মুখের যে কোনো জায়গায় ব্রণ হওয়া বিরক্তিকর। তবে বলা হয়, চোয়ালের ব্রণের বৈশিষ্ট্য আলাদা।
এই ধরনের ব্রণ হয় লাল, শক্ত ও ব্যথাযুক্ত। আর ওঠার রয়েছে নানান কারণ।
হরমোনের ওঠানামা
- বৈশিষ্ট্য: গভীর ভেতরটা থাকে নরম। চোয়ালের হাড়জুড়ে ও থুতনিতে হয়। সারতে সময় লাগে।
ত্বকে অতিমাত্রার তেল নিঃসরণের কারণে এই ব্রণ দেখা দেয়। মৃত কোষ ও ব্যাক্টেরিয়ার সময়ে পূঁজ যুক্ত হয়।
এই বিষয়ে রিয়েলসিম্পল ডটকম’য়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে শিকাগো ভিত্তিক চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ ড্যানিলো সি ডেল ক্যাম্প বলেন, “গর্ভাবস্থা, মাসিক চলার সময় বা ‘পলিসিস্টিক ওভারি সিন্ড্রম’ সমস্যায় নারীদের সাধারণত এই সমস্যা দেখা দেয়।
- প্রতিকার: “হরমোনের কারণে হওয়া ব্রণ সারাতে কৌশলের প্রয়োজন হয়” বলেন ডা. ডেল ক্যাম্প।রেটিনয়েডস লোমকূপ আটকে যাওয়া রোধ করতে পারে। নারীরা নির্দিষ্ট কিছু ওষুধের মাধ্যমে উপকার পেতে পারেন। এক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
ঘষা খাওয়ার কারণে
- বৈশিষ্ট্য: স্ফিত ও ব্যথা বা ব্যথা ছাড়া পূঁজযুক্ত ব্রণ হয়, বিশেষ করে মুখের যেখানে ঘষা খায় বেশি।
বালিশের খসখসে খোলস, চিবুক বা চোয়ালে লেগে থাকে এরকম হেলমেট বা বেল্ট, মুখে দাড়ি, মুখে ফোনের ঘর্ষণ ইত্যাদি এরকম ঘর্ষণের কারণে এই ব্রণ হয়। যাকে বলে ‘মাস্কনি’। ঘষা খাওয়ার কারণে ত্বকের সুরক্ষার স্তর ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে এই সমস্যা হয়।
- প্রতিকার: প্রথমেই ঘষা লাগার পরিমাণ কমানোর চেষ্টা করতে হবে। পাশাপাশি ত্বক পরিষ্কার রাখতে হবে ভালোমতো- একই প্রতিবেদনে মন্তব্য করেন নিউ ইয়র্ক ভিত্তিক চিকিৎসক ম্যারি থর্টন। আর ‘স্যালিসাইলিক অ্যাসিড’ সমৃদ্ধ পণ্য ব্যবহার করে লোমকূপে জমে থাকা ত্বকের তেল বা সিবাম পরিষ্কারের পরামর্শ দেন তিনি।
খাদ্যাভ্যাস
- বৈশিষ্ট্য: ত্বকের ভেতরে দিকে শক্ত ব্রণ হয়। সাধারণ ওপরের দিকে ওঠে না।
“নানান ধরনের গবেষণায় দেখা গেছে যেসব খাবারে শর্করার পরিমাণ বেশি যেমন- সাদা রুটি, সাদা ভাত, চিনিযুক্ত পানীয়- যা দ্রুত রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়ায় সেগুলো এই ধরনের ব্রণ তৈরিতে ভূমিকা রাখে” বলেন নিউ ইয়র্ক ভিত্তিক নিবন্ধিত চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ ব্রিন্ডান ক্যাম্প।
রক্তে শর্করা দ্রুত বেড়ে যাওয়ার কারণে হরমোনের ভারসাম্যহীনতা থেকে ত্বকের তেল উৎপাদন বেড়ে এই ধরনের ব্রণ সৃষ্টি করে।
- প্রতিকার: যেহেতু খাদ্যাভ্যাস থেকে হয় সে জন্য প্রথমেই উচ্চ শর্করাযুক্ত খাবার খাওয়া কমানোর পরামর্শ দেন এই চিকিৎসক। এছাড়া সবজি, আপেল, চিনাবাদাম, ছোলা এই ধরনের খাবার খেতে হবে যেগুলোতে শর্করা কম।
প্রসাধনী ও মেইকআপ সামগ্রী
- বৈশিষ্ট্য: ছোট লালচে দানাদার ব্রণ হয়। সাথে থাকে ব্ল্যাক এবং হোয়াইট হেডস।
ডা. ডেল ক্যাম্প বলেন, “কিছু পণ্য চোয়ালের লোমকূপ বন্ধ করে দেয়। যে কারণে এই ধরনের ব্রণ হয়। চোয়ালের জায়গাটা বেশি সংবেদনশীল। যে কারণে মেইকআপ সামগ্রী এখানে বেশি জমে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।”
- প্রতিকার: সবচেয়ে ভালো উপায় হল বুঝেশুনে প্রসাধনী সামগ্রী ব্যবহার করা। এজন্য ডা. ডেল ক্যাম্প ‘নন-কোমেডোজেনিক’ বা ‘অয়েল ফ্রি’ পণ্য ব্যবহারের পরামর্শ দেন।
পরিষ্কার করার অভ্যাস কম
- বৈশিষ্ট্য: লোমকূপ বন্ধ হয়ে বড় আকারের ব্রণ হয় চোয়াল বরাবর বা একটু নিচে।
ত্বকের যত্নে ব্যবহার করা প্রসাধনী সারারাত জমে থাকলে লোমকূপ আটকে যায়, দেখা দেয় ‘ব্রেকআউট’য়ের সমস্যা। সাধারণত মুখ ধোয়ার সময় গাল, নাক ও কপালের দিকে নজর দেওয়া হয়। কিন্তু চোয়াল ও গলার ত্বক ঠিক মতো পরিষ্কার না করলে এই সমস্যা হতে থাকে।
- প্রতিকার: মুখ ধোয়ার সময় গলা, চিবুক ও চোয়ালের অংশ ভালো মতো পরিষ্কার করার অভ্যাস গড়তে হবে। এছাড়া যে ক্লিঞ্জার ব্যবহার করা হচ্ছে সেটা যেন জমে না থাকে সেদিকেও নজর দিতে হবে। প্রয়োজনে দুবার ধোয়া, তুলার বল ‘মাইসেলার ওয়াটার’য়ে ভিজিয়ে এসব জায়গা মুছতে হবে।
জন্মনিরোধক বড়ি খাওয়া
- বৈশিষ্ট্য: ব্যথাযুক্ত গভীর ব্রণ হয় আর ভেতর দিকটা নরম থাকে।
ডা. ক্যাম্প বলেন, “প্রোজেস্টেরন যুক্ত জন্মনিরোধক বড়ি চোয়াল বরাবর ও নিচের অংশে ব্রণ তৈরি করতে পারে।
- প্রতিকার: “এই ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে অন্য কোনো জন্মনিরোধক ব্যবস্থা গ্রহণ বা ওষুধ পরিবর্তন করে করতে হবে”- পরামর্শ দেন ডা. ক্যাম্প।আর সমস্যা বেশি হলে চর্মরোগ বিশেষজ্ঞের সাথে কথা বলে চিকিৎসা সেবা নেওয়ার প্রয়োজন হতে পারে।