সাকিবুর রহমান
খুলনা নগরীর নিউ মার্কেটের পাশে অবস্থিত বায়তুন নূর জামে মসজিদের সামনে বিগত ৫ বছর বসছে খুলনার সবচেয়ে বড় স্ট্রিটফুডের পসরা। স্বল্প দামে বাহারী খাবারের স্বাদ নিতে সেখানে প্রতিদিন ভিড় করেন হাজারো মানুষ। ঈদের ছুটিতে সেই ভীড় বেড়েছে আরো। কম দাম ও মানে ভালো হওয়ার কারণে নিম্ন ও মধ্য আয়ের ক্রেতাদের পাশাপাশি কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের কাছেও নিউ মার্কেট এরিয়ার এ খাবারের দোকান এখন তুমুল জনপ্রিয়।
নিউমার্কেটের অস্থায়ী এসব খাবার দোকানীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, শুধুমাত্র শিক্ষার্থী ও মধ্যবিত্তের কথা ভেবেই তারা বিভিন্ন প্যাকেজ চালু করে। যেমন ৭টি আইটেম ১০০ টাকা। কিন্তু বর্তমানে এখানে শহরের উচ্চবিত্তরাও ভীড় করছেন। কারণ খাবারের মান দামের তুলনায় অনেক ভালো।
প্রায় ৫০-৬০টি খাবারের দোকান নিয়ে নিউ মার্কেটের এ দোকানে মূলত বিকেল থেকেই ভীড় বাড়তে শুরু করে যা চলে রাত ১১টা থেকে সাড়ে ১১টা পর্যন্ত।
মঙ্গলবার সরেজমিনে নিউ মার্কেট এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, ভ্যানের (ফুড কার্ট) ওপর বিভিন্ন ধরনের খাবারের দোকান বসানো হয়েছে। ফাস্টফুড থেকে শুরু করে ফুচকা, বিভিন্ন ধরনের জুস, আইসক্রিম, বিরিয়ানি, দেশি পিঠা, নেপালি মমো সবই পাওয়া যায় এখানে। অর্ডার নিয়ে অপেক্ষমাণ ক্রেতাদের সামনেই খাবার তৈরি করে দেন বেশিরভাগ দোকানী। সন্ধ্যার পর সেখানে পা ফেলাই কষ্ট হয়ে যায়।
বিশেষ করে খুলনা শহরের শিক্ষার্থীদের কাছে তুমুল জনপ্রিয় নিউমার্কেটের অস্থায়ী এসব দোকানের খাবার।
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের শিক্ষার্থী আবরার ফয়সাল বন্ধুদের নিয়ে এসেছেন রাতের খাবার খেতে। তিনি জানান, সময় পেলেই খেতে আসি এখানে। কখনো বন্ধুদের নিয়ে কখনো বা একাই। এখানে আসার অন্যতম কারণ খাবারের দাম নাগালের মধ্যেই।
এখানের জনপ্রিয় চাইনিজ খাবারের পাশাপাশি হালিম, নিহারি, টিকিয়া, কাবাব, চুইঝালের নানান পদ, জনপ্রিয় নাগা ফুসকা, এবং খুলনা নিউমার্কেটের বিখ্যাত ডিম ঘুটা। আছে ঝালমুড়ি, বেগুনি, পুরি, আলুর চপ, ডিমের চপ, পেঁয়াজু। তেমনই স্থান করে নিয়েছে ১২০ টাকায় বাসমতীর চিকেন বিরিয়ানি এবং ১৮০ টাকায় বিফ বিরিয়ানি।
খুলনার বিখ্যাত ডিম ঘুটা দোকানের মালিক ফারুখ ফরাজি বলেন, এই খাবারটা আমি ভারত থেকে বানানো শিখে খুলনায় বিক্রি শুরু করি। শুরুতে মানুষ কৌতুহল নিয়ে খেলেও বর্তমানে সবাই এর ভিন্নধর্মী স্বাধের জন্যই খাচ্ছেন। ২০ টা থেকে ২০০ টাকা পর্যন্ত ডিম ঘুটা পাওয়া যায় আমার এখানে। আর ছাত্রছাত্রীরাই মূলত এখানে আসে তবে এখন দেশের নানান প্রান্ত থেকেই অনেক আসেন আমার খাবারের স্বাদ নিতে।
