আজ ১৮ অক্টোবর ২০২৩ খ্রিঃ, ০২ কার্তিক ১৪৩০ বঙ্গাব্দ বুধবার হেমন্তের স্নিগ্ধ সকালে ১১:০৫ ঘটিকায় খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের উদ্যোগে কেএমপি সদর দপ্তর ভবনের প্রবেশ মুখে স্থাপিত ‘বঙ্গবন্ধু কর্ণার’ পুলিশ কমিশনার জনাব মোঃ মোজাম্মেল হক, বিপিএম (বার), পিপিএম মহোদয় শুভ উদ্বোধন করেন।
কেএমপি সদর দপ্তর মূল ভবনের নীচ তলার প্রবেশ মুখে হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালী স্বাধীনতার মহান স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এঁর স্মৃতির প্রতি সম্মান জানিয়ে ‘বঙ্গবন্ধু কর্ণার’ স্থাপন করা হয়েছে। খুলনা মেট্রোপলিটর পুলিশের প্রতিটি পুলিশ সদস্য, সিভিল স্টাফ ও আগত দর্শনার্থীগণ কে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালী সম্পর্কে অবগতকরণ, তাঁর আদর্শকে সকলের মাঝে ছড়িয়ে দেওয়া এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় সমৃদ্ধ সোনার বাংলা গঠনের ক্ষেত্রে তাঁর পদাঙ্ক অনুসরণের লক্ষ্য নিয়ে এই কর্ণারটি স্থাপিত হয়েছে। আগামী প্রজন্মকে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ, জীবনাচার, রাজনৈতিক দর্শন এবং মুক্তিযুদ্ধে তাঁর অবিসংবাদিত ভূমিকা সম্পর্কে ধারণা প্রদানের নিমিত্তে খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের এই আন্তরিক ক্ষুদ্র প্রয়াস। মূলত বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ অঙ্গাঅঙ্গিভাবে জড়িত। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কেবল একজন সিংহহৃদয় ব্যক্তিত্বই নন তিনি একটি পতাকা, একটি রাষ্ট্র, একটি আদর্শের নাম। তাঁর বলিষ্ঠ নেতৃত্বে আমরা পেয়েছি স্বাধীন দেশ। তাঁর পদাঙ্ক অনুসরণ করেই আমরা গড়ে তুলতে চাই ন্যায়বিচার ও আইনের শাসন সমুন্নত স্বপ্নের সোনার বাংলা।
কেএমপি হেডকোয়ার্টার্সে স্থাপিত বঙ্গবন্ধু কর্ণার এর দেয়াল সজ্জিত হয়েছে বঙ্গবন্ধুর ঘটনাবহুল আটপৌঢ়ে পারিবারিক জীবন ও রাজনৈতিক জীবনের তাৎপর্যময় নানা প্রকার আলোকচিত্র দিয়ে। বঙ্গবন্ধু কর্ণারের শুরুতেই রয়েছে তার বংশ পরিক্রমা। দক্ষিণের দেয়ালে রয়েছে তাঁর জীবনের সংক্ষিপ্ত রুপরেখা। এছাড়াও পুরো দেয়াল জুড়ে রয়েছে রাষ্ট্র পরিচালনাকালীন পুলিশের সাথে জড়িয়ে থাকা তাঁর স্মৃতিময় মুহূর্তের স্থিরচিত্র। পুলিশের প্রতি বঙ্গবন্ধুর ছিল গভীর মমত্ববোধ আর ভালোবাসা। তাই স্বাধীনতাত্তোর কালে ১৫ জানুয়ারি ১৯৭৫ খ্রিঃ রাজারবাগে পুলিশ সপ্তাহে পুলিশকে উদ্দেশ্য করে তিনি যে অমিয় বাণী শুনিয়েছিলেন তা আজও স্বাধীন দেশের পুলিশ বাহিনীর পথ চলার পথেয়। তাঁর সেই ভাষণের চুম্বক অংশ স্থান পেয়েছে বঙ্গবন্ধু কর্ণারের উত্তর পাশের দেয়ালে।
এছাড়াও দেয়ালের বুক শেল্ফগুলোতে শোভা পাচ্ছে বঙ্গবন্ধুর লেখা ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ ও ‘করাগারের রোজনামচা’। আরও রয়েছে মুজিব পিডিয়া, সিক্রেট ডকুমেন্টস অব ইন্টিলিজেন্স ব্রাঞ্চ অন ফাদার অব দ্য নেশন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে রচিত বিশিষ্ট লেখকদের বিভিন্ন বই। উত্তর পাশের দেয়ালে শোভা পাচ্ছে আদরের কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে স্বহস্তে লেখা জাতির পিতার আবেগঘন চিঠি। বঙ্গবন্ধু কর্ণারের ক্ষুদ্র আয়োজনে রয়েছে বঙ্গবন্ধুর শিশু পুত্র শেখ রাসেলসহ পরিবারের অন্যান্য সদস্যগণের ছবি। অসংখ্য বই ও ছবির সমন্বয়ে সাজানো হয়েছে কেএমপির বঙ্গবন্ধু কর্ণার। প্রতিটি নিদর্শনের শৈল্পিক উপস্থাপনা ও নান্দনিকতা যোগ করেছে ভিন্ন মাত্রা। এভাবেই শ্রদ্ধা ও ভালবাসার ছোঁয়ায় সযত্নে তুলে ধরা হয়েছে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কে। গড়ে তোলা হয়েছে ‘বঙ্গবন্ধু কর্ণার’। বঙ্গবন্ধুর জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক ও ব্যক্তি জীবন, রাষ্ট্র পরিচালনাসহ বিভিন্ন পর্যায়ের ফটোবায়োগ্রাফি দিয়ে সাজানো হয়েছে বঙ্গবন্ধু কর্ণারের প্রতিটি পরত। জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম, পল্লী