চীনের সঙ্গে দীর্ঘদিনের বিরোধ ভুলে এক ঐতিহাসিক বৈঠকে মিলিত হয়েছে দুই প্রতিবেশী দেশ দক্ষিণ কোরিয়া ও জাপান।
ক্রমবর্ধমান বৈশ্বিক অনিশ্চয়তার মধ্যে পূর্ব এশিয়ার নিরাপত্তা এবং অর্থনৈতিক বিষয়গুলিতে অভিন্ন ভিত্তি স্থাপনের লক্ষ্যে জাপান, চীন এবং দক্ষিণ কোরিয়ার শীর্ষ কূটনীতিকরা শনিবার টোকিওতে এই বৈঠক করেন। খবর রয়টার্সের।
বৈঠকে জাপানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী তাকেশি ইওয়ায়া বলেন, ক্রমবর্ধমান অনিশ্চয়তার আন্তর্জাতিক পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে, আমি বিশ্বাস করি আমরা সত্যিই ইতিহাসের এক সন্ধিক্ষণে আছি। টোকিওতে অনুষ্ঠিত ওই বৈঠকে চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই এবং দক্ষিণ কোরিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী চো তাই-ইউলও একই মত প্রকাশ করেন।
বৈঠকের পর জাপানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এক যৌথ ঘোষণায় বলেছেন, তিন শীর্ষ কূটনীতিক জাপানে একটি ত্রিপক্ষীয় শীর্ষ সম্মেলনের প্রস্তুতি ত্বরান্বিত করতে সম্মত হয়েছেন, যেখানে টোকিও, বেইজিং এবং সিউল কীভাবে ক্রমহ্রাসমান জন্মহার এবং বয়স্ক জনসংখ্যা মোকাবেলা করতে পারে সে বিষয়ে আলোচনাও অন্তর্ভুক্ত থাকবে।
২০২৩ সালের পর দেশগুলির পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের প্রথম বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হচ্ছে যখন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প কয়েক দশকের পুরনো জোট ভেঙে দিচ্ছেন, যা চীনের জন্য ঐতিহ্যগতভাবে ওয়াশিংটনের সঙ্গে সংযুক্ত দেশগুলির সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তোলার দরজা খুলে দিচ্ছে।
বৈঠকে চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই বলেন, আমাদের তিনটি দেশের সম্মিলিত জনসংখ্যা প্রায় ১.৬ বিলিয়ন এবং অর্থনৈতিক উৎপাদন ২৪ ট্রিলিয়ন ডলারেরও বেশি। আমাদের বিশাল বাজার এবং বিপুল সম্ভাবনার সঙ্গে আমরা উল্লেখযোগ্য প্রভাব বিস্তার করতে পারি।
তিনি আরো বলেন, চীন তার প্রতিবেশীদের সঙ্গে মুক্তবাণিজ্য আলোচনা পুনরায় শুরু করতে এবং ১৫-জাতির আঞ্চলিক ব্যাপক অর্থনৈতিক অংশীদারিত্বের সদস্যপদ সম্প্রসারণ করতে চায়।
তবে, গভীর বিভাজন রয়ে গেছে। উত্তর কোরিয়ার প্রতি সমর্থন, তাইওয়ানের চারপাশে সামরিক তৎপরতা বৃদ্ধি এবং ইউক্রেনের সঙ্গে যুদ্ধে রাশিয়ার সমর্থনসহ বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে টোকিও এবং সিউলের সঙ্গে বেইজিংয়ের মতবিরোধ রয়েছে।
বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ চীনকে মার্কিন মিত্র জাপান এবং দক্ষিণ কোরিয়া কিভাবে এত সহজভাবে নেবে, যেখানে দেশ দুটিতে এখনো হাজার হাজার মার্কিন সেনা রয়েছে, আঞ্চলিক নিরাপত্তার জন্য তারাক্রমবর্ধমান হুমকি।
দক্ষিণ কোরিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী চো বলেন, আমি উত্তর কোরিয়াকে তার পারমাণবিক অস্ত্র পরিত্যাগ করতে রাজি করাতে সাহায্য করার জন্য চীনকে অনুরোধ করেছি।
আমি আরো দাবি করেছি, যাতে রাশিয়া এবং উত্তর কোরিয়ার মধ্যে অবৈধ সামরিক সহযোগিতা অবিলম্বে বন্ধ করা হয় এবং ইউক্রেনের যুদ্ধের সমাপ্তি ঘটানোর সময় উত্তর কোরিয়াকে তার অন্যায় কাজের জন্য পুরস্কৃত করা না হয়।