খুলনায় আলোচিত ‘মা’ ডেকে কলেজছাত্রীকে ধর্ষণের মামলার রায় গত বুধবার (১/০৬/২০২২) ঘোষণা করা হয়েছে।এতে বেকসুর খালাস পেয়েছে মামলার একমাত্র অভিযুক্ত আসামী এনামুল হক ওরফে টিটো (৫৫)।খুলনার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো: ছালাম খান এ রায় দেন।
রায় ঘোষণার পর ওই ভুক্তভোগী কলেজছাত্রী ও তাঁর পরিবারের সদস্যরা অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন।অসন্তোষ্ট ভিকটিম উচ্চাদালতে আপিল করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।ভুক্তভোগী কলেজছাত্রী এখন বিচার পাওয়া নিয়ে শঙ্কায় আছেন।
মামলার বাদীপক্ষের আইনজীবী ছিলেন বি এম আবদুল আলীম। তিনি বলেন, বুধবার ছিল মামলার যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের (আর্গুমেন্ট) দিন। ওই সময় মামলার নথি তুলে দেখা যায়, ওই মামলার মূল তদন্ত কর্মকর্তা, চিকিৎসা কর্মকর্তাসহ গুরুত্বপূর্ণ তিনজনের সাক্ষ্য বাকি আছে। এ কারণে এদিন ওই তিনজনের সাক্ষ্য গ্রহণ করার জন্য আদালতে আবেদন করা হয়। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে করা ওই আবেদন বিচারক পরে শুনানি করবেন বলে জানান। কিন্তু বেলা আড়াইটার দিকে হঠাৎ শুনতে পান, মামলার রায় হয়ে গেছে। বিচারক আসামিকে খালাস দিয়েছেন।কীভাবে এমন একটি চাঞ্চল্যকর মামলার রায় হঠাৎ ঘোষণা করা হলো, তা বুঝতে পারছি না। প্রায় সব সাক্ষীই বাদীপক্ষের অনুকূলে সাক্ষ্য দিয়েছেন। মামলার অভিযোগপত্রেও আসামিকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছিল। মামলাটি নিয়ে উচ্চ আদালতে আপিল করা হবে।
মামলার রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ফরিদ আহমেদ বলেন,‘আর্গুমেন্টের দিন ছিল। বাদীর আইনজীবী তিনজনের সাক্ষ্য গ্রহণ করার জন্য আবেদন করেছিলেন। মনে হয়, ওই আবেদন খারিজ করে বিচারক মামলার রায় ঘোষণা করেছেন।
মামলার আসামিপক্ষের আইনজীবী মো. মনিরুজ্জামান তিনি বলেন, বিচারক সাক্ষী ও মামলার কাগজপত্র পর্যালোচনা করে রায় ঘোষণা করেছেন। আগের দিন আসামিপক্ষের যুক্তিতর্ক হয়েছিল। ওই দিন বাদীপক্ষের যুক্তিতর্ক হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তাঁরা সেটা না করে সাক্ষীদের সাক্ষ্য নেওয়ার আবেদন করেন।
আজ শুক্রবার ওই কলেজছাত্রী বলেন,আর্গুমেন্টের দিন এভাবেই রায় দিয়ে আসামিকে খালাস দেওয়াতে তিনি এখন ভীত এবং অসন্তোষ।তিনি আরও বলেন অর্থের বিনিময় এমনটি হয়েছে বলে তিনি ধারণা করছেন।কারণ আসামিপক্ষ থেকে বেশ কয়েকবার টাকা দিয়ে মামলাটি মীমাংসা করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল।আমি চেয়েছিলাম আসামির সাজা হোক। এ কারণেই আইনিভাবে মামলাটি এত দিন লড়ে এসেছি। কিন্তু কীভাবে যে রায় ঘোষণা করা হলো, তা আসলেই বুঝতে পারছি না।আমি আত্মহত্যা করতে যেয়েও ফেরত এসেছি, নিজের মনকে শক্ত করেছি। ভেবেছি আজ যদি আমি প্রতিবাদ না করি তাহলে আমার মত এরকম আরো মেয়ে এইরকম হিংস্র পুরুষদের শিকার হবেন।যারা পবিত্র ‘মা’ শব্দটি ব্যবহার করে ধর্ষণ করতে দ্বিধাবোধ করে না।
তিনি পরবর্তীতে কোনো পদক্ষেপ নিবেন কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে ‘প্রতিদিন সেবক’ কে বলেন,আমি অবশ্যই উচ্চাদালতে আপিল করবো।
মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, ২০১৭ সালের ১৬ জানুয়ারি কলেজ থেকে ইজিবাইকে চড়ে বাসায় ফেরার পথে এনামুল হকের সঙ্গে পরিচয় হয় মেয়েটির। প্রথম পরিচয়েই এনামুল তাঁকে ‘মা’ বলে সম্বোধন করেন। কিছুদিন আগে তাঁর মা মারা গেছেন, এ কারণে মেয়েটিকে তিনি (এনামুল) মা বলে ডাকার অনুমতি চান। এনামুল বয়স্ক মানুষ হওয়ায় বিষয়টি মেনে নেন ওই কলেজছাত্রী। এরপর কলেজে যাওয়া-আসার পথে দেখা হলেই খাতির করতেন এনামুল। ১৯ জানুয়ারি তিনি মেয়েটিকে বাড়ির সবার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার কথা বলে সোনাডাঙ্গা এলাকার একটি ছয়তলা বাসার ষষ্ঠ তলায় নিয়ে ছাদ থেকে ফেলে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে মেয়েটিকে ধর্ষণ করেন। লজ্জায় ও আতঙ্কে এ ঘটনা প্রথমে কাউকে বলেননি কলেজছাত্রী। প্রায় দুই মাস পর ওই বছরের ১৫ মার্চ সোনাডাঙ্গা থানায় ধর্ষণের মামলা করেন মেয়েটি।
পি এস/এন আই