টাইপ টু ডায়াবেটিস রোগ দেখা দেওয়ার এক দশক আগেই রোগের লক্ষণ শনাক্ত করতে এআই প্রযুক্তি ব্যবহার করছে লন্ডনের এনএইচএস হাসপাতালের দুটি ট্রাস্ট।
‘ইম্পেরিয়াল কলেজ’ এবং ‘চেলসি অ্যান্ড ওয়েস্টমিনস্টার হসপিটাল’ এনএইচএস ফাউন্ডেশন ট্রাস্ট ‘এয়ার ডিএম’ নামের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবস্থাটির প্রশিক্ষণ শুরু করেছে। এটি রোগীদের ইসিজির মাধ্যমে হার্টের সূক্ষ্ম লক্ষণগুলো পরীক্ষা করবে যা ডাক্তারদের পক্ষে শনাক্ত করা কিছুটা কঠিন।
এটি আশানুরূপ ফল দেবে কিনা সেটি যাচাই করতে ২০২৫ সালে মডেলটির ক্লিনিকাল ট্রায়ালের পরিকল্পনা রয়েছে বলে প্রতিবেদনে লিখেছে বিবিসি। প্রাথমিক পরীক্ষায় দেখা গেছে এয়ার ডিএম অন্তত ৭০ শতাংশ সময়ই ঝুঁকি চিহ্নিত করতে পারছে।
রোগীর অন্যান্য ঝুঁকির কারণ যেমন বয়স, উচ্চ রক্তচাপ আছে কিনা, ওজন বেশি কিনা সে সম্পর্কে এআই মডেলকে বাড়তি তথ্য দিলে তা ভবিষ্যদ্বাণীর ক্ষমতা উন্নত করার সম্ভাবনা আছে বলে জানিয়েছেন প্রকল্পের প্রধান গবেষণা ড. ফু সিওং এনজি।
“কেবল ইসিজি ডেটার মাধ্যমেই এটি বেশ ভালো কাজ করছে। পাশাপাশি, এসব তথ্য যোগ করলে এটি আরও ভালো কাজ করে।” – বিবিসিকে বলেছেন ড. এনজি।
তিনি আরও বলেন, ইজিসি’র যেসব পরিবর্তন এ ব্যবস্থা শনাক্ত করতে পারে তা অত্যন্ত সূক্ষ্ম, যা এমনকি অনেক দক্ষ ডাক্তারের জন্যও খালি চোখে শনাক্ত ও ব্যাখ্যা করা কঠিন কাজ।
“এটি কেবল ইসিজির নির্দিষ্ট অংশের ব্যাখ্যা দেওয়ার মতো সহজ কিছু নয়। এটি সূক্ষ্ম সব জিনিসকে একসঙ্গে দেখছে।”
পরীক্ষার অংশ হিসেবে এআই সিস্টেমটি দুটি হাসপাতালের এক হাজার রোগীর ওপর ইসিজি স্ক্যান তৈরি করে দেখবে রোগ শনাক্ত এবং সঠিক ভবিষ্যদ্বাণী করতে পারছে কিনা।
প্রকল্পটি এখনই নিয়মিতভাবে চালু হচ্ছে না। যদিও বিশেষজ্ঞরা আশা প্রকাশ করেছেন বিষয়টি যেন এনএইচএস-এ আরও বিস্তৃতভাবে চালু হয়। আর এতে পাঁচ বছর বা তার বেশি সময় লাগতে পারে, বলেছেন ড. এনজি।
এ কাজের অর্থায়ন করা সংস্থা ব্রিটিশ হার্ট ফাউন্ডেশন বলছে, ডায়াবেটিসের ঝুঁকিতে থাকা ব্যক্তিদের শনাক্ত করে জীবন বাঁচানো যাবে।
অনিয়ন্ত্রিত টাইপ টু ডায়াবেটিস থাকলে হার্ট অ্যাটাক ও স্ট্রোক হতে পারে। সঠিক ওজন বজায় রাখা, স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া ও ব্যায়াম এসব জটিলতা থেকে রক্ষা করতে সাহায্য করতে পারে।
“বিশ্বব্যাপী টাইপ টু ডায়াবেটিস একটি ক্রমবর্ধমান স্বাস্থ্য চ্যালেঞ্জ যা হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায়। তবে, সঠিক সাহায্যের মাধ্যমে মানুষের পক্ষে এর ঝুঁকি কমানো সম্ভব। ক্লিনিকাল পরীক্ষায় কীভাবে প্রযুক্তিটি অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে আমরা তা দেখার অপেক্ষায় রয়েছি।” – বলেছেন ব্রিটিশ হার্ট ফাউন্ডেশনের প্রধান বৈজ্ঞানিক ও চিকিৎসা কর্মকর্তা অধ্যাপক ব্রায়ান উইলিয়ামস।
“টাইপ টু ডায়াবেটিস প্রায় সময়ই নির্ণয় করা যায় না, কখনও কখনও বহু বছর এটি অনাবিষ্কৃত থাকে।” – বলেছেন ডায়াবেটিস ইউকের ড. ফায়ে রিলে।
“এআই-চালিত স্ক্রিনিং পদ্ধতি টাইপ টু ডায়াবেটিস হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে এমন লোকদের শনাক্ত করার নতুন উপায় নিয়ে এসেছে। এটি তাদের সঠিক সহায়তা নিয়ে টাইপ টু ডায়াবেটিসের গুরুতর সব জটিলতা যেমন হৃদ্যন্ত্রের সমস্যা ও দৃষ্টিশক্তি কমার বিষয়গুলো প্রতিরোধ করতে দেবে।”