের অভিযোগ জমা পড়লে নিজেদের তফসিলভুক্ত না হওয়ায় এসব নিয়ে কাজ করতে পারছে না দুদক। আবার আমলাতান্ত্রিক জটিলতার কারণেও ধীরগতি হয় বলে অভিযোগ আছে।
দুদক কমিশনার মো. জহুরুল হক এ প্রসঙ্গে বলেছেন, অভিযোগের একটি বড় অংশই দুদকের তফসিলভুক্ত অপরাধ নয়। তফসিলভুক্ত না হলে আমরা অভিযোগ অনুসন্ধানের জন্য নিতে পারি না।
দুদকের জনসংযোগ বিভাগ থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুসারে, ২০২২ সালের জানুয়ারি থেকে নভেম্বর পর্যন্ত কমিশনে ১৮ হাজার ১৯টি অভিযোগ জমা পড়েছে। এরমধ্যে যাচাই-বাছাই করে ৮৪০টি অভিযোগ অনুসন্ধানের জন্য গ্রহণ করেছে কমিশন। যা মোট অভিযোগের ৪ দশমিক ৬৬ শতাংশ। এখান থেকে নিষ্পত্তি হয়েছে ৩১২টি অভিযোগ।
অন্যদিকে, ১১ মাসে আসা অভিযোগের ১৪ হাজার ১১৯টি আমলেই নিতে পারেনি দুদক। যা মোট অভিযোগের ৭৮ শতাংশ।
এছাড়া অনুসন্ধানের প্রয়োজনীয়তা মনে না করায় ৩ হাজার ৬০টি অভিযোগের ক্ষেত্রে সতর্ক করে চিঠি দেওয়া হয়েছে। যা মোট অভিযোগের ১৭ শতাংশ।
দুদক বলছে, ২০২১ সালের তুলনায় এ বছর অভিযোগ বেড়েছে ৪২ শতাংশ। কমেছে মামলা দায়ের ও চার্জশিটের পরিমাণ।
দুদক সূত্রে জানা গেছে, ১১ মাসে ৩১২টি অভিযোগের পরিসমাপ্তি করেছে কমিশন। অবৈধ সম্পদের অর্জন করার প্রাথমিক প্রমাণের ভিত্তিতে ৮৯টি সম্পদের নোটিশ জারি করেছে সংস্থাটি।
দুদকের অনুসন্ধান শেষে অপরাধ প্রমাণ সাপেক্ষে ২৭৬টি মামলা দায়ের করে। আর এই সময়ে ১৬২টি মামলার চার্জশিট দিয়েছে কমিশন।
গত একবছর ধরেযেসব ইস্যুতে দুদক সরগরম ছিলো তার মধ্যে নিজ প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা উপসহকারী পরিচালক শরীফ উদ্দিনকে বছরের শুরুতে চাকরি থেকে অব্যাহতির ঘটনা সবচেয়ে বেশি তোলপাড় সৃষ্টি করে।
এরবাইরে পিকে হালদার, ‘বালুখেকো’ সেলিম চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে মামলা ও গ্রেফতার, ১১৬ আলেমকে ধর্ম ব্যবসায়ীকে বলে কথিত গণ কমিশনের দুদকে দেওয়া শ্বেতপত্রটি ছিল ‘টক অব দ্য কান্ট্রি’। বছরের শেষ দিকে বিএনপি নেতা মির্জা আব্বাস ও তার স্ত্রীর মামলায় চার্জশিট, স্ত্রীসহ আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীর বিরুদ্ধে দুদকের মামলা নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচনার তৈরি হয়েছে।
এছাড়া খুব প্রভাবশালী কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ খতিয়ে দেখা, মামলা করার তথ্য না মিললেও ঢাকা ওয়াসার আলোচিত এমডি তাকসিম এ খানের অফিসে দুদকের অভিযান, তিতাস গ্যাস ও বিমান বাংলাদেশের অফিসে কয়েক দফা অভিযান ছিল আলোচনার কেন্দ্রে। এছাড়া ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধেও অভিযোগ নিয়ে কিছুটা সরব ছিল দুদক।
এদিকে দুদক মনে করে, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই কমিশনের তফসিলভুক্ত না হওয়ায় অনেক মামলা তাদের ছেড়ে দিতে হচ্ছে। যেমন সবচেয়ে বেশি আলোচিত মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন ২০১২ এর ২(ঠ) সম্পৃক্ত ২৭টি অপরাধের মধ্যে কেবল একটি অপরাধ ‘ঘুষ ও দুর্নীতি’র অনুসন্ধানের এখতিয়ার রয়েছে দুদকের।
এজন্য মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন ২০১২-এর ২(ঠ) ও মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ বিধিমালা ২০১৯-এর তফসিলে বর্ণিত সাতটি অপরাধের এখতিয়ার কর্তৃপক্ষের সংশোধনীও চেয়েছে দুদক।
অভিযোগের তুলনায় অনুসন্ধান কম হওয়ার কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে দুদক কমিশনার মো. জহুরুল হক বলেন, ‘যে পরিমাণ অভিযোগ এসেছে তার বেশিরভাগই অনুসন্ধানের জন্য নিতে পারে না কমিশন। কারণ, এসব অভিযোগের একটি বড় অংশই দুদকের তফসিলভুক্ত অপরাধ নয়। যে কারণে দুদকের সেসব অভিযোগ গ্রহণের এখতিয়ার নেই। তফসিলভুক্ত না হলে আমরা অভিযোগ অনুসন্ধানের জন্য নিতে পারি না।’
এদিকে নতুন বছরের শুরুর দিনে দুদকের অনুসন্ধান, তদন্ত ও প্রসিকিউশনের কাজে গতি আনতে ডিজিটালাইজেশন শুরু হচ্ছে। এখন থেকে এ সংক্রান্ত কাজ গতানুগতিক কাজের পরিবর্তে ইনভেস্টিগেশন অ্যান্ড প্রসিকিউশন ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম (আইপিএমএস) নামে আধুনিক সফটওয়্যারের মাধ্যমে করবে দুদক।
এতে অভিযোগ থেকে শুরু করে প্রসিকিউশন কার্যক্রম পর্যন্ত সব কাজে আমলাতান্ত্রিক জটিলতা এড়ানো সম্ভব হবে। ফলে অনুসন্ধান ও তদন্ত কাজে গতি আসবে বলে মনে করছেন দুদক কর্মকর্তারা