একজন দেশের প্রথমসারির গণমাধ্যমকর্মী। অন্যজন নাটকে এই সময়ের উঠতি নায়িকা। একজনের ক্যারিয়ার দুই যুগেরও বেশি সময়ের। অন্যজনের মাত্র বছর পাঁচ।
বৃহস্পতিবার দুপুর থেকেই আলোচনায় সাংবাদিক শফিক আল মামুন এবং টিভি অভিনেত্রী সাদিয়া আয়মান। উপলক্ষ্য, উঠতি এই নায়িকার একটি স্ট্যাটাস।
স্ট্যাটাসে সাদিয়া আয়মান অভিযোগ করেন, মাইক্রোফোন ঠিক করার সময় অনুমতি ছাড়া গোপনে তার ভিডিও ধারণ করেছেন শফিক আল মামুন। কিন্তু ভিডিওতে যা দেখা গেল তাতে এই দৃশ্য অনুমতি ছাড়া বিষয়টি একেবারেই মিথ্যা অভিযোগ।
অভিযোগকারী অভিনেত্রী স্ট্যাটাসের ১ ঘন্টার মাথায় আরেকটি স্ট্যাটাস দেন। যেখানে তিনি তৃপ্তির ঢেকুর তোলেন যে ওই সাংবাদিকের চাকরি গিয়েছে বলে। তবে অভিযোগের শুরু থেকেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সমালোচনার মুখে পড়েন এই টিভি নায়িকা।
ডেইলি স্টারের সাংবাদিক ও গীতিকার জাহিদ আকবর তার স্ট্যাটাসে লিখেছেন, যেটা একসঙ্গে বসে সমাধান করা যেত, সেটা চলে আসলো ফেসবুকে। শফিক আল মামুন যে গোপনে ভিডিও করতে পারেন না… সে বিশ্বাসের কথাও লিখেন তিনি। দীর্ঘদিনের সহকর্মীকে নিয়ে দীর্ঘ এক।
লেখা পোস্ট করেছেন আরেক সিনিয়র সাংবাদিক ও গীতিকার তানভীর তারেক। যে লেখার শেষে অভিশাপ দিয়েয়েছেন তিনি।
চ্যানেল ২৪ এর বিনোদন বিভাগের প্রধান নাজমুল আলম রানা লিখেছেন, আমি বিশ্বাস করি, শিল্পী আর বিনোদন সাংবাদিক একে অপরের পরিপূরক। একটা অনাকাঙ্ক্ষিত বিষয় নিয়ে যা হচ্ছে, তা মোটেও মেনে নেয়ার মতো না। শফিক আল মামুনের সঙ্গে যে ঘটনাটা ঘটেছে বিষয়টি খুবই দুঃখজনক।
একাত্তর টেলিভিশনের সিনিয়র রিপোর্টার বুলবুল আহমেদ জয় তার ফেসবুক পেজে লিখেন, মুখে শিল্পী বললেও কর্মে তার প্রকাশ নেই। নায়িকার অভিযোগটি যে একেবারেই ভিত্তিহীন, তা সরাসরি বলেন তিনি। অন্যদিকে যমুনা টেলিভিশনের সিনিয়র রিপোর্টার আহমেদ তাওকীরের প্রশ্ন, নায়িকা অভিযোগ করলেন আর সে অভিযোগ আমলে নিলো সাংবাদিকের অফিস…! সুষ্ঠ তদন্ত জরুরী ছিলো বলেও মনে করেন তিনি।
চ্যানেল টোয়েন্টিফোরের মাজহারুল ইসলাম তামিম লিখেছেন, সাংবাদিক- শিল্পীর সম্পর্ক যুগ থেকে যুগের। ভুল উপলবিদ্ধ করে দুজনকে সে সম্পর্ক টিকিয়ে রাখার পরামর্শ তার। শফিক আল মামুনের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে সাময়িক ভাইরাল হলেও তার দীর্ঘ হবে না বলে লিখেছেনডিবিসি নিউজের সিনিয়র রিপোর্টার সৌর বাপ্পার।
