জামিনে মুক্তি পেলে পুনরায় প্রতারণাসহ অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়াতে পারেন ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ইভ্যালির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মোহাম্মদ রাসেল এবং তার স্ত্রী প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান শামীমা নাসরিন। এছাড়া মামলার তদন্তে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছেন তারা।
গুলশান থানার প্রতারণার মামলায় তিনদিনের রিমান্ড শেষে মঙ্গলবার (২১ সেপ্টেম্বর) দুপুর ১টা ২৫ মিনিটের দিকে তাদের ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করা হয়। এ সময় তাদের কারাগারে আটক রাখার আবেদন করে এসব কথা উল্লেখ করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা গুলশান থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) ওয়াহিদুল ইসলাম।
তদন্ত কর্মকর্তা আবেদনে উল্লেখ করেন, ইভ্যালির রাসেল ও শামীমা অত্যন্ত সুচতুর, ধুরন্ধর এবং কৌশলী। রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদে তারা বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ধরনের কথাবার্তা বলেছেন। এ সময় গুরুতর প্রশ্ন কৌশলে তারা এড়িয়ে যান। তারপরও আসামিরা রিমান্ডে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছেন, যা তদন্তের স্বার্থে যাচাই-বাছাই চলছে। এ মামলার তদন্তের স্বার্থে পুনরায় তাদের রিমান্ডে নেওয়ার প্রয়োজন হতে পারে। তাই তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত তাদের কারাগারে আটক রাখা একান্ত প্রয়োজন।
এদিন ধানমন্ডি থানার প্রতারণার আরেক মামলায় সাতদিনের রিমান্ডে নিতে আবেদন করেছে পুলিশ। ঢাকার অতিরিক্ত মহানগর হাকিম হাসিবুল হকের আদালতে এ রিমান্ড শুনানি অনুষ্ঠিত হবে।
এর আগে গত ১৭ সেপ্টেম্বর ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আতিকুল ইসলামের আদালতে তাদের হাজির করা হয়। এরপর গুলশান থানায় প্রতারণার অভিযোগে করা মামলার সুষ্ঠু তদন্তের জন্য ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা গুলশান থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) ওয়াহিদুল ইসলাম।
অন্যদিকে আসামিপক্ষের আইনজীবী মনিরুজ্জামান লিটন তাদের রিমান্ড বাতিল চেয়ে জামিন আবেদন করেন। উভয়পক্ষের শুনানি শেষে ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট তাদের তিনদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
গত ১৬ সেপ্টেম্বর বিকেলে রাজধানীর মোহাম্মদপুরে ইভ্যালি এমডি রাসেলের বাসায় অভিযান চালায় র্যাব। অভিযান শেষে এ দম্পতিকে গ্রেফতার করা হয়। এরপর তাদের র্যাব সদর দপ্তরে নেওয়া হয়। সেখানেই চলে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ।
এর আগে গত ১৫ সেপ্টেম্বর রাত ১২টা ২০ মিনিটের দিকে আরিফ বাকের নামে ইভ্যালির এক গ্রাহক প্রতিষ্ঠানটির এমডি ও সিইও রাসেল এবং তার স্ত্রী চেয়ারম্যান শামীমা নাসরিনের বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে গুলশান থানায় মামলা করেন।
মামলার অভিযোগে বলা হয়, ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ইভ্যালির চমকপ্রদ বিজ্ঞাপনে আকৃষ্ট হয়ে অভিযোগকারী আরিফ বাকের ও তার বন্ধুরা চলতি বছরের মে ও জুন মাসে কিছু পণ্য অর্ডার করেন। পণ্যের অর্ডার বাবদ বিকাশ, নগদ ও সিটি ব্যাংকের কার্ডের মাধ্যমে পুরো অর্থ পরিশোধ করা হয়।
‘পণ্যগুলো ৭-৪৫ কার্যদিবসের মধ্যে ডেলিভারি ও নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে সরবরাহে ব্যর্থ হলে প্রতিষ্ঠান সমপরিমাণ টাকা ফেরত দিতে অঙ্গীকারবদ্ধ ছিল। কিন্তু ওই সময়ের মধ্যে পণ্যগুলো ডেলিভারি না পাওয়ায় বহুবার ইভ্যালির কাস্টমার কেয়ার প্রতিনিধিকে ফোন করা হয়। সবশেষ গত ৫ সেপ্টেম্বর যোগাযোগের মাধ্যমে অর্ডার করা পণ্যগুলো পাওয়ার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন তারা।’
এতে আরও বলা হয়, একপর্যায়ে ইভ্যালি পণ্য ও টাকা প্রদানে ব্যর্থ হওয়ায় ৯ সেপ্টেম্বর ইভ্যালির ধানমন্ডির অফিসে যান তারা। এসময় এমডি রাসেলের সঙ্গে কথা বলতে চাইলে তারা উত্তেজিত হয়ে চিৎকার করেন। একপর্যায়ে অফিসের ভেতরে অবস্থান করা রাসেল উত্তেজিত হয়ে তার রুম থেকে বেরিয়ে এসে তাকে ভয়-ভীতি প্রদর্শন করেন এবং পণ্য অথবা টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানান। ভয়-ভীতি ও হুমকিসহ তাদের সঙ্গে চরম দুর্ব্যবহার করা হয়। এতে তারা আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে দিনযাপন করছেন এবং পণ্য বুঝে না পাওয়ায় আর্থিক ও মানসিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।
মামলার এজাহারে রাসেল ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে তিনটি ধারায় অপরাধের কথা বলা হয়েছে। ফৌজদারি দণ্ডবিধির ধারাগুলো হচ্ছে- ৪২০, ৫০৬ ও ৪০৬।