খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার ভদ্রা ও হরি নদীর পাড়ের ১৪টি অবৈধ ইটভাটার কার্যক্রম বন্ধসহ উচ্ছেদ অভিযান চালানো হচ্ছে। হাইকোর্টের নির্দেশনা বাস্তবায়নে প্রশাসন এই উচ্ছেদ অভিযান চালাচ্ছে।
খুলনা জেলা প্রশাসক খন্দকার ইয়াসির আরেফিন বৃহস্পতিবার (২ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে উচ্ছেদ অভিযান পরিদর্শন করেন। এর আগে গত বুধবার থেকে উচ্ছেদ অভিযান শুরু হয়েছে।
বিষয়টি নিশ্চিত করে জেলা প্রশাসক বলেন, আইনের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে অবৈধ ইটভাটা অপসারণের কাজ চলছে। এতে দুই নদীর স্রোত আবার আগের মতো হয়ে যাবে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, দুই যুগেরও বেশি সময় ধরে ডুমুরিয়া উপজেলার খর্ণিয়া ও রুদাঘরা ইউনিয়নের পশ্চিমপাশে বহমান ভদ্রা ও হরি নদীর দুইপাশে ব্যক্তি মালিকানার জমির সঙ্গে নদীর চর দখল করে এলাকার প্রভাবশালীরা বেশ কয়েকটি ইটভাটা গড়ে তোলেন। এ ঘটনায় পরিবেশের ঝুঁকির কথা বিবেচনা করে ২০২১ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের (এইচআরপিবি) সিনিয়র আইনজীবী মনজিল মোরসেদ হাইকোর্টে একটি রিট করেন।
ওই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ ডুমুরিয়া উপজেলার ভদ্রা ও হরি নদী দখল করে অবৈধভাবে গড়ে তোলা ১৪টি ইটভাটার মধ্যে থাকা সরকারি নদীর জায়গা থেকে ইটভাটা উচ্ছেদ/অপসারণ করে জমি অবমুক্ত করার জন্য খুলনা জেলা ও ডুমুরিয়া উপজেলা প্রশাসনকে নির্দেশ দেন। কিন্তু আদালতের সেই আদেশ যথাযথভাবে প্রতিপালন না হওয়ায় গত বছরের ৭ ডিসেম্বর রিটকারী আইনজীবীর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্ট খুলনা জেলা প্রশাসক ও ডুমুরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে সশরীরে আদালতে উপস্থিত হয়ে জবাব দেওয়ার নির্দেশনা দেন।
জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা গত ১০ জানুয়ারি আদালতে উপস্থিত হয়ে এফিডেভিটের মাধ্যমে ক্ষমা প্রার্থনা করেন। এরপর বিচারপতি জে বি এম হাসান ও রাজিক আল জলিলের হাইকোর্ট বেঞ্চ ওই ১৪টি অবৈধ ইটভাটা অপসারণ করে নদীর জায়গা অবমুক্ত করে আগামী ৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে আদালতে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন। এরপর ইটভাটা মালিকপক্ষ সময় চেয়ে উচ্চ আদালতে একাধিক আবেদন করলেও তা খারিজ করে দেওয়া হয়।
তারই পরিপ্রেক্ষিতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানুয়ারি মাসে ওইসব ভাটার মধ্যে থাকা সরকারি জমির সীমানা নির্ধারণ করা হয়। এরপর বুধবার সকাল থেকে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযান শুরু হয়।
প্রথমে খর্ণিয়া ব্রিজ সংলগ্ন ‘নুরজাহান ব্রিকসের চিমনি ও চুল্লি ভাঙা হয়। এরপর এক এক করে কেপিবি ব্রিকস, এসবি ব্রিকস, কেবি-২ ব্রিকস, সেতু-১ ব্রিকস, এফ এম বি ব্রিকস, কেবি-২ ব্রিকসের অবৈধ স্থাপনা সরিয়ে নেওয়ার কাজ শুরু হয়।
এ প্রসঙ্গে নুরজাহান ব্রিকসের মালিক শাহাজান জমাদ্দার বলেন, হাইকোর্টের নির্দেশ মেনে আমার ইটভাটার মধ্যে সরকারি জমির ওপর থাকা স্থাপনা নিজেই শ্রমিক দিয়ে সরিয়ে নিচ্ছি।
এ বিষয়ে ডুমুরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শরীফ আসিফ রহমান বলেন, আদালতের নির্দেশনা মোতাবেক আমরা এরইমধ্যে ওই ১৪টি ইটভাটার কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছি। তাছাড়া সিএস রেকর্ড অনুযায়ী নদীর জমি চিহ্নিত করে তা উদ্ধার করতে আজ ছয়টি ইটভাটার অংশ বিশেষ ও দুটির চিমনি ভাঙা হয়েছে। অভিযান অব্যাহত আছে।