সাকিবুর রহমান
পবিত্র ঈদ-উল-ফিতর ঘনিয়ে আসতেই ঈদের নামাজের অন্যতম অনুষঙ্গ নতুন পাঞ্জাবি, আতর, টুপি, জায়নামাজ বিক্রির ধুম পড়েছে খুলনার ঈদের বাজারে। নতুন পোশাক কেনার পর ক্রেতারা ভিড় জমাচ্ছেন টুপি, আতর আর জায়নামাজের দোকানে।বছরের অন্যান্য সময়ের তুলনায় যদিও রমজানের শুরু থেকেই টুপি-আতর-তসবি-জায়নামাজের বিক্রি বেড়ে যায় তবে মূলত ১৫ রমজানের পর থেকেই আতর, টুপি, তসবিহ ও জায়নামাজের দোকানে বিক্রি জমে উঠতে শুরু করে যা চলে ঈদের নামাজের আগ পর্যন্ত।বুধবার (২৬ মার্চ) নগরীর ডাকবাংলো মার্কেটে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় এসব প্রসাধনীর দোকানে ক্রেতাদের ব্যাপক ভিড়।নগরীর ডাকবাংলো মসজিদের উত্তর গেট, দক্ষিণের গেট-সংলগ্ন ফুটপাতের দোকানগুলোতে বিভিন্ন দামের বিভিন্ন ধরনের সুগন্ধির সঙ্গে পাওয়া যাচ্ছে টুপি, তসবি, সুরমা ও জায়নামাজ আতর। ঈদকে সামনে রেখে এসব পণ্যের বিক্রি বিক্রি বেশ জমে উঠেছে। দেশে তৈরি টুপির সঙ্গে পাকিস্তানি, আফগান, চীনা, ভারতীয়, দুবাই, মালয়েশিয়া ও তুরস্কের তৈরী টুপিও পাওয়া যাচ্ছে বিভিন্ন দোকানে। দেশে তৈরি সাধারণ একেকটি গোল টুপির দাম ৭০ থেকে ২০০ টাকা। সুতি টুপির দাম ৬০ থেকে ২৫০ টাকা।বিদেশি একেকটি টুপি ৩৫০ থেকে ১৫০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। টুপির ডিজাইন বৈচিত্র্যের কারণে দামে তারতম্য লক্ষ করা যাচ্ছে। জরির কাজ করা গোল টুপি বা তুরস্কের উঁচু টুপির তুলনায় সুতার জালি টুপি ও উলের টুপির দাম তূলনামূলক কিছুটা কমে পাওয়া যাচ্ছে।দেশের বাজারের বেশির ভাগ আতর মধ্যপ্রাচ্য থেকে আমদানি করা হলেও বর্তমানে বাংলাদেশের তৈরি নানা ব্র্যান্ডের আতর পাওয়া যাচ্ছে বাজারে। আম্বার, হুগো বস, গুচি, রোমান্স, সিলভার, মেশক আম্বার, রোজ আইটেম দরকার, জান্নাতুল ফেরদৌস ইত্যাদি বিদেশি আতরের কদর লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এ ছাড়া একেবারে দেশি ব্র্যান্ড হিসেবে বাজারে আছে ‘উদ’ বা ‘আগর’ নামের আতর।দেশের বাজারে সাধারণত জেসমিন, হাসনা হেনা, রজনীগন্ধা, এক্সকাচি বেলি, সিলভার, চকোলেট মাক্সসুলতান, আমির আল কুয়াদিরাজা ওপেন, জান্নাতুল ফেরদৌস, রয়েল, তরেঞ্জ, সফট, লর্ডনিভিয়া মেন, রয়েল ম্যাবরেজজপি, রাসা, আল ফারিসবেস্ট, ফিগো, হাজরে আসওয়াদ নামের আতর বেশি বিক্রি হয়।ডাকবাংলা বাজারের আতর বিক্রেতা মো. আবু জাফর বলেন, ‘ঈদ যত কাছে আসছে, আমাদের বেচাকেনা বাড়ছে। নানা ধরনের আতরের সুবাসের মধ্যে বড়রা একটু কড়া গন্ধের নিলেও তরুণেরা নিচ্ছেন হালকা সুবাসের আতর।