খুলনায় বাংলাদেশ নৌবাহিনীর জাহাজ ‘বানৌজা বিশখালী’র কমিশনিং অনুষ্ঠিত হয়েছে। আজ শনিবার সকালে খুলনার বানৌজা তিতুমীরে এ কমিশনিং অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি নৌবাহিনী প্রধান অ্যাডমিরাল এম নাজমুল হাসান জাহাজটির অধিনায়কের কাছে কমিশনিং ফরমান তুলে দেন এবং আনুষ্ঠানিকভাবে নামফলক উন্মোচন করেন।
বাংলাদেশ নৌবাহিনীকে একটি আধুনিক, শক্তিশালী ও সক্ষম বাহিনী হিসেবে গড়ে তোলার আশাবাদ ব্যক্ত করে নৌবাহিনীপ্রধান, ‘আমাদের মাতৃভূমির স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা, অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং সর্বোপরি ভূরাজনৈতিক প্রয়োজনে একটি শক্তিশালী নৌবাহিনী অপরিহার্য। নৌবহরের সক্ষমতা বৃদ্ধির ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশ নৌবাহিনী আজ এক সুদক্ষ ত্রিমাত্রিক বাহিনীতে পরিণত হয়েছে। নিজস্ব প্রযুক্তিতে নির্মিত জাহাজ “বানৌজা বিশখালী” নৌবাহিনীর সক্ষমতার আরেকটি মাইলফলক।’
অ্যাডমিরাল এম নাজমুল হাসান বলেন, নৌবাহিনীর অন্যান্য যুদ্ধজাহাজের মতো ‘বানৌজা বিশখালী’ জাহাজটি দেশের নদী ও সমুদ্রসীমার চোরাচালান প্রতিরোধ, উপকূলীয় এলাকায় টহল প্রদান, অবৈধ মৎস্য আহরণ প্রতিরোধ, বাণিজ্যিক জাহাজকে জলদস্যুর কবল থেকে নিরাপত্তা প্রদান, মাদকদ্রব্যসহ নিষিদ্ধ বস্তুর অনুপ্রবেশ রোধকরণ, উদ্ধার অভিযান পরিচালনা করাসহ অপারেশনাল কর্মকাণ্ডে নিয়োজিত থেকে দেশসেবায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করবে।
প্রধান অতিথির বক্তৃতায় নৌবাহিনী প্রধান আরও বলেন, দেশের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অর্জনের লক্ষ্যে বন্দরগুলোর নিরাপত্তা প্রদান, সমুদ্র–বাণিজ্যের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা, ব্লু-ইকোনমি বাস্তবায়নসহ দেশের যেকোনো দুর্যোগ মোকাবিলায় নৌবাহিনী সর্বদা নিবেদিত। নৌবাহিনীর নিজস্ব শিপইয়ার্ডে যুদ্ধজাহাজ নির্মাণে একদিকে যেমন বিপুলসংখ্যক জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা ও বৈদেশিক মুদ্রার সাশ্রয় হচ্ছে, অন্যদিকে বাংলাদেশ নৌবাহিনী ক্রেতা নৌবাহিনী থেকে নির্মাতা নৌবাহিনী হিসেবে নতুন সক্ষমতার উন্নীত হয়েছে।‘বানৌজা বিশখালী’ জাহাজটি ১৯৭৮ সালে নৌবাহিনীতে কমিশনিংয়ের পর থেকে সব অপারেশনাল কার্যক্রমে সফলভাবে অংশ নিয়েছে। দীর্ঘ ৩৬ বছর দেশের জলসীমার সুরক্ষায় নিয়োজিত থাকার পর জাহাজটি ২০১৪ সালে নৌবাহিনী থেকে ডি-কমিশন করা হয়। পরবর্তী সময়ে খুলনা শিপইয়ার্ডে ২০১৯ সালের ২ ডিসেম্বর নতুন করে জাহাজটি নির্মাণের লক্ষ্যে কিল লেয়িং করা হয়। ৪১তম টহল নৈপুণ্য স্কোয়াড্রনের পঞ্চম জাহাজ ‘বানৌজা বিশখালী’ নির্মাণ শেষে ২২ নভেম্বর ২০২৩ নৌবাহিনীর কাছে হস্তান্তর করা হয়।
বাংলাদেশ নৌবাহিনীতে নব সংযোজিত জাহাজটির দৈর্ঘ্য ৫১ দশমিক ৬ মিটার এবং প্রস্থ ৭ দশমিক ৫ মিটার। জাহাজটি ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ২১ নটিক্যাল মাইল বেগে চলতে সক্ষম। জাহাজটি আধুনিক প্রযুক্তিসম্পন্ন এবং একটি ৪০ মিলিমিটার বফর গান, দুটি ১২ দশমিক ৭ মিলিমিটার হেভি মেশিনগান, মাইন লেইং রেল, অত্যাধুনিক সারভাইলেন্স র্যাডার, জিপিএস, ইকো-সাউন্ডার সিস্টেমসহ বিভিন্ন ধরনের যুদ্ধ সরঞ্জামাদিতে সুসজ্জিত।
অনুষ্ঠানে নৌবাহিনী সদর দপ্তরের পিএসও, বীর মুক্তিযোদ্ধা, উচ্চপদস্থ সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তা এবং বিশিষ্ট ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন।