পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বেনজীর আহমেদ গতকাল রোববার (২৩ জুন) দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) হাজির হননি। অবৈধ সম্পদের অভিযোগে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাকে দ্বিতীয়বারের মতো রোববার সকাল ১০টায় দুদকের প্রধান কার্যালয়ে হাজির হতে ডাকা হয়েছিল।
একইভাবে সোমবার (২৪ জুন) বেনজীরের স্ত্রী জিশান মির্জা এবং দুই মেয়ে ফারহিন রিশতা বিনতে বেনজীর, তাহসিন রাইসা বিনতে বেনজীর দুদকের জিজ্ঞাসাবাদে উপস্থিত হননি। সোমবার বেলা ২টা পর্যন্ত তারা সেগুনবাগিচায় দুদকের প্রধান কার্যালয়ে যাননি। এর আগে গত ৯ জুন দুদকের জিজ্ঞাসাবাদে উপস্থিত হওয়ার কথা ছিল তাদের। কিন্তু আইনজীবীর মাধ্যমে আরও ১৫ দিন সময় চান বেনজীর পত্নী ও তার দুই কন্যা।
এছাড়া দুদকের তদন্ত কমিটির সামনে হাজির হওয়ার ব্যাপারে তার অনুরোধে বেনজীরকে অতিরিক্ত ১৬ দিন সময় দেওয়া হয়েছিল। গত ২৮ মে বেনজীর আহমেদকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তলব করে দুদক। একই সঙ্গে বেনজীরের স্ত্রী ও সন্তানদের ৯ জুন তলব করা হয়েছে। দুদকে তলবে হাজির হওয়ার আগের দিন অর্থ্যাৎ ৫ জুন, আইনজীবীর মাধ্যমে দুদকের অনুসন্ধান দলের কাছে বেনজীর ১৬ দিনের সময় চান। এরপর ৯ জুন দুদকে উপস্থিত হতে ১৫ দিন সময় চেয়ে আইনজীবীর মাধ্যমে আবেদন করেন বেনজীর পরিবার। ওই আবেদনের প্রেক্ষিতে বেনজীর স্ত্রী ও তার দুই কন্যাকে ১৫ দিন অর্থাৎ ২৪ জুন পর্যন্ত সময় দেয় দুদক।
গত ৩১ মার্চ দৈনিক কালের কণ্ঠ পত্রিকায় ‘বেনজীরের ঘরে আলাদীনের চেরাগ’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদনে বলা হয়, পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক বেনজীর আহমেদ, তার স্ত্রী জিশান মির্জা এবং দুই মেয়ে ফারহিন রিশতা বিনতে বেনজীর ও তাহসিন রাইসা বিনতে বেনজীরের নামে বিপুল পরিমাণ সম্পদ করেছেন।
ওই প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ঢাকার অভিজাত এলাকাগুলোতে বেনজীর আহমেদের দামি ফ্ল্যাট, বাড়ি আর ঢাকার পাশে বিঘার পর বিঘা জমি রয়েছে। দুই মেয়ের নামে বেস্ট হোল্ডিংস ও পাঁচতারা হোটেল লা মেরিডিয়ানের রয়েছে দুই লাখ শেয়ার। পূর্বাচলে রয়েছে ৪০ কাঠার সুবিশাল জায়গাজুড়ে ডুপ্লেক্স বাড়ি, যার আনুমানিক মূল্য কমপক্ষে ৪৫ কোটি টাকা। একই এলাকায় আছে ২২ কোটি টাকা মূল্যের আরও ১০ বিঘা জমি। অথচ গত ৩৪ বছর ৭ মাসের দীর্ঘ চাকরি জীবনে বেনজীর আহমেদের বেতন-ভাতা বাবদ মোট আয় ১ কোটি ৮৪ লাখ ৮৯ হাজার ২০০ টাকার মতো হওয়ার কথা।
এ অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে গত ২২ এপ্রিল পুলিশের সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদের দুর্নীতির অনুসন্ধান চেয়ে হাইকোর্টে রিট দায়ের করা হয়।
এরপর গত ২৩ ও ২৬ মে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকা মেট্রোপলিটন সিনিয়র স্পেশাল জজ মোহাম্মদ আসসামছ জগলুল হোসেনের আদালত বেনজীর আহমেদ এবং তার স্ত্রী জিশান মির্জা, বড় মেয়ে ফারহিন রিশতা বিনতে বেনজীর ও ছোট মেয়ে তাহসিন রাইসা বিনতে বেনজীরের নামে বিভিন্ন সম্পত্তির দলিল, ঢাকায় ফ্ল্যাট ও কোম্পানির শেয়ার জব্দের নির্দেশ দেন।
এছাড়া তাদের বিও হিসাব (বেনিফিশিয়ারি ওনার্স অ্যাকাউন্ট) অবরুদ্ধ (ফ্রিজ) করতে সোমবার (২৭ মে) সেন্ট্রাল ডিপোজিটরি বাংলাদেশ লিমিটেডকে (সিডিবিএল) নির্দেশ দিয়েছে পুঁজিবাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটি অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।