সম্প্রতি ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) ঘোষণা দিয়েছে রাশিয়া থেকে অপরিশোধিত জ্বালানি তেল আমদানি কমিয়ে আনা হবে। হাঙ্গেরিকে বাদ দিয়েই ২৭ দেশের এই ইউনিয়ন সিদ্ধান্ত নেয়, অতিসত্বর রাশিয়া থেকে দুই-তৃতীয়াংশ তেল আমদানির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করবে এই জোট। এছাড়া চলতি বছরের শেষ দিকে প্রায় ৯০ শতাংশ রুশ তেল আমদানি কমিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় ইইউ। এতে ইউরোপে রুশ জ্বালানি রফতানির পথ অনেকটাই সংকুচিত হয়ে পড়ে। ফলে ওপেক প্লাসের দেশ রাশিয়াকে জ্বালানি তেল বিক্রির জন্য নতুন উৎস খুঁজতে হচ্ছে।
আর এই পরিস্থিতিতে স্পট মার্কেটে রাশিয়ার অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের নতুন বৃহৎ গন্তব্য হতে পারে এশিয়ার দেশগুলো। এ সময় দেশটির সঙ্গে করা কয়েকটি দীর্ঘমেয়াদি চুক্তিও সই করতে পারে এশিয়া অঞ্চলের বিভিন্ন দেশ।
এসঅ্যান্ডপি গ্লোবাল কমোডিটি ইনসাইটের প্লাটস অ্যানালিটিকসের তেল বাজারবিষয়ক উপদেষ্টা লিম জিত ইয়াং বলেন, এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র রুশ জ্বালানি তেল আমদানি নিষিদ্ধ করেছে। সম্প্রতি ইউরোপীয় ইউনয়নও একই পদক্ষেপ নেওয়ার পথে। এতে দেশটির কাছে নিজেদের অপরিশোধিত জ্বালানি তেল বিক্রির জন্য এশিয়ার ক্রেতারাই বাকি।
প্লাটস অ্যানালিটিকসের তথ্যানুসারে, চলতি বছর আন্তঃমহাদেশীয় অপরিশোধিত তেল বাণিজ্যের ৪০ শতাংশ এশিয়া অঞ্চলের দখলে থাকবে। একই সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের দখলে থাকবে ৩০ শতাংশ ও ইউরোপীয় অঞ্চলে ১৮ শতাংশ।
এরই মধ্যে অপরিশোধিত তেল বাণিজ্যের জন্য অনেকাংশেই এশিয়ার ওপর নির্ভর শুরু করেছে রাশিয়া। কোভিড-১৯-এর কারণে আরোপিত সবশেষ লকডাউনের আগে রুশ জ্বালানি তেলের সবচেয়ে বড় ক্রেতা ছিল চীন। এপ্রিলে রাশিয়া থেকে প্রতিদিন ৮ লাখ ৩৬ হাজার ব্যারেল তেল আমদানি করেছে ভারত। মার্চে ভারতের রুশ তেল আমদানির পরিমাণ ছিল প্রতিদিন ২ লাখ ৭৪ হাজার ব্যারেল। ফেব্রুয়ারিতে দেশটি থেকে ন্যূনতম অপরিশোধিত তেলও আমদানি করেনি ভারতীয় ক্রেতারা। কমোডিটি ইন্টিলিজেন্স ফার্ম কেপলারের দেওয়া তথ্যে এমনটা দেখা যায়।
সিনার্জি কনসালটিংয়ের তেল, গ্যাস ও রাসায়নিক বিভাগের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রজত কাপুর বলেন, রুশ অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের জন্য ভারতের চাহিদা নিরবচ্ছিন্নভাবে বাড়ছে। ভারতীয় আমদানিকারকরা সস্তা মূল্যে তেল আমদানির জন্য অনেকটাই উৎসাহিত। বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, বর্তমান বাজার মূল্যের চেয়ে ৩৫ শতাংশ কম দামে রাশিয়া থেকে অপরিশোধিত তেল সংগ্রহ করছে ভারত।
সম্প্রতি ইরানের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের আরোপিত নিষেধাজ্ঞায় দেশটি থেকে অপরিশোধিত জ্বালানি তেল আমদানি করা থেকে বিরত থাকে চীন। ফলে তেল শোধনাগারগুলো এ ঘাটতি পূরণে রুশ জ্বালানি তেলের দিকে ঝুঁকে পড়েছে। চীনের শ্যাংডংয়ের শোধনাগারগুলো রাশিয়ার অপরিশোধিত জ্বালানি তেল আমদানির জন্য বেশ কয়েকটি সচল চুক্তি নবায়ন করেছে। গত বছরের নভেম্বরে প্রথম অপরিশোধিত তেলবাহী কার্গোর জন্য চুক্তি নবায়ন করা হয়, যা চলতি মাসের প্রথম দিকে এসে পৌঁছানোর কথা এবং মাসের শেষ দিকে আরও আটটি কার্গো চীনে পৌঁছবে বলে জানা গেছে।
রুশ তেল উৎপাদকরা ইউরালস ব্লেন্ড, ফার ইস্ট রাশিয়ান ইএসপিও, শকর ও শাখালিন ব্লেন্ডজাতীয় অপরিশোধিত তেল বিক্রির জন্য পূর্ব এশিয়ার শোধনাগার ও তেল কোম্পানিগুলোর সঙ্গে আলোচনা করছে। এ সময় রুশ উৎপাদকরা মিডিয়াম সোর ও লাইট সুইট গ্রেড তেল মূল্যছাড় দিয়ে বিক্রয়ের প্রস্তাব দেন। জাপান, সিঙ্গাপুর, চীন, দক্ষিণ কোরিয়া ও থাইল্যান্ডের বিভিন্ন ব্যবসায়িক সূত্রে এমনটা জানা যায়। তবে ঠিক কী পরিমাণ মূল্যছাড় প্রস্তাব করা হয়েছে, এ ব্যাপারে কোনও মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানায় এসব ব্যবসায়ী। এ সময় বাজারে প্রচলিত মূল্যের চেয়ে অনেকাংশে কম দামে এসব তেল বিক্রির প্রস্তাব দেয়া হয়েছে বলে ইঙ্গিত দেয় তারা। সূত্র: এসঅ্যান্ডপি গ্লোবাল প্লাটস
পি এস/এন আই