স্বাভাবিক মাত্রার চেয়ে বেশি পড়লে কারণ হতে পারে গুরুতর।
দুয়েকটা চোখের পাপড়ি বা লোম পড়ে যাওয়া স্বাভাবিক। তবে বেশি মাত্রায় পড়তে থাকলে নজর দেওয়ার প্রয়োজন রয়েছে।
এই বিষয়ে নিউ ইয়র্ক’য়ের কস্মেটিক ত্বক-বিশেষজ্ঞ ডা. পল জ্যারোড ফ্র্যাঙ্ক বলেন, “চোখের পাপড়ি ঝরে যাওয়ার বিভিন্ন কারণ থাকতে পারে।”
রিয়েলসিম্পল ডটকম’য়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে তিনি ব্যাখ্যা করেন, “ভুল পণ্য ব্যবহার করা, মানসিক চাপে থাকা বা নকল পাপড়ি লাগালে ভুলভাবে ওঠানোর সময় এরকম সমস্যা হয়। তবে শারীরিক অসুস্থতার কারণও থাকতে পারে।”
শরীরের যে কোনো পরিবর্তনে অসুবিধা হলে প্রথমে গোড়ায় কোথায় গলদ হল সেটা খুঁজে বের করাই হল বুদ্ধিমানের কাজ।
স্বাভাবিক চুল পড়া
মাথার চুলের মতো চোখের পাপড়িও প্রাকৃতিক নিয়মে প্রতি ছয় থেকে ১০ সপ্তাহের ব্যবধানে ঝরে যায়। তাই পাঁচ থেকে ১০টা পাপড়ি পড়া স্বাভাবিক।
তবে পাপড়ি ঝরে হালকা হয়ে যাওয়ার সাথে বয়স বাড়ার সম্পর্ক রয়েছে। তাই বয়সের সাথে এই সমস্যা দেখা দিলে চিন্তিত হওয়ার কিছু নেই।
অতিরিক্ত চোখ ঘষা
মেইকআপের অবশিষ্টাংশ ভালো মতো পরিষ্কার করা উচিত। চোখের ক্ষেত্রেও কথাটা প্রযোজ্য।
তবে পরিষ্কার করতে যেয়ে বেশি ঘষা যাবে না।
এই বিষয়ে একই প্রতিবেদনে ত্বক-বিশেষজ্ঞ যুক্তরাষ্ট্রের মিনিয়াপলিস নিবাসী চিকিৎসক জেনি লিউ বলেন, “আপনি হয়ত নকল পাপড়ির আঠা আর মেইকআপ ভালো মতো তুলতে গিয়ে জোরে চাপ দিয়ে অনেকক্ষণ ঘষাঘষি করেন। তবে চোখ রগড়ানো বা ঘষার ক্ষেত্রে খুবই সাবধান থাকতে হবে। বিশেষ করে চোখের পাতা ও পাপড়ি বরাবর।”
আরেকটি কারণ হতে পারে ‘স্লিপ মাস্ক’ ব্যবহার করা।
মার্কিন সেলিব্রেটি রূপবিশেষজ্ঞ ক্লেমেন্টিনা রিচার্ডসন ব্যাখ্যা করেন, “সারারাত ধরে মাস্ক ব্যবহারের কারণে চোখের পাতায় যে চাপ সৃষ্টি হয় সেখান থেকে পাপড়ির ঘনত্ব পাতলা হয়ে যায়। এছাড়া মেয়াদোত্তীর্ণ প্রসাধনী ব্যবহারে ব্যাক্টেরিয়ার সংক্রমণ থেকেও এই সমস্যা দেখা দিতে পারে।”
অ্যালার্জির সমস্যা
যদি চোখের পাপড়ি পড়ে যাওয়ার সমস্যা দেখা দেয় তবে প্রসাধনীর উপকরণের তালিকার দিকে নজর দিন।
লিউ বলেন, “চোখের মেইকআপ, মেইকআপ রিমুভার, ত্বকের যত্নে নানান পণ্য এমন কি নেইল পলিশ থেকে সাধারণ ত্বকের সমস্যা দেখা দিতে পারে। আর সমস্যা অতিরিক্ত হলে চোখের পাপড়ি ঝরতে দেখা যায়।”
যদি মনে হয় কোনো পণ্য ব্যবহারের কারণে চোখের পাপড়ি পড়ছে তবে অ্যালার্জির পরীক্ষা করিয়ে নিশ্চিত হওয়ার প্রয়োজন রয়েছে।
