২০২৪-২৫ অর্থবছরে খুলনা অঞ্চলের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর (ডিএই) ৯৩৭ হেক্টর পতিত জমিতে মোট ৫৬ লাখ ৩৬ হাজার ২০টি সজনে (মরিঙ্গা) চারা রোপণের লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে, যা আগের বছরের তুলনায় ৭১ শতাংশ বেশি।এই উদ্যোগের মাধ্যমে পতিত জমির সদ্ব্যবহার, পারিবারিক পুষ্টি নিশ্চিতকরণ, মাটির ক্ষয়রোধ এবং পরিবেশ সংরক্ষণের লক্ষ্য পূরণ করা হবে বলে জানিয়েছেন খুলনা জোনের ডিএই-এর অতিরিক্ত পরিচালক মোঃ রফিকুল ইসলাম।ডিএই সূত্রে জানা গেছে, খুলনা, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা এবং নড়াইল জেলার প্রায় ১১ লাখ ২৭ হাজার ২০৪ জন কৃষক জুন থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তাদের পতিত জমিতে প্রত্যেকে ৫টি করে সজনে চারা রোপণ করবেন।উদ্যোগের অংশ হিসেবে ইতোমধ্যে রাস্তার পাশে ও ফাঁকা জায়গায় ২৭,০০০ হাইব্রিড জাতের (ODC-3) কাটিং চারা রোপণ শুরু হয়েছে। এ জাতটি অধিক ফলনশীল বলে জানিয়েছে ডিএই।বাগেরহাট জেলার শরণখোলা ও মোরেলগঞ্জ উপজেলায় গত সপ্তাহে আনুষ্ঠানিকভাবে এই রোপণ কার্যক্রম শুরু হয় এবং তা মে মাস পর্যন্ত চলবে।এর পাশাপাশি ৫৬,৯২০টি উন্নত দেশি জাতের সজনে চারা আগামী জুন থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত রোপণের পরিকল্পনা রয়েছে, যা মৌসুমভিত্তিক চাষের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ।রফিকুল ইসলাম বলেন, “কেবল গাছ রোপণ নয়, কৃষকরাই এসব গাছের পরিচর্যার দায়িত্বও পালন করবেন।”বৃহস্পতিবার সরেজমিন পরিদর্শনে দেখা গেছে, খুলনা-মংলা রেলপথের পাশে চরা, সচিবুনিয়া এবং ঝরোভাঙ্গা গ্রাম পর্যন্ত তিন কিলোমিটারজুড়ে ODC-3 জাতের সজনে কাটিং চারা রোপণ চলছে।জেলা প্রশিক্ষণ কর্মকর্তা মহাদেব কুমার সাহা জানান, বসবাস বা নির্মাণের অনুপযুক্ত এলাকাগুলো এই কৃষিভিত্তিক প্রকল্পের জন্য বেছে নেওয়া হয়েছে। বুধবার সকালে আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের মাধ্যমে প্রকল্পটি শুরু হয়।স্থানীয় রূপসা উপজেলার মনিরুল ইসলাম, রিপন হোসেন, মনি মোহন মণ্ডল, সাধন রায় ও কাকলী জানান, সজনে গাছের পাতা, ফুল ও ডাটা—সব কিছুতেই রয়েছে পুষ্টিগুণ ও ঔষধি গুণ। তাই এ উদ্যোগে তারা অত্যন্ত আনন্দিত।খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের এগ্রো টেকনোলজি ডিসিপ্লিনের অধ্যাপক ড. মনিরুল ইসলাম বলেন, “মরিঙ্গা ওলেইফেরা হচ্ছে স্পিরুলিনার পরে বিশ্বের দ্বিতীয় সর্বোৎকৃষ্ট সুপারফুড।”তিনি আরও বলেন, “এটি মাইক্রোনিউট্রিয়েন্টে ভরপুর এবং মানবদেহের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।”খুলনা ডায়াবেটিক অ্যাসোসিয়েশনের পুষ্টিবিদ ফারহানা আক্তার বলেন, “সজনে পাতা ও বীজ গত চার দশক ধরে ঔষধি হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে এবং এটি একটি মূল্যবান রপ্তানি পণ্য। এটি জয়েন্ট পেইন, ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে কার্যকর।”ডা. জাহিদুল ইসলাম বলেন, “সজনে পাতার গুঁড়ো প্রাকৃতিক ব্যথানাশক হিসেবে কাজ করে। এটি পেশি পুনরুদ্ধার, রক্তচাপ ও কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে এবং শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় ভিটামিন ও খনিজ সরবরাহ করে।”তিনি যোগ করেন, “রসায়নভিত্তিক ব্যথানাশক ওষুধের বিপরীতে, সজনে প্রাকৃতিক উপায়ে আরাম দেয় এবং কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই।”ডা. জাহিদ আরও বলেন, “সজনে কেবল ঔষধিগুণসম্পন্ন নয়, বরং একটি সুস্বাদু ও বহুমুখী সবজি। বিশেষ করে এর পাতা ডাল রান্নায় ব্যবহৃত হয়, যা পুষ্টিকর ও স্বাদের জন্য স্থানীয় খাবারের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উপাদান।”
খুলনা অঞ্চলে ৫৬.৩৬ লাখ সজনে চারা রোপণের উদ্যোগ নিয়েছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর

সিনিয়র এডিটর
Leave a comment
সর্বশেষ
- Advertisement -