শফিক আল মামুন নাকি সাদিয়া আয়মান নেভাল ম্যাজিকে কে বেশি হিট…? সে প্রশ্ন ছুড়ে দিয়েছেন সিনিয়র সাংবাদিক রুদ্র হক।
কালবেলার বিনোদন বিভাগের প্রধান এ এইচ মুরাদ লিখেছেন, অথচ আমরা সব সময় শিল্পীদের পাশে দাঁড়িয়েছি। বিষয়টির সুন্দর সমাধান হতে পারত। শফিক আল মামুন ভাই দীর্ঘ ক্যারিয়ারে এমন পরিস্থিতির মধ্যে পড়তে হবে হয়তো তিনি কল্পনাও করতে পারেননি। আল্লাহ সবাইকে ভালো রাখুন।
প্রতিবাদ জানিয়ে রাইজিং বিডির সিনিয়র রিপোর্টার রাহাত সাইফুল বলেন, শিল্পীদের পাশে সবসময় সাংবাদিক থাকেন। একই অঙ্গনে চলতে গিয়ে ভুল বোঝাবুঝি হতে পারে। তার সুন্দর সমাধানও হবে। কিন্তু মামুন ভাইয়ের সঙ্গে যা হয়েছে তা কাম্য নয়।
নিউজ টোয়েন্টিফোরের ফাতেমা কাউসারের দাবি, ভাইরালের নেশায় এমনটা করেছেন সাদিয়া আয়মান। অন্যদিকে আরেক নারী সাংবাদিক মেহনাজ স্ট্যাটাসে ঘোষণা দেন, নিজের সম্মান হারানোর ভয়ে তিনি কখনোই উঠতি এই নায়িকার সাক্ষাৎকার নেবেন না। একই সিদ্ধান্তের কথা ফেসবুকে জানান, বাংলা ভিশনের রিপোর্টার হাসনাত জুবাইর।
শুধু যে গণমাধ্যমকর্মীরাই সমালোচনা করছেন তা নয় অভিনয়শিল্পীরাও সোচ্চার হয়েছেন। সাদিয়া আয়মানের এমন কাণ্ডে। অভিনেত্রী শ্রাবন্তী পুরো বিষয়টি একটা দুর্ঘটনা মনে করে লিখেছেন, শফিক আল মামুন এমন মানুষ নন, আলোচনার মাধ্যমে বিষয়টি সমাধান করার কথা বলে এই অভিনেত্রী দুজনকে জানান শুভকামনা।
অভিনেত্রী তাসনুভা তিশাও এ ঘটনায় মামুনের পক্ষ হয়ে প্রতিবাদ জানিয়ছেন।
এদিকে অভিনেতা মিশা সওদাগর লিখেছেন, সাংবাদিক এবং শিল্পী একে অপরের পরিপূরক। ছোটখাটো ভুল ত্রুটি সংশোধন করে নেয়াই ভালো বলে মনে করেন তিনি। একজন শিল্পীর মন আকাশের মত হওয়া উচিৎ বলে মনে করেন, চিত্রনায়ক জিয়াউর রোশান। স্ট্যাটাসে তিনি লিখেন, এ রকম একটা লেইম এবং ছোট ইস্যুতে একজন সম্মানীয় সাংবাদিককে ছোট করার মোটিভ থাকাটা কখনোই একজন শিল্পীর শোভা পায় না।
১৯৯৮ সালের ১৭ মার্চ জন্ম নেয়া এই সাইদয়া আয়মান ৫ বছরের ক্যারিয়ারে যতটা নাম আর দ্যুতি ছড়িয়েছে তার চেয়েও বেশি আলোচনা আর সমালোচনার জন্ম দিয়েছেন এই স্ট্যাটাস কাণ্ডে। ঘুরে ফিরে সবার একটাই কথা, ভিডিওটি যেমন গোপনে ধারণ করা নয় তেমনি নয় আপত্তিকর।