নকল পাপড়ি ব্যবহার
চোখের পাপড়ি ঝরে যাওয়ার সম্মিলিত কারণে মধ্যে থাকতে পারে নকল পাপড়ি ব্যবহার করা।
“এই ধরনের নকল পাপড়ি লাগানোর জন্য যে আঠা ব্যবহার করা হয় সেটা থেকেই অ্যালার্জির সমস্যা দেখা দেয়। ফলে চোখের পাতার ত্বকে সমস্যা হওয়া থেকে পাপড়ি পড়ে যায়”- সতর্ক করে বলেন ডা. লিউ।
এছাড়া আঠা চোখের আসল পাপড়ির সাথেও লেগে থাকে। যদি সঠিকভাবে তোলা না হয় তবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় আসল পাপড়ি। তাই টানাটানি না করে নির্দিষ্ট রিমুভার ব্যবহার করার পরামর্শ দেন এই চিকিৎসক।
যখন ডাক্তার দেখানো উচিত
ওপরের কারণগুলো ছাড়া যদি চোখের পাপড়ি ঝরে যাওয়ার সমস্যা শুরু হয় তবে বিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হওয়ার দরকার রয়েছে। বিভিন্ন রোগের কারণেও এই সমস্যা দেখা দিতে পারে।
থাইরয়েডে সমস্যা
থাইরয়েড শরীরের হরমোন নিয়ন্ত্রণ করে। এই গ্রন্থিতে সমস্যা দেখা দিলে হরমোন অতিমাত্রায় সক্রিয় বা নিষ্ক্রিয় হয়। যা থেকে চোখের পাপড়ি ঝরে যাওয়ার সমস্যা দেখা দিতে পারে।
অন্যান্য সমস্যা মধ্যে থাকতে পারে ওজন বৃদ্ধি বা কমা, শরীর তাপমাতা ওঠা-নামা করা, উৎকণ্ঠা বৃদ্ধি পাওয়া কোষ্ঠকাঠিন্য।
ব্লেফারাইটিস
“এই সমস্যা হলে গ্রন্থি আটকে প্রদাহ তৈরি করে। ফলাফল চোখের পাপড়ি ঝরা। এটা দেখা দিতে পারে চাখের পাতায় অতিমাত্রায় ব্যাক্টেরিয়ার সংক্রমণ থেকে” ব্যাখ্যা করেন মার্কিন চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ অড্রি কুনিন।
তিনি আরও বলেন, “এক্ষেত্রে চোখের পাতা দেখতে ফোলা ও খসখসে লাগে, লালচে হয়, চোখ দিয়ে পানি পড়ে ও আঠালো অনুভূত হয়। চিকিৎসকের পরামর্শে ‘আই স্প্রে’ বা মলম ব্যবহারে পরিত্রাণ মেলে।”
ট্রিকোটিলোমেনিয়া
“মানসিক চাপ থেকে চোখের পাপড়ি টানার সমস্যাকে বলা হয় ‘ট্রিকোটিলোমেনিয়া”- বলেন ফ্র্যাঙ্ক।
গবেষণায় দেখা গেছে, সাধারণভাবে চুল টানার অভ্যাস হিসেবে চিহ্নিত এই সমস্যা ৫০ জনের মধ্যে একজনের মাঝে দেখা দেয়। এক্ষেত্রে মানসিক চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়ার প্রয়োজন পড়ে।
নির্দিষ্ট কিছু ক্যান্সার
অতি দুর্লভ কিছু ত্বকে ক্যান্সার রয়েছে যা চোখের পাতাতেই দেখা দেয়। যে কারণে চোখের পাপড়ি পড়ে- মন্তব্য করেন কুনিন।
তিনি পরামর্শ দেন, “কোনো আঘাত না সারা, ক্ষত ও চোখের পাতার খসখসে-ভাব না সারলে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে দ্রুত।”