আমরা কারো আস্থা অর্জন বা কারো বিরাগভাজন হতে রাজনীতি করি না। দেশ ও মানুষের স্বার্থে জাতীয় পার্টি কাকে সমর্থন দেবে তাও পরে বিবেচনা করা হবে বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের এমপি।
রোববার (৯ জানুয়ারি) জাপার বনানী কার্যালয় মিলনায়তনে কিশোরগঞ্জ জেলা জাতীয় পার্টি নেতৃবৃন্দেরের সঙ্গে মতবিনিয়ম সভায় তিনি এ কথা বলেন।
তিনি আরও বলেন, কাউকে ক্ষমতায় নিতে বা ক্ষমতাচ্যুত করতে জাতীয় পার্টির রাজনীতি নয়। জাতীয় পার্টি দেশের মানুষকে মুক্তি দিতেই রাজনীতি করছে। স্বতন্ত্র আদর্শ নিয়ে রাজনীতির মাঠে আছে। দেশের মানুষ পরিবর্তন চায়। দেশের মানুষ আওয়ামী লীগের পরিবর্তে বিএনপিকে চায় না। দেশের মানুষ দুটি দলের বিকল্প হিসেবে জাতীয় পার্টিকে রাষ্ট্র ক্ষমতায় দেখতে চায়।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের পরিবর্তে বিএনপি এলে দেশের অবস্থা আরও ভয়াবহ হয়ে উঠবে, খারাপ অবস্থার ধারাবাহিকতা সৃষ্টি হবে। বিএনপি বিনা বিচারে হত্যা শুরু করেছে, আওয়ামী লীগ এসে তার ধারাবাহিকতায় রক্ষা করছে। বিএনপি দুর্নীতিতে দেশকে চ্যাম্পিয়ন করেছে, আওয়ামী লীগ এসে সেই ধারাবাহিকতায় রক্ষা করছে। হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ জেলখানায় যখন অসুস্থ হয়ে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছিল, তখন আমরা পিজি হাসপাতালে সুচিকিৎসার জন্য সরকারের কাছে আবেদন করেছিলাম। তৎকালীন বিরোধী দলীয় নেতা শেখ হাসিনাও এরশাদের সুচিকিৎসার জন্য বিবৃতি দিয়েছিলেন। কিন্তু বিএনপি সরকার তখন জেলখানা থেকে পিজি হাসপাতালে নিয়ে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করেনি। আজ বিএনপি তাদের নেত্রীর চিকিৎসার জন্য কান্নাকাটি করছে।
তিনি বলেন, দেশের মানুষ ভালো নেই। নিয়ন্ত্রণহীন ভাবে দ্রব্যমূল্য বেড়ে যাচ্ছে। অপরদিকে, কাজ নেই, মানুষের আয় নেই। তাই সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছে দেশের বেশির ভাগ মানুষ। এমএ পাস করে যুবকরা কাজের অভাবে রাস্তার পাশে হকারি করছে। শিক্ষিত বেকাররা সিএনজি অটোরিকশা চালাচ্ছে, তাদের মেধার মূল্যায়ন হচ্ছে না। শিক্ষিত বেকারদের আমরা দেশের স্বার্থে কাজে লাগাতে পারিনি। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে প্রতিবছর শতশত শিক্ষিত বেকার সাগর-পাহাড় পাড়ি দিয়ে অবৈধভাবে বিদেশে যাচ্ছে, অনেকের মৃত্যু হচ্ছে। তেলের দাম বাড়ানো হচ্ছে, বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দামও বাড়ানো হচ্ছে। কৃষক লোকসান দিয়ে ফসল ফলায় আর মধ্যস্বত্ব ভোগীদের হাত ঘুরে সেই ফসল ১০ গুণ বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। দেখার যেনো কেউ নেই। দেশের মানুষের মান-সম্মান, ইজ্জত ও জীবনের নিরাপত্তা নেই। সড়কে বের হলে দুর্ঘটনায় মানুষ মারা যাবে, ট্রেনের ধাক্কায় বাসের যাত্রী মারা যাবে আর নদীতে দুর্ঘটনায় অসংখ্য মানুষের মৃত্যু হবে – এটা যেন স্বাভাবিক ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। দুর্ঘটনায় মানুষ মারা যাবে এর কোন বিচার হবে না। আবার স্বামী ও সন্তানের সাথে বেড়াতে গিয়ে গণধর্ষণের শিকার হচ্ছেন নারী। ইজ্জতের নিরাপত্তা নেই কোথাও। দাঁড়ি-টুপি দেখলেই তাকে জঙ্গি আখ্যা দিয়ে হয়রানি করা হচ্ছে। অনেক নিরীহ মানুষকে জঙ্গি আখ্যা দিয়ে টাকা আদায় করা হচ্ছে। দেশটা দিনে দিনে বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়ছে।
জাপা চেয়ারম্যান বলেন, নির্বাচনে সরকারি দলের টিকেট পেলেই সেখানকার পুলিশ ও প্রশাসনের একটি শ্রেণি নির্বাচনকে কলুষিত করতে উঠেপড়ে লেগে যায়। নির্বাচনের মাঠে প্রতিপক্ষকে দাঁড়াতেই দিতে চাচ্ছে না ক্ষমতাসীনরা। এক ইউএনওথর হাত থেকে নিয়ে জাতীয় পার্টির প্রার্থীর মনোনয়ন পত্র ছিঁড়ে ফেলেছে তারা। তারপরও অনেক স্থানেই দেশের মানুষ লাঙ্গলে ভোট দিয়ে জয়যুক্ত করেছেন। অনেক স্থানেই লাঙ্গলের বিজয় ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছে। এতেই প্রমাণ হচ্ছে দেশের মানুষ আওয়ামী লীগ আর বিএনপিকে চায় না। দেশের মানুষ জাতীয় পার্টিকেই রাষ্ট্র ক্ষমতায় দেখতে চায়।
সভায় উপস্থিত ছিলেন মহাসচিব মো. মুজিবুল হক চুন্নু এমপি, কো- চেয়ারম্যান এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার, চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা মনিরুল ইসলাম মিলন, জহিরুল আলম রুবেল, যুগ্ম মহাসচিব মো. জসিম উদ্দিন ভূঁইয়া, সৈয়দ মঞ্জুর হোসেন মঞ্জু, সাংগঠনিক সম্পাদক মো. হুমায়ুন খান, প্রচার সম্পাদক মাসুদুর রহমান মাসুম, দফতর সম্পাদক-২ এম এ রাজ্জাক খান, যুগ্ম দফতর সম্পাদক মাহমুদ আলম, সমরেশ মন্ডল মানিক কেন্দ্রীয় নেতা প্রিন্সিপাল মোস্তফা চৌধুরী, রেজাউল করিম রেজা, জহিরুল ইসলাম মিন্টু। কিশোরগঞ্জ জেলা নেতৃবৃন্দের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন জেলা আহ্বায়ক আশরাফ উদ্দিন রেনু এডভোকেট, নব নির্বাচিত ইউপি চেয়ারম্যান মো. লিয়াকত আলী ,আ. কাউম ভূঁইয়া, সাদেকুর রহমান, মোস্তাক খান প্রমুখ।
পিএসএন/এমঅাই