ছাত্র-জনতার বিপ্লবে শুধু সরকার পরিবর্তন ছাড়া ‘অন্য কিছুই’ বদলায়নি বলে দাবি করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়। তিনি বলেন, এক-এগারোর সময় আওয়ামী লীগের সব মামলা যদি উঠে যেতে পারে, তাহলে এখন কেন আমাদের মামলা উঠছে না। প্রধান উপদেষ্টাকে মিথ্যা মামলা দিয়ে অপমানিত করা হয়েছিল, এতে গোটা জাতি ক্ষুব্ধ হয়েছে। তাহলে আমাদের ওপর এত অত্যাচার-নির্যাতন-মিথ্যা মামলা কেন আপনাদের বিবেচনায় আসছে না।
রোববার (১৩ অক্টোবর) জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন তিনি। জাতীয়তাবাদী প্রচার দলের উদ্যোগে আন্তর্জাতিক দুর্যোগ প্রশমন দিবস উপলক্ষ্যে ‘দুর্যোগ প্রশমন বিএনপির ভূমিকা’ শীর্ষক এ আলোচনা সভা হয়।
গয়েশ্বর বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মিথ্যা মামলার ব্যাপারে যদি আমরা সমব্যথিত হতে পারি, সোচ্চার হতে পারি। তাহলে আপনারা দায়িত্ব গ্রহণ করার পর আমাদের মামলাগুলো আগের মতোই আছে, আগের মতোই আদালতে যেতে হচ্ছে। এই কারণে আমি বলেছি, সরকার বদলে গেছে কিন্তু তুমি-আমি একই আছি, যা ছিলাম আগে।
বিজয়া দশমীর শুভেচ্ছা জানিয়ে তিনি বলেন, মান্না দে’র একটি গান… তুমি কি সেই আগের মতোই আছ, নাকি অনেকখানি বদলে গেছ…। গানের শুরুটা এরকম যদি বলি… সরকার বদলে গেছে, তুমি-আমি একই আছি, আগে যা ছিলাম…।
বাংলাদেশের ভাগ্যের পরিবর্তন হয়নি উল্লেখ করে সাবেক এই মন্ত্রী বলেন, মানুষের জন্য, অধিকারের জন্য দীর্ঘ ১৬ বছর যারা রক্ত দিয়েছে, যারা গুম হয়েছে, যারা সন্তান হারা হয়েছে, এরা সব হারিয়েছে। মাঝে শেখ হাসিনা নেই। সব আগের মতোই আছে।
নির্বাচন হবে কি না কীভাবে বিশ্বাস করব
গয়েশ্বর বলেন, এখনও নির্বাচন কমিশন পরিবর্তন করতে পারেন নাই। কিন্তু জনগণের ভোট করতে হলে তো নির্বাচন কমিশন লাগবে। যেখানে এখনও উইথআউট নির্বাচন কমিশন, সেখানে আমি কীভাবে বিশ্বাস করব আপনি নির্বাচন করবেন… কীভাবে বিশ্বাস করব?
তিনি আরও বলেন, নির্বাচন যত শিগগিরই হবে, জনগণের পার্টিসিপেশনের জোয়ারের মধ্যে হবে। এই মুহূর্তে যদি নির্বাচন হয় তাহলে বাংলাদেশে নির্বাচনের অতীতের সব রেকর্ড অতিক্রম করে জনগণ ভোট কেন্দ্রে উপস্থিত হবে। কিন্তু মরা মানুষ উপস্থিত হবে না।
ছাত্র-জনতার আন্দোলন ভোটাধিকারের
বিএনপির স্থায়ী কমিটির এ সদস্য বলেন, কোটা বৈষম্যবিরোধী থেকে শুরু করে জনগণের ভোটাধিকার ফিরে পাওয়ার যে আন্দোলনটা, সেই আন্দোলনে ছাত্রদের সঙ্গে রাজনৈতিক দলের কোনো সাংঘর্ষিক না, একই ধারার আন্দোলন। কিন্তু বর্তমান সরকার তাদের (ছাত্রদের) আলাদা করতে চায় কেন?
গয়েশ্বর বলেন, ছাত্ররা সচিবালয় ঘেরাও করবে কেন… কিছু থাকলে তারা সমাবেশ করে সরকারকে সতর্ক করবে। আন্দোলন শেষ, আমরা তো চলে গেছি… আমাদেরকে কেউ ডাকে নাই। ১৯৬২ সালে আমি ক্লাস এইটের ছাত্র তখন থেকে শিক্ষা আন্দোলন ছিলাম… তখন থেকে সেই রাজনীতি করছি। তাই ছাত্রদের আলাদা করে বিভাজন সৃষ্টি করবেন না। বৈষম্যবিরোধী যদি আরেকটা বৈষম্য সৃষ্টি হয় তার মাশুল কে দেবে।
অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্দেশে তিনি বলেন, আপনার দায়িত্ব একটা সুষ্ঠু নির্বাচন করার জন্য যেটুকু সংস্কার দরকার হয় সেইটুকু বিবেচনা করবেন। আমরা তো ৩১ দফা সংস্কার প্রস্তাব দিয়ে রেখেছি… এসব সংস্কারের বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলো ঐকমত্যের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেবে আগামী দিনে। জনগণের প্রতিনিধিরা পার্লামেন্টে আসবে, তারা ঐকমত্যের ভিত্তিতে সেসব সংস্কার করবে।
নির্বাচনের জন্য কত সময় লাগবে বলুন?
বিএনপির স্থায়ী কমিটির এ সদস্য বলেন, নির্বাচনের জন্য কতটুকু সময় লাগবে বলেন না কেন? সেনাবাহিনী প্রধান বলেছেন ১৮ মাস, পরের দিন কেন সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়, এটা সরকারের কথা না। তাহলে সরকারের কথাটা কী? ৩৬ মাস, ৩০ মাস, তাই বলেন না… বলতে তো হবে আপনাকে।
গয়েশ্বর আরও বলেন, আপনাকে তো সময় বলতে হবে। কোনো বিয়ে ঠিক হলে তিন মাস আগে তারিখ ঠিক হয়। আমি যদি জানতে পারি আপনারা এত মাস পরে নির্বাচন করবেন, আমাদের তো কাজ আছে, জনগণের কাছে যেতে হবে তাদের বোঝাতে চেষ্টা করব– আমি এই করব, সেই করব। আমাদেরও তো আকাঙ্ক্ষা আছে জনগণকে কনভিন্স করার। সুতরাং আপনাদের টার্গেট ঠিক করতে হবে।
জাতীয়তাবাদী প্রচার দলের সভাপতি মাহফুজ কবির মুক্তার সভাপতিত্বে সাধারণ সম্পাদক আকবর হোসেনের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, যুগ্ম মহাসচিব আবদুস সালাম আজাদ, স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক মীর সরাফত আলী সপু, নির্বাহী কমিটির সদস্য শাহ মুহাম্মদ নেছারুল হকসহ জাতীয়তাবাদী প্রচার দলের নেতারা বক্তব্য দেন।