এ বিশ্বচরাচর সৃষ্টি হয়েছে যার জন্য তিনি আর কেউ নন মুহাম্মদ তাঁর নাম। আল কোরআনে আল্লাহ বলেছেন, ‘ওয়ামা আরসালানাকা ইল্লাহ রাহমাতাল্লিল আলামিন। হে নবী! আমি তোমাকে সৃষ্টিকুলের জন্য রহমত করে পাঠিয়েছি।’ নবী (সা.) দুনিয়ায় যেমন আমাদের জন্য রহমত, তেমনি আখিরাতেও তিনি আমাদের জন্য রহমত। নবী (সা.)-এর রহমতের চাদরে আমরা জায়গা করে নিতে পারব যদি আমরা বেশি বেশি তাঁর ওপর দরুদ ও সালাম পেশ করতে পারি।
সুরা আহজাবের ৫৬ নম্বর আয়াতে আল্লাহ বলেন, ‘ওহে তোমরা যারা ইমান এনেছ, জেনে রাখ আল্লাহ এবং তাঁর ফেরেশতারা নবীর ওপর দরুদ পড়েন। তোমরাও নবীর ওপর দরুদ-সালাম পড়।’
হাদিসে কুদসিতে আল্লাহ বলেন, ‘হে নবী! আপনার কোনো উম্মত যদি আপনার ওপর একবার দরুদ পড়ে তাহলে আমি তার ওপর ১০টি রহমত নাজিল করি। তার মর্যাদা ১০ গুণ বাড়িয়ে দিই। তার ১০টি গুনাহ ক্ষমা করে দিই।’
সাহাবি হজরত আবদুর রহমান বিন আওফ (রা.) বলেন, ‘একদিন আমি রসুল (সা.)-কে একটি বাগানে ঢুকতে দেখি। রসুল (সা.) বাগানের ভিতরে ঢুকে গেলেন। তারপর মাথা ঝুঁকিয়ে সিজদাহ করলেন। সে কি দীর্ঘ সিজদা! সময় বাড়তে থাকে কিন্তু রসুলের সিজদা শেষ হয় না। একসময় আমার মনে একটি ভয় দানা বাঁধে। আমার মনে হলো সিজদার ভিতরেই হয়তো তিনি মারা গেছেন। আমি ভীষণ ভয় পেয়ে যাই। দীর্ঘ সময় পর হুজুর মাথা তুললেন।
তিনি আমার কাছে এসে বললেন, তোমাকে ভয়ার্ত দেখাচ্ছে কেন আবদুর রহমান? আমি বললাম, হুজুর! আপনার দীর্ঘ সিজদা দেখে আমি ভেবেছিলাম হয়তো সিজদার মাঝেই আপনি মারা গেছেন। রসুল (সা.) মুখে তখনো হাসি লেগে ছিল। তিনি বললেন, তেমন কিছুই নয়। এই মাত্র আমার প্রভু আমাকে যা বলেছেন তা শুনে তুমি অবশ্যই আনন্দিত হবে।
আমার প্রভু বলেছেন, কেউ যদি আমার ওপর দরুদ পাঠ করে তাহলে আল্লাহর পক্ষ থেকে তাকে রহমত-বরকত ও শান্তির ওয়াদা করা হয়েছে। এজন্যই আমি দীর্ঘ সিজদা করে আমার পরম প্রেমময় প্রভুর কৃতজ্ঞতা জানিয়েছি।’ মুসনাদে আহমাদ ও মুসতাদরাক আল হাকেম।
একটি হাদিসে এসেছে, রসুল (সা.) বলেছেন, ‘হে আমার উম্মত! তোমরা জুমার দিন বেশি বেশি দরুদ পড়। একটু আগে জিবরাইল এসে আমাকে জানিয়েছে হে নবী! আপনার প্রভু বলেছেন, কেউ যদি আপনার ওপর একবার দরুদ-সালাম পেশ করে তাহলে তিনি ওই উম্মতকে ১০টি রহমত ও বরকত দান করবেন এবং ফেরেশতারা তার জন্য ১০বার মাগফিরাতের দোয়া করবে।’ তাবরানি।
অন্য একটি হাদিসে বলা হয়েছে, রসুল (সা.) বলেছেন, ‘উম্মত যতক্ষণ পর্যন্ত নবীর ওপর দরুদ পড়তে থাকে ততক্ষণ পর্যন্ত ফেরেশতারা তার জন্য ক্ষমার দোয়া করতে থাকে। এখন তোমাদের ইচ্ছা চাইলে বেশি বেশি দরুদ পড়ে ফেরেশতাদের দোয়া নিতে পার। আবার কম দরুদ পড়ে ফেরেশতাদের দোয়ার কম ভাগীদার হতে পার।’ মিশকাত।
নবী (সা.)-এর ওপর বেশি বেশি দরুদ -সালাম পড়ার ফলে কিয়ামতের দিন নবীর শাফায়াত নসিব হবে বলে হাদিসে বলা হয়েছে। রসুল (সা.) বলেছেন, ‘কিয়ামতের দিন ওই উম্মত আমার সবচেয়ে কাছে থাকবে যে আমার ওপর বেশি দরুদ পড়েছে।’ তিরমিজি।
আরেকটি হাদিসে রসুল (সা.) বলেছেন, ‘যে উম্মত বেশি বেশি দরুদ-সালাম পড়বে কিয়ামতের দিন তার জন্য শাফায়াত করা আমার কর্তব্য হয়ে দাঁড়ায়।’ তারগিব ওয়াত তাহরিব। রসুল (সা.) বলেছেন, ‘জান্নাতে সেই উম্মতই আমার সবচেয়ে কাছে থাকবে যে আমার ওপর বেশি বেশি দরুদ-সালাম পড়েছে।’ তিরমিজি।
লেখক : খতিব, হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সেন্টার জামে মসজিদ, ঢাকা।