ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস গত বৃহস্পতিবার শিশু কেফির বিবাস ও অ্যারিয়েল বিবাস (৪) ও তাদের মা শিরি বিবাস এবং ওদেদ লিফশিৎজকে মুক্তি দেয়। পরে তিনজনের মরদেহ শনাক্ত করলেও সেখানে ওই দুই শিশুর মা শিরি বিবাস ছিলেন না বলে জানায় ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ। তবে গতকাল শুক্রবার আবারও মরদেহ পাঠায় হামাস, সেটি জিম্মি শিরি বিবাসের বলে নিশ্চিত করেছে তার পরিবার। খবর বিবিসির
আজ শনিবার এক বিবৃতিতে শিরি বিবাসের পরিবার বলেছে, ‘আমাদের শিরিকে জিম্মি থাকা অবস্থায় হত্যা করা হয়েছে। কিন্তু এবার তার মরদেহ বাসায় ফিরেছে।’ তবে এখনও ইসরায়েলের ফরেনসিক বিভাগ এ বিষয়ে কিছুই বলেনি।
গত বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে ইসরায়েল জানিয়েছে, যে চারজন জিম্মির মরদেহ ফেরত দেয় হামাস। এর মধ্যে শিরি বিবাস নেই। তার মরদেহের স্থলে একজন অজ্ঞাত নারীর মরদেহ দেওয়া হয়েছে।
হামাসের দাবি, ইসরায়েলের বর্বর হামলায় বন্দিদের মৃত্যু হয়েছে। তারা আজ শনিবার আরও ছয় জীবিত জিম্মিকে মুক্তি দেয়। বিনিময়ে ইসরায়েলের জেলখানা থেকে মুক্তি পাবে ৮০০ ফিলিস্তিনি, যাদের অধিকাংশই নারী-শিশু।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের হাতে আটক হওয়ার সময় আরিয়েলের বয়স ছিল মাত্র ৪ মাস ও কেফির ৯ মাস। তাদের মা ৩৩ বছর বয়সী শিরি বিবাস। আর ৮৪ বছর বয়সী ব্যক্তি হলেন ওদেদ লিফশিতজে।
চলতি মাসের শুরুর দিকে শিরিন বিবাসের স্বামী ইয়ার্ডেন হামাসের হাত থেকে মুক্তি পান। শিশু দুটি ইসরায়েলের জিম্মি সংগ্রামের প্রতীক হয়ে উঠেছিল। তাদের জন্মদিনে ইসরায়েলে শোকাবহ পরিবেশ তৈরি হয়েছিল। লিফশিৎজে একজন সাবেক সাংবাদিক, যিনি ইসরায়েলি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন রোড টু রিকভারির কর্মী হিসেবে যুক্ত ছিলেন। তার স্ত্রীকেও মুক্তি দেয় হামাস।
বিবাসের পরিবার বলছে, গত ১৬ মাস ধরে আমরা অপেক্ষা করছি। এখন আমরা এটি (বিবাসের মরদেহ) পেয়েছি।
এর আগে ১৯ জানুয়ারি থেকে গাজায় যুদ্ধবিরতি চুক্তি কার্যকর হয়। চুক্তি অনুযায়ী, ছয় সপ্তাহের প্রথম ধাপে হামাস ৩৩ ইসরায়েলি জিম্মিকে মুক্তি দেয়। বিনিময়ে ইসরায়েলও তাদের জেলে আটক কয়েকশ ফিলিস্তিনি বন্দিকে ছেড়ে দেয়।
এই সময়ের মধ্যে ইসরায়েলি বাহিনীতে গাজার ঘনবসতিপূর্ণ এলাকাও ছাড়তে হবে, আর বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনিরা পাবে বাড়ি ফেরার অনুমতি। এই সময়ে প্রতিদিন শত শত ত্রাণবাহী লরিকে গাজায় ঢোকারও সুযোগ দেবে তেল আবিব।
চুক্তির দ্বিতীয় ধাপ নিয়ে আলোচনা শুরু হবে প্রথম ধাপের ১৬তম দিনে। এই ধাপেই মুক্তি পাবে পুরুষ ইসরায়েলি সেনারা। তৃতীয় ও শেষ ধাপে হবে গাজার পুনর্গঠন, যা শেষ হতে লাগবে কয়েক বছর।
চুক্তির অন্যতম মধ্যস্থতাকারী কাতার জানিয়েছে, প্রথম ধাপে যে জিম্মিরা মুক্তি পাচ্ছেন তাদের মধ্যে বেসামরিক নারী, শিশু, নারী সেনা, বয়স্ক ব্যক্তি, অসুস্থ ও আঘাতপ্রাপ্ত বেসামরিকরা রয়েছেন।
এদিকে গাজায় হামাসের হাতে এখনও ৫৯ জিম্মি রয়ে গেছে, যাদের অর্ধেক সংখ্যকই মারা গেছে। যুদ্ধবিরতির প্রথম ধাপের সময়সীমা আগামী ২ মার্চ শেষ হওয়ার কথা। দ্বিতীয় ধাপের ব্যাপারে আলাপ-আলোচনা শুরু হয়েছে। হামাস জানিয়েছে, তারা যুদ্ধবিরতি বাড়ানোর আলোচনায় বসতে ও সব জিম্মি এবং মৃতদেহ মুক্তি দিতে প্রস্তুত।
দ্বিতীয় দফা যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব নিয়ে মিসরের রাজধানী কায়রোতে যাবে দু’পক্ষের প্রতিনিধি দল। নেতানিয়াহু প্রতিনিধি পাঠাতে অস্বীকৃতি জানানোর পর প্রক্রিয়ায় বিলম্ব হচ্ছে বলে জানিয়েছে আলজাজিরা।
ইসরায়েলের হামলায় এ পর্যন্ত ৪৮ হাজার ২৯৭ জন ফিলিস্তিনি নিহত ও আহত হয়েছে ১ লাখ ১১ হাজার ৭৩৩ জন। গাজার ধ্বংসস্তূপের নিচে নিখোঁজ হাজার হাজার ফিলিস্তিনিকে মৃত বলে ধরে নেওয়া হচ্ছে।
এএফপির তথ্যমতে, আজ শুক্রবার আরব নেতারা গাজা পুনর্গঠনে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের পরিকল্পনার বিরুদ্ধে সম্মেলনে বসছেন। সৌদি পররাষ্ট্রনীতি বিশেষজ্ঞ উমর করিম বলেন, ফিলিস্তিনি ইস্যুতে এই সম্মেলনটি গত কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হতে যাচ্ছে। ট্রাম্পের পরিকল্পনা ছিল, গাজার ২৪ লাখ বাসিন্দাকে জর্দান ও সৌদি আরবে পুনর্বাসন করে তবেই গাজা পুনর্গঠন করা হবে। তার এই পরিকল্পনা তাৎক্ষণিক প্রত্যাখ্যান করেন আরব নেতারা। এমনকি মার্কিন সিনেটরদের কেউ কেউ ট্রাম্পের প্রস্তাবের বিরোধিতা করেন।
রয়টার্সের প্রতিবেদনে জানা গেছে, যুদ্ধবিরতির মধ্যেই গাজায় হামলা অব্যাহত রেখেছে ইসরায়েলি বাহিনী। পশ্চিম তীরের শরণার্থী শিবিরে হামলা চালিয়ে তিন ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে তারা। বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দিচ্ছে ফিলিস্তিনি বাড়িঘর।