কবি জসিম উদ্দিন, মজলুম জননেতা মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী, গণতন্ত্রের মানস পুত্র হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, ভারতীয় প্রধান মন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী, কিউবার প্রেসিডেন্ট ফিদেল কাস্ত্রো, সোভিয়েত নেতা নিওনিদ ব্রেজনেভ, জাতিসংঘের মহাসচিব কুট ওয়াল্ডহেইম, মিশরের প্রেসিডেন্ট আনোয়ার সাদাত, বাপুজি মহাত্মা গান্ধী, চীনা কমিউনিস্ট পার্টির চেয়ারম্যান মাও সে তুং, ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী এডওয়ার্ড হিথসহ আন্তর্জাতিক অঙ্গনের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিগণের সাথে বঙ্গবন্ধুর সাক্ষাতের ঐতিহাসিক মুহূর্তের ছবি স্থান পেয়েছে মুজিব কর্ণারের বাইরের দেয়ালে। গৌরবময় মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন শরণার্থীদের ছবি, মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণকালীন ছবি, বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ই মার্চের রেসকোর্স ময়দানের ভাষণের ছবি, পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর আত্মসমর্পণের ছবি, বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের ছবিসহ জাতিসংঘে প্রদত্ত বঙ্গবন্ধুর ভাষণ এবং আলোকচিত্র প্রতিটি বিষয়ই চিত্রায়িত হয়েছে বঙ্গবন্ধু কর্ণারের দেয়াল জুড়ে। স্বাধীনতা পরবর্তীকালে পুলিশ একাডেমি সারদাতে আউটসাইড ক্যাডেটদের সমাপনী কুজকাওয়াজ অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ, অভিভাধন গ্রহণ, স্বাধীন বাংলার নব্য গঠিত পুলিশ বাহিনীর আইজিপি মহোদয়ের সাথে মতবিনিময়ের মত মাহেন্দ্রক্ষণগুলি সাদাকালো ফ্রেমে তুলে ধরা হয়েছে বঙ্গবন্ধু কর্ণারের প্রতিটি দেয়ালে। এছাড়াও ফটোগ্রাফের পাশাপাশি অডিও ভিজ্যুয়াল প্রদশর্নীর জন্য ডিজিটাল মনিটরের সুব্যবস্থা রয়েছে।
কেএমপি সদর দপ্তরে স্থাপিত ‘বঙ্গবন্ধু কর্ণার’ এর শুভ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে পুলিশ কমিশনার মহোদয় বলেন, আমরা আমাদের নতুন প্রজন্মকে স্বাধীনতার প্রকৃত ইতিহাস জানানোর জন্য কেএমপি সদর দপ্তরে বঙ্গবন্ধু কর্ণার স্থাপন করেছি। সকলের জন্য এই কর্ণারটি উন্মুক্ত থাকবে। এ সময় তিনি গভীর শ্রদ্ধাভরে স্মারণ করেন জাতির পিতা ও ১৫ আগস্টে শহীদ তাঁর পরিবারবর্গকে। বিশেষভাবে স্মরণ করেন বঙ্গবন্ধুর শিশু পুত্র শেখ রাসেলকে। শেখ রাসেল দিবসে বঙ্গবন্ধু কর্ণারের উদ্বোধন করতে পেরে মহান সৃষ্টিকর্তার প্রতি তিনি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেন। শেখ রাসেল দিবসের এবারের প্রতিপাদ্য ‘শেখ রাসেল দীপ্তিময় নির্ভীক, নির্মল দুর্জয়’ সকলের মাঝে দৃপ্তকন্ঠে উচ্চারণ করেন। জাতির পিতার জীবনাদর্শে উজ্জ্বীবিত হয়ে সততার সাথে সরকারি দায়িত্ব পালনের জন্য সকলের প্রতি তিনি আহ্বান জানান। পাশাপাশি আগামী প্রজন্মকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উজ্জীবিত হয়ে বঙ্গবন্ধু তনয়া মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার ঘোষিত স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে দেশপ্রেমিক নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলার আহ্বান জানান। পুলিশ কমিশনার মহোদয় বলেন, কেএমপি সদর দপ্তরে আগত দর্শনার্থীরা ‘বঙ্গবন্ধু কর্ণার’ ব্যবহার করতে পারবেন এবং বঙ্গবন্ধুকে জানার সুযোগ পাবেন। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে পুলিশ কমিশনার মহোদয় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জীবনাদর্শ, দেশ প্রেম এবং দেশ ও জাতি গঠনে বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভূমিকা নিয়ে সংক্ষিপ্ত আকারে আলোকপাত করেন।
বঙ্গবন্ধু কর্ণার এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন কেএমপি’র ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তাবৃন্দ এবং প্রিন্ট এবং ইলেকট্রনিক সম্মানিত সাংবাদিকবৃন্দ।
Leave a comment