আতরের ছোট বোতলের দাম ৮০ টাকা থেকে শুরু করে ৫০০ টাকার মধ্যে। আর বড় বোতল পাওয়া যাচ্ছে ৫০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকার মধ্যে। এ ছাড়া বিত্তবান ক্রেতাদের জন্য রয়েছে ২ হাজার থেকে শুরু করে ২০ হাজার টাকার আতরও।অন্যদিকে, এবার দেশের বাজারে বিদেশি জায়নামাজের পাশাপাশি দেশি জায়নামাজের আধিক্য লক্ষ্য করা যাচ্ছে। তুরস্ক, আফগানিস্তান, পাকিস্তান এমনকি বেলজিয়ামের জায়নামাজও পাওয়া যাচ্ছে বাংলাদেশে। রং-নকশা এবং কাপড়ের মান ভেদে বৈচিত্র্যপূর্ণ সব জায়নামাজ কিনতে খরচ করতে হবে ৮৫০ থেকে ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত। দেশীয় জায়নামাজের দাম অবশ্য কিছুটা কম। দেশি একেকটি জায়নামাজের দাম রাখা হচ্ছে ৫০০ থেকে ২ হাজার টাকা পর্যন্ত। কাপড়ের কোমলতা আকার ও ডিজাইনের মানের কারণেই দামের এ তারতম্য বলে জানাচ্ছেন বিক্রেতারা।দৌলতপুর বাজার মসজিদ সংলগ্ন টুপি বিক্রেতা বিক্রেতা নুর নবী জানান, তুরস্ক, ভারত, সৌদি আরব, কাতার, মালয়েশিয়া থেকেও টুপি আসে। নকশা, কাপড়ভেদে ১০০ টাকা থেকে ১০ হাজার টাকা দামের টুপিও পাওয়া যায়। ১৫০ টাকা থেকে দুই হাজার টাকার মধ্যে চিনা ও পাকিস্তানি টুপি পাওয়া যায়। চিনা টুপি ১৫০ থেকে ৩৫০ টাকা, পাকিস্তানি টুপি ১৫০ থেকে ৬৫০ টাকা, ভারতীয় টুপি ৮০ থেকে ৮০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।এর মধ্যে চিনের ওয়ানি ৬৫০ টাকায়, ভারতের গুজরাটি ২৫০ থেকে ৩০০ টাকায়, সিডনি ৪০০ টাকা, পাঠান ৪৫০ টাকা এবং ছোট পুঁতির সাথে সোনালি কাজ করা প্রতিটি টুপি বিক্রি হচ্ছে ৪০০ থেকে এক হাজার টাকার মধ্যে। এছাড়া নেটের তৈরি চিনা টুপি ১৫০ টাকা ও তুর্কির টুপি ৫০ থেকে ১০০ টাকায় দোকানিরা বিক্রি করছেন বলে জানান তিনি ।নগরীর নিউমার্কেটে টুপি কিনতে আসা ক্রেতা আজিজুল ইসলাম জানান, আমি আমার ৫ বছর বয়সী ও ৭ বছর বয়সী দুই ছেলের জন্য টুপি নিতে এসেছি। ওদের জন্য লম্বা টুপি কিনেছি আর আমি গোল টুপি কিনেছি ঈদের নামাজের জন্য।ঈদকে সামনে রেখে নগরীর বিভিন্ন স্থানে অস্থায়ী এসব দোকান বসেছে। নিরালা তাবলীগ মসজিদের সামনের অস্থায়ী দোকানে জায়নামাজ কিনতে এসেছেন গল্লমারি এলাকার বাসিন্দা সিরাজুল আলম। তিনি বলেন, আমি বিদেশি জায়নামাজ কিনতে এসেছিলাম কিন্তু দাম বেশি থাকার কারণে এখন দেসে তৈরি জায়নামাজ কেনার জন্য দেখছি। দাম হিসেবে অনেক ভালো দেশে তৈরি এসব জায়নামাজ।বছরের অন্যান্য সময়ের তুলনায় ঈদের ঠিক আগমূহুর্তে জমে ওঠা এসব দোকানে কেনাবেচা চলবে ঈদের নামাজের আগ পর্যন্ত।