শুধু যে দেশিও খাবারের মধ্যে আটকে আছে তা নয়। এখানে পাওয়া যাচ্ছে বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন স্বাদের ফাস্ট ফুড আইটেম যেমন, মাশরুম পিজ্জা, চিকেন পিজ্জা, চিকেন বার্গার, চিকেন শর্মা, চিকেন পাস্তা, সাব স্যাডুইচ, চিকেন সুপ, কর্ণ সুপ, অনথন, ফ্রেস্ন ফ্রাই, চিকেন ফ্রাই, ফ্রাইড রাইচ, নুডলস, দোসা, রোলার কস্ট ফ্রুটস আইসক্রিম।
খাবারের দোকান ঘুরে দেখা যায় এখানে ফাস্টফুডের দোকানে সবচেয়ে ভীড় তারপর বিভিন্ন ধরনের ফুচকার দোকানেও প্রচন্ড ভীড়। চিকেন বার্গার ৭০ টাকা, চিজ বার্গার ১০০টাকা, চিকেন পাস্তা ৭০টাকা। এছাড়া বিভিন্ন ধরনের কম্বো আইটেম এখানে বেশ জনপ্রিয়।
লাজিজ কিচেনের মালিক মোহাম্মদ আকরাম আলী জানান, ছাত্রছাত্রীদের কথা ভেবে আমরা ৭টি আইটেমের একটি কম্বোপ্যাক চালু করি মাত্র ১০০টাকায়। পরবর্তীতে এখানে অন্যান্য দোকানেও এই ধরনের কম্বোপ্যাক চালু হয় কাস্টমারের চাহিদার কারণে। আগে ছুটির দিনগুলোতে ভীড় হলেও বর্তমানে প্রায় প্রতিদিনই ক্রেতাদের ভীড় লেগেই থাকে।
ছোট্ট এই জায়গাটিতে রয়েছে প্রায় শতাধিক ফুড কার্ট। প্রতিটি কার্টে দৈনিক ৭ থেকে ৮ হাজার টাকার খাবার বিক্রি হয় বলে জানান বিক্রেতারা।
খুলনা মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থী মাহাদি হাসান টিউশনের শেষে এখানে এসেছেন খাবার খেতে। তিনি জানান, সন্ধ্যার নাস্তা হিসেবে কোনো রেস্তোরাঁ না গিয়ে প্রায়ই এই ফুড কোর্টে আসেন।
এখানে অল্পদামে নানা রকম সুস্বাদু মজার আর বাহারি খাবার পাওয়া যায়। যা আমাদের পেট ও মন দু’টোই খুব সহজে ভরিয়ে দেয়। যে কারণে বড় রেস্টুরেন্টে খুব একটা যাওয়া হয়না, বলেন তিনি।
পরিবারের ছোটবড় সবাইকে নিয়ে খাবার খেতে আসা স্কুল শিক্ষিকা রুকসানা আনজুম বলেন, খাবার আমাদের সামনেই তৈরি করে দিচ্ছে। কি দিয়ে, কিভাবে তৈরি করছে তা নিজেরাই দেখতে পাচ্ছি। তাই খাবার এর মান নিয়ে ভাবছি না। বাচ্চারাও এখানে আসতে ভালোবাসে কারণ একইস্থানে অনেক রকমের খাবার পাওয়া যায়।
পুরো ফুডকোর্ট ঘুরে দেখা গেছে, সেখানে খাবারের সঙ্গে বিভিন্ন স্বাদের পানিও পাওয়া যায়। এর মধ্যে আছে আখের রস, চা-কফি, বিভিন্ন ফ্লেভারের মিল্কসেক, লাচ্ছি, মাল্টা এবং কাঁচা-পাকা আমের জুস। এখানে জিরা পানি, লেবু পানি বা মহিতো এক অন্য রকম স্বাদ এনে দিয়েছে। তবে তেঁতুল চা বাড়তি আকর্ষণ তৈরি করেছে ভোজন রসিকদের মাঝে।
বিকালে মসজিদের পাশে খাবারের জন্য অপেক্ষা করছিলেন খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৫/২০ জন শিক্ষার্থী। ভার্সিটির ক্লাস শেষ করে তারা এসেছেন এখানে। তাদের মধ্যে আফিয়া মাকসুদা জানান, বন্ধুরা মিলে একসঙ্গে খাওয়ার আনন্দ অন্য রকম। এখানে খাবারের দাম কম, স্বাদও ভালো। সারাদিন বোরিং ক্লাস শেষে খাওয়া এবং আড্ডা দেওয়া জন্য এ-ই জায়গাটাই বেস্ট।
দাম ও পরিবেশের কারণে প্রায় প্রতিদিনই এখানে খাবারের স্বাদ নিতে আসেন খুলনা শহরের বিভিন্ন জায়গার মানুষ। তবে ছুটির দিনগুলোতে ভীড় বেড়ে জমজমাট ব্যবসা হয় বলে জানালেন ব্যবসায়ীরা।