কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল হাই কানুকে হেনস্তার ঘটনায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। বুধবার বিকালে আব্দুল হাই কানু বাদী হয়ে চৌদ্দগ্রাম থানায় এ মামলা দায়ের করেন। এতে ১০ জনের নামোল্লেখ এবং ১০-১২ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে।
মামলার এজাহারে আসামিদের বিরুদ্ধে বাদীর কাছে ২৫ লাখ টাকা চাঁদা দাবিসহ ১০০ কোটি টাকার মানহানির অভিযোগ আনা হয়েছে।
আব্দুল হাই কানু স্বাক্ষরিত অভিযোগটি ফেনীর বাসা থেকে চৌদ্দগ্রামের কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধার মাধ্যমে থানায় প্রেরণ করার পরই মামলাটি রেকর্ড করা হয়েছে। আজ সন্ধ্যায় চৌদ্দগ্রাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এটিএম আক্তার-উজ জামান সমকালকে মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
মামলায় অভিযুক্তরা হচ্ছেন, চৌদ্দগ্রামের কুলিয়ারা গ্রামের প্রবাসী আবুল হাশেম মজুমদার (৪৮), ওহিদ মজুমদার (৪০), রাসেল (৩০), ইসমাইল মজুমদার (৪০), বেলাল মজুমদার (৪৫), পেয়ার আহাম্মদ মজুমদার (৩৭), নয়ন মজুমদার (৩২), এমরান (৩৪), পাতড্ডা গ্রামের শিমুল (৩৫), শনপুর গ্রামের রুবেলসহ (৩৫) অজ্ঞাতনামা আরও ১০/১২ জন। এদের মধ্যে এর আগে গত মঙ্গলবার ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তারকৃত ৫ জনের মধ্যে শুধুমাত্র ইসমাইল মজুমদারকে এ মামলায় আসামিভুক্ত করা হয়েছে।
মামলার এজাহারে ওই মুক্তিযোদ্ধা উল্লেখ করেন, গত ৫ আগস্ট বিপ্লবের পর আসামিগণ মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের লোকজনদেরকে ও মুক্তিযোদ্ধাদেরকে নানাভাবে হয়রানিসহ হুমকি দিয়ে মোটা অংকের চাঁদা আদায় করে আসছে। আসামিরা গত কয়েক দিন যাবত