ত্বকের একটি মারাত্মক সংক্রমণ হলো রিংওয়ার্ম। শুনে মনে হতে পারে, কোনো কৃমি বা পরজীবী দ্বারা এই সংক্রমণ হয়ে থাকে। প্রকৃতপক্ষে এর জন্য ছত্রাকই দায়ী। রিংওয়ার্ম ইনফেকশন আমাদের কাছে দাদ সংক্রমণ হিসেবে পরিচিত। দাদ সংক্রমণকে চিকিৎসা বিজ্ঞানের পরিভাষায় টিনিয়া করপোরিস বা ডার্মাটোফাইটোসিস বলা হয়। গোল চাকতির মতো ফুসকুড়ি দেখে এটা শনাক্ত করা যায়, যেখানে চুলকানি অনুভূত হয়।
দাদ সংক্রমণে প্রথমে ছোট লাল গোটা হয় এবং সামান্য চুলকাতে থাকে। পরে এটাতে বাদামী বর্ণের আঁইশ হয় এবং স্থানটি বৃত্তাকারে বড় হতে থাকে। এর কিনারা সামান্য উঁচু হয়। আক্রান্ত স্থান থেকে খুশকির মতো চামড়া ওঠে। পানি বা পুঁজে পূর্ণ দানা হতে পারে। আক্রান্ত স্থানে অত্যন্ত চুলকায়। মাথার দাদ সংক্রমণে সংশ্লিষ্ট স্থানের চুল পড়ে যায়। কোমর বা কুঁচকি আক্রান্ত হলে চামড়া সাদা ও পুরু হয়ে যায়। সংক্রমণের স্থান থেকে কষ ঝরতে পারে।
দাদের উপস্থিতি এতটাই স্বতন্ত্র যে সহজেই শনাক্ত করা যায়। সংক্রমণ মৃদু হলে ওটিসি ক্রিম ব্যবহারে সহজেই সেরে ওঠে। এরপরও দাদ থেকে গেলে অথবা আরো তীব্র হলে চর্মরোগ বিশেষজ্ঞের কাছে যেতে হবে। এখানে এই সংক্রমণ ছড়ানোর উপায় ও চিকিৎসা সম্পর্কে বলা হলো।
* দাদ সংক্রমণ যেভাবে ছড়ায়
যুক্তরাষ্ট্রের স্কুয়েইজার ডার্মাটোলজি গ্রুপের বোর্ড সার্টিফায়েড ডার্মাটোলজিস্ট জেসন মিলার বলেন, ‘দাদ সংক্রমণ সাধারণত ছত্রাক ও ত্বকের প্রত্যক্ষ সংস্পর্শের মাধ্যমে ছড়ায়। মিলারের মতে, এসব উপায়ে দাদ সংক্রমণ ছড়াতে পারে: সংক্রমিত ব্যক্তি, সংক্রমিত প্রাণী (সাধারণত কুকুর বা বিড়াল), দূষিত মাটি ও দূষিত বস্তু।’ নিউ ইয়র্কে অবস্থিত কর্নেল ইউনিভার্সিটির অন্তর্গত ওয়েইল কর্নেল মেডিক্যাল কলেজের ডার্মাটোলজি বিভাগের ক্লিনিক্যাল ইনসট্রাক্টর ও বোর্ড সার্টিফায়েড ডার্মাটোলজিস্ট হ্যাডলি কিং বলেন, ‘দূষিত বস্তুর মধ্যে ইয়োগা ম্যাটস ও অন্যান্য জিম ইকুইপমেন্ট থেকে সংক্রমণ ছড়ানোর ঝুঁকি বেশি, কারণ আক্রান্ত ব্যক্তি দীর্ঘসময় এসব বস্তুর সংস্পর্শে থাকে বলে ছত্রাক দ্বারা দূষিত হতে পারে।’
* যাদের দাদ সংক্রমণের ঝুঁকি বেশি
যে কেউ দাদে সংক্রমিত হতে পারেন, তবে এসব মানুষের ঝুঁকি বেশি: শরীরের রোগপ্রতিরোধ ব্যবস্থা দুর্বল হয়ে গেছে এমন লোক, যারা গরম পরিবেশে বসবাস করেন এবং যারা ত্বকের সাথে ত্বকের সংস্পর্শে আসে এমন খেলাধুলা করেন। যারা একে অপরের জিনিস ব্যবহার করেন তাদেরও দাদ সংক্রমণের বাড়তি ঝুঁকি রয়েছে। তাই অপরের তোয়ালে ও পোশাক ব্যবহারের অভ্যাস পরিহার করা উচিত। অপরের বিছানায়ও শোয়া উচিত নয়।
* দাদ সংক্রমণের চিকিৎসা
দাদের চিকিৎসা নির্ভর করছে সংক্রমণের তীব্রতার ওপর। উদাহরণস্বরূপ, হালকা সংক্রমণে ক্লোট্রিমাজোল বা টার্বিনাফিন ক্রিম প্রয়োগে ভালো সাড়া পাওয়া যায়। এসব হলো ওটিসি ওষুধ যা কিনতে প্রেসক্রিপশন লাগে না। এসব ওষুধে ফুসকুড়ি প্রশমিত না হলে ত্বক বিশেষজ্ঞকে দেখাতে হবে। তিনি আরো শক্তিশালী ক্রিম দিতে পারেন। মারাত্মক সংক্রমণের ক্ষেত্রে, অর্থাৎ সংক্রমণ ত্বকের গভীরে পৌঁছলে ও লোমগ্রন্থিকে আক্রান্ত করলে তিনি মুখে সেবনযোগ্য অ্যান্টিফাঙ্গাল ওষুধ দিতে পারেন।