দুই ছেলেমেয়ে নিয়ে মায়ের সঙ্গে থাকেন ময়না বেগম (৩৫)। মা পিয়ারা বেগমের ভিক্ষাবৃত্তিতেই চলে চার পেটের খোরাক। একবেলা খেলে আরেক বেলা অনাহারে থাকতে হয়। ময়না বেগমের স্বামী থেকেও নেই। খোঁজ নেন না ৪-৫ মাস।
সংসারের এ টানাপোড়েনের মধ্যে রোববার (২৬ ফেব্রুয়ারি) একসঙ্গে তিন কন্যাসন্তান জন্ম দিয়েছেন ময়না বেগম। এতে যেন অথৈ সাগরে পড়েছেন স্বামী পরিত্যক্তা এ নারী। সন্তান তিনটির ভবিষ্যৎ নিয়ে নিশ্চিত তিনি।
বাগেরহাটের শরণখোলা উপজেলার দক্ষিণ রাজাপুর ভোলারপাড় গ্রামের মৃত ছায়েদ তালুকদারের মেয়ে ময়না বেগম। তিনি পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ার জামাল হাওলাদারের স্ত্রী।
স্থানীয় ও পরিবার সূত্র জানায়, শনিবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে প্রসব বেদনা নিয়ে শরণখোলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হন ময়না বেগম। রোববার সকাল ৯টায় হাসপাতালে নরমাল ডেলিভারির মাধ্যমে তিনি তিন কন্যাসন্তান জন্ম দেন। বর্তমানে মা ও নবজাতকরা সুস্থ আছেন। তবে নবজাতকদের ওজন কম বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।
নবজাতকদের নানি পিয়ারা বেগম (৬৫) বলেন, ‘আমি ভিক্ষা করে সংসার চালাই। মেয়ের গর্ভের বয়স যখন পাঁচ মাস তখন ওর জামাই চলে যায়। এরপর আর আসেনি। সেই থেকে আমি দুই নাতি ও অসুস্থ মেয়েকে নিয়ে কোনো রকম খেয়ে না খেয়ে থেকেছি। এখন আবার একসঙ্গে তিন নাতনি হয়েছে। কীভাবে ওদের বড় করবো তা নিয়ে চিন্তায় আছি।’
ময়না বেগমের বোন রাশিদা বেগম বলেন, ‘আমরা পাঁচ বোন সবাই অসহায়। কেউ কাউকে সাহায্য করার মতো সামর্থ্য নেই। তবে শিশু তিনটিকে অনেকেই নিতে চাচ্ছেন। তবে এখনো চিন্তা করিনি কী করবো।’
শরণখোলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. প্রিয় গোপাল বিশ্বাস বলেন, ‘তিনটি বাচ্চা খুব ভালোভাবে ডেলিভারি হয়েছে। কিন্তু ওদের ওজন কম। তাই ইনফেকশনের ঝুঁকি রয়েছে। এজন্য বেবি ইনকিউবেটরে পাঠানো হয়েছে। বাচ্চার মা সুস্থ আছেন।’
এ তিন নবজাতক ছাড়াও ময়না বেগমের ৭ বছর বয়সী এক ছেলে ও চার বছর বয়সী এক মেয়ে রয়েছে।
শরণখোলা উপজেলা চেয়ারম্যান বোরহান উদ্দিন শান্ত বলেন, হাসপাতালে গিয়ে আমি নবজাতকদের দেখে এসেছি। আমার পক্ষ থেকে তাদের চিকিৎসার জন্য যতটুকু সহায়তা করা দরকার তা করবো।