শক্তিমান অভিনেতা মাসুদ আলী খান মারা গেছেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাহি রাজিউন)। বৃহস্পতিবার বিকেলে রাজধানীর গ্রিন রোডের নিজ বাসায় শেষনিশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। তার বয়স হয়েছিল ৯৫ বছর। তার মৃত্যুর খবর সমকালকে নিশ্চিত করেছেন তাকে দেখাশোনার দায়িত্বে থাকা রবিন মন্ডল।
তিনি বলেন, আজ বিকেল ৪টা ২০মিনিটে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। গোসল করানোর জন্য তার মরদেহ নেওয়া হয়েছে।
মাসুদ আলী খানের মরদেহ দাফন কখন ও কোথায় হবে এ বিষয়ে রবিন মন্ডল, অভিনেতার গ্রামের বাড়ির মানিকগঞ্জের সিংগাইরের পারিল গ্রামে। সেখানেই আগামীকাল বাদ জোহর তাকে দাফন করা হবে।
তিনি আরও জানান, অভিনেতার এক ছেলে যুক্তরাষ্ট্রে থাকেন। আগামী ১৩ নভেম্বর তার দেশে আসার কথা। আগামী দুই একদিনে মধ্যে তার আসা সম্ভব হচ্ছে না। তাই পরিবারের সবার সিদ্ধান্ত মোতাবেক কালই দাফন করা হচ্ছে।
বেশ কিছুদিন ধরে অসুস্থ ছিলেন এই বয়োজ্যেষ্ঠ শিল্পী। চিকিৎসার জন্য কয়েকবার নেওয়া হয়েছিল হাসপাতালে। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা চলছিল। বয়সের ভারে ঠিকমত হাঁটাচলাও করতে পারতেন না। । হুইল চেয়ারই ছিল তাঁর ভরসা। এ কারণে বেশির ভাগ সময় ঘরের ভেতরেই কাটাতে হতো তাকে।
মাসুদ আলী খানের মঞ্চে অভিনয় দিয়ে শুরু। ঢাকায় টেলিভিশন কেন্দ্র চালু হওয়ার পর ছোট পর্দায় অভিষেক। পাঁচ দশকের বেশি সময় ধরে প্রায় ৫০০ নাটকে বৈচিত্র্যময় চরিত্রে অভিনয় করে হয়ে উঠেছেন বাংলা নাটকের অতি পরিচিত মুখ।
মাসুদ আলী খানের জন্ম ১৯২৯ সালে ৬ অক্টোবর মানিকগঞ্জের পারিল নওধা গ্রামে। বাবা আরশাদ আলী খান ছিলেন সরকারি চাকরিজীবী। মা সিতারা খাতুন। মাসুদ আলী খান ১৯৫২ সালে উচ্চমাধ্যমিক পাস করেন। দুই বছর পর জগন্নাথ কলেজ থেকে বিএ পাস করেন। ১৯৬৪ সালে ঢাকায় টেলিভিশন কেন্দ্র স্থাপিত হওয়ার পরপর নূরুল মোমেনের নাটক ‘ভাই ভাই সবাই’ দিয়ে ছোট পর্দায় মাসুদ আলী খানের অভিষেক হয়। আর সাদেক খানের ‘নদী ও নারী’ দিয়ে বড় পর্দায় তাঁর পথচলা শুরু।
মাসুদ আলী খান ১৯৫৫ সালে বিয়ে করেন তাহমিনা খানকে। ব্যক্তিজীবনে এই অভিনেতার এক ছেলে ও এক মেয়ে। চাকরিজীবনে সরকারের নানা দপ্তরে কাজ করেছেন। ১৯৮৮ সালে বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশনের সচিব হিসেবে চাকরি থেকে অবসর নেন। পাঁচ দশকের বেশি সময় ধরে একের পর এক বৈচিত্র্যময় চরিত্রে অভিনয় করেছেন মাসুদ আলী খান।
তার অভিনীত কয়েকটি উল্লেখযোগ্য সিনেমা হচ্ছে ‘দুই দুয়ারি’, ‘দীপু নাম্বার টু’, ‘মাটির ময়না’। তার অভিনীত আলোচিত কয়েকটি নাটক হচ্ছে ‘কূল নাই কিনার নাই’, ‘এইসব দিনরাত্রি’, ‘কোথাও কেউ নেই’।