প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘প্রথমবার যেকোনো কাজ যখন আমরা করতে গিয়েছি, পরবর্তী সরকার এসে আমার বিরুদ্ধে মামলা দিয়েছে। প্ল্যানেটারিয়াম করার জন্য আমার বিরুদ্ধে দুটি মামলা দেওয়া হয়েছিল। কেন ঠিক তা আমি জানি না। এটা করার সময় সব ইউটিলিটি যেন সামরিক জাদুঘরও ব্যবহার করতে পারে, তার ব্যবস্থা করেছিলাম।’
আজ বৃহস্পতিবার গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে বঙ্গবন্ধু সামরিক জাদুঘরের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।
১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় আসার পরে বিমান বাহিনীর জন্য দুটি মিগ ২৯ কেনার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এটার জন্য দুটি মামলা আমার বিরুদ্ধে দেওয়া হয়। আমাদের বিমান বাহিনী যথেষ্ট শক্তিশালী। সেখানে মেয়েরা পর্যন্ত কাজ করছেন।’
নৌবাহিনীর কার্যক্ষমতা বাড়াতে ১৯৯৬ সালে দুটি ফ্রিগেট কেনার কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘সেটা কেনার জন্যও আরও দুটি মামলা আমার বিরুদ্ধে করা হয়েছিল। কিন্তু আমার এখানে দুঃখ নেই। আমি যা করেছি জনগণের জন্যই করেছি। যদিও এখানে তারা কোনো কিছু প্রমাণ করতে পারেনি।’
দেশের জন্য কাজ করাই সরকারের লক্ষ্য জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের প্রতিটি বাহিনীকে আধুনিকায়ন করাই ছিল লক্ষ্য। এমনকি পদবিগুলোও পরিবর্তন করে আন্তর্জাতিক মানের করে দিয়েছি।’
সরকারপ্রধান বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের মাধ্যমে আমরা আপনজন হারিয়েছি ঠিকই, কিন্তু বাংলাদেশ কী হারিয়েছিল? একের পর এক ক্যু হয়েছে। কত সামরিক কর্মকর্তা, সৈনিককে জীবন দিতে হয়েছে। অনেক পরিবার এখনো তাদের আপনজনের খোঁজও পায়নি। পাশাপাশি রাজনৈতিক নেতাদের ওপর অত্যাচার ও নির্যাতন। সেই সঙ্গে বাংলাদেশ যে আদর্শ নিয়ে স্বাধীন হয়েছিল, তা থেকে বিচ্যুত হয়। দেশের অগ্রযাত্রা থেমে যায়, যা কখনো হওয়ার কথা না।’
১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকারে আসার পর সশস্ত্র বাহিনীকে আধুনিকায়নের জন্য তৎকালীন সরকারের বিভিন্ন কর্মকাণ্ড তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য বেসরকারি খাতকে তখন সরকার উন্মুক্ত করে দিয়েছিল বলে জানান প্রধানমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘পাঁচটি বছর আমরা ক্ষমতায় ছিলাম। অন্তত এইটুকু দাবি করতে পারি, সেটা বাংলাদেশের জন্য স্বর্ণযুগই ছিল। মানুষের মনে একটা আশার প্রদীপ জ্বলে উঠেছিল যে তারাও সুন্দরভাবে বাঁচতে পারবে। সরকার যে জনগণের সেবক, সেটাই আমরা প্রমাণ করেছিলাম।’
২০০৯ সাল থেকে দীর্ঘ সময় সরকারে থাকার সুফল দেশের জনগণ পাচ্ছে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘বাংলাদেশকে শুধু উন্নয়ন করা না, উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদায় উন্নীত করতে সক্ষম হয়েছি। যেটা ২০০৮ সালের নির্বাচনী ইশতেহারে ঘোষণা ছিল। সেই সুনির্দিষ্ট কাজ করছি বলেই এটা সম্ভব হয়েছে।’
সশস্ত্র বাহিনী দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার প্রতীক জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘দেশের মানুষ এ সম্পর্কে যেন জ্ঞান অর্জন, জানতে ও উপলব্ধি করতে পারে যে আমাদের সশস্ত্র বাহিনী কী কাজ করে। কীভাবে চলে বা অতীতে তারা কী করছে, এটা মানুষকে জানানো দরকার। বিশেষ করে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস জানা। সেই সঙ্গে আমাদের ভবিষ্যৎ কী হচ্ছে সে সম্পর্কেও জ্ঞান অর্জন একান্ত দরকার।’
সামরিক জাদুঘরকে দৃষ্টিনন্দন করে তৈরি করা হয়েছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সারা বিশ্বে যত সামরিক জাদুঘর রয়েছে, তার মধ্যে শ্রেষ্ঠ জাদুঘর হিসাবে প্রতিষ্ঠা পায়, সেটাই আমার আকাঙ্ক্ষা ছিল। আমি সত্যিই আনন্দিত যে যতটুকু ছবি দেখেছি তাতে মনে হয়েছে এটা হবে পৃথিবীর মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ, সুন্দর, আধুনিক প্রযুক্তিসম্পন্ন একটি সামরিক জাদুঘর। সেভাবে এটা তৈরি হোক। সেটাই আমি চাই।’
সামরিক জাদুঘরের পাশে একটি শিশু পার্ক তৈরি করা হয়েছে বলে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এটার পেছনে একটা ইতিহাস আছে। কোনো একজন, আমি নাম বলতে চাই না, হয়তো এখন শুনলে লজ্জা পাবে। তিনি হঠাৎ দাবি করে বসলেন এখানে একটি বহুতল ভবন করবেন। সঙ্গে সঙ্গে আমি আমার তৎকালীন সামরিক সচিব জয়নাল আবেদিনকে বললাম, এই জায়গায় কিছুতেই বহুতল ভবন করা যাবে না। কারণ তা করতে গেলে সামরিক জাদুঘর ও প্ল্যানেটারিয়াম সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে যাবে। ওখানে আমি শিশু পার্ক করে দেব। সেখানে এখন দৃষ্টিনন্দন শিশু পার্ক হয়ে গেছে। কেউ আর নিতে পারবে না। ওই দালানকোঠা বানাতেও পারবে না।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘দেশের মানুষের বিনোদনের জায়গা খুব সীমিত। সে জন্য আমাদের চেষ্টা থাকে তাদের বিনোদনের ব্যবস্থার। তার সঙ্গে রয়েছে শিক্ষণীয়। নভোথিয়েটারে আমাদের অনেক শিক্ষার্থী আসে। অনেক কিছু জানতে পারে। সেই সঙ্গে আমাদের সামরিক জাদুঘরে আসতে পারবে। দেখতে পারবে। ছোট্ট শিশুদের বিনোদনের ব্যবস্থা শিশু পার্কে আছে। সবকিছু মিলিয়ে একটা চমৎকার জায়গা। আমাদের বিজয় সরণি। বিজয় সরণি বিজয়ের স্মৃতি নিয়েই চলবে। সেটাই হচ্ছে বড় কথা।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘প্রথমবার সরকারে এসে পার্বত্য চট্টগ্রামে শান্তিচুক্তি করে সেখানে শান্তি প্রতিষ্ঠা করি। আমরা কিন্তু নিজেরাই করেছি। বাইরের কাউকে হাত দিতে দেইনি। কারণ এটা আমার নিজের দেশের ভেতরে। অভ্যন্তরীণ ব্যাপার। আমাদের দেশের নাগরিক। তাদের সঙ্গে সমস্যা থাকলে আমরাই সমাধান করতে পারব। সেভাবেই আমরা করতে পেরেছি। একই সঙ্গে ভারতের সঙ্গে গঙ্গা পানি চুক্তি করে ন্যায্য হিস্যা নিয়েছি।’
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন সেনাপ্রধান জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ, বিমান বাহিনীর প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল শেখ আব্দুল হান্নান, নৌবাহিনী প্রধান অ্যাডমিরাল এম শাহীন ইকবাল।
পিএস/এনআই