অরফিশ নামের মাছ দেখতে অনেকটা সাপের মতো। এর দৈর্ঘ্যে ৩০ ফুট পর্যন্ত হতে পারে। বিশাল আকৃতির জন্য একে ‘দানব মাছ’ বলে থাকে। আবার ‘ডুমসডে ফিশ’ও বলা হয়। এ মাছের বসবাস গভীর সমুদ্রে। তাই সহজে জীবন্ত অবস্থায় এর দেখা পাওয়া যায় না। কথিত আছে, এই মাছ যেখানে দেখা যায়, সেখানে প্রাকৃতিক দুর্যোগ হয়। যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ক্যালিফোর্নিয়ার উপকূলে তিন মাসে তিনবার দেখা মিলেছে অরফিশের। সর্বশেষ গত ৬ নভেম্বর এনসিনিটাসের গ্র্যান্ডভিউ বিচে মৃত অবস্থায় একটি অরফিশ ভেসে আসে। এ নিয়ে শুরু হয়েছে নানা জল্পনা। খবর সিএনএন।
ন্যাশনাল ওশেনিক অ্যান্ড অ্যাটমোসফেরিক অ্যাডমিনিস্ট্রেশন ফিশারিজ সার্ভিসের মাধ্যমে মাছটি উদ্ধার করে সাউথওয়েস্ট ফিশারিজ সায়েন্স সেন্টারে পাঠানো হয়েছে। গত এক শতাব্দীতে ২২টি অর্ফিশ ক্যালিফোর্নিয়ায় পাওয়া গেছে; যা এই মাছের অতি বিরলতা এবং রহস্যের বার্তা দেয়।
সান ডিয়েগোতে ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের স্ক্রিপস ইনস্টিটিউশন অব ওশানোগ্রাফির অ্যালিসন লাফেরিয়ার ৬ নভেম্বর গ্র্যান্ডভিউ বিচের তীরে ৯ ফুটের অরফিশ খুঁজে পান। স্ক্রিপসের ফেসবুক পোস্ট অনুসারে, মৃত মাছটি জাতীয় সমুদ্র ও বায়ুমণ্ডলীয় প্রশাসন মৎস্য পরিষেবা উদ্ধার করে। পরে দক্ষিণ-পশ্চিম মৎস্য বিজ্ঞান কেন্দ্রে স্থানান্তর করা হয়।
স্ক্রিপসের মেরিন ভারটিব্রেট কালেকশন ম্যানেজার বেন ফ্রেবল বলেন, আমরা নমুনা সংগ্রহ করেছি এবং ভবিষ্যতে গবেষণার জন্য মাছটিকে ফ্রিজে রেখেছি।
জাপানি পুরাণে বলা হয়, গভীর সাগরের অরফিশের উপকূলে আসা প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের পূর্বাভাস দেয়। বিশেষ করে ভূমিকম্প ও সুনামির বার্তা দেয়। ২০১০ সালে জাপান উপকূলে অন্তত এক ডজন অরফিশ দেখা গিয়েছিল। এর পর ২০১১ সালের মার্চে জাপানে সবচেয়ে বড় ভূমিকম্প হয়।
কিছু তত্ত্ব আছে, ভূমিকম্পের আগে টেকটনিক গতির কারণে অরফিশ মরে যেতে পারে। যার ফলে সেগুলো উপকূলে ভেসে আসে। তবে জিওসায়েন্স ২০১৯ সালের একটি গবেষণায় দেখেছে, জাপানে অরফিশ দেখা যাওয়ার এবং ভূমিকম্পের মধ্যে কোনো সম্পর্ক নেই।
বেন ফ্রেবল বলেন, পূর্ববর্তী অরফিশের মতো এই মাছের নমুনা আমাদের অরফিশের জীববিজ্ঞান, শারীরবৃত্তি, জেনোমিকস এবং জীবন ইতিহাস সম্পর্কে অনেক কিছু জানাতে সাহায্য করবে।
এ বছর ক্যালিফোর্নিয়া উপকূলে তিনটি অর্ফিশের উপস্থিতি কিছুটা অস্বাভাবিক মনে হচ্ছে। প্রথমটি আগস্ট মাসে লা জোল্লা কোভে এবং দ্বিতীয়টি সেপ্টেম্বর মাসে হান্টিংটন বিচে পাওয়া যায়। তবে বিশেষজ্ঞরা নিশ্চিত নন, কেন এত অরফিশ উপকূলে ভেসে আসছে। তবে তাদের ধারণা, এটি হয়তো সামুদ্রিক পরিবেশের পরিবর্তন বা অন্য কোনো অজানা কারণে ঘটছে।
স্ক্রিপসের মেরিন জীববিজ্ঞানী দাহিয়ান আর্কিলা বলেন, এই মাছের নমুনা আমাদের গভীর সমুদ্রে বাস করা প্রাণীর অভিযোজন এবং টিকে থাকার কৌশল বুঝতে সাহায্য করবে।
অরফিশের রহস্যময় উপস্থিতি বিজ্ঞানীদের জন্য এক অমূল্য দান, যা সাগরের গভীরে ছড়িয়ে থাকা অদেখা প্রজাতির আরও কিছু অজানা তথ্য উন্মোচন করতে সহায়ক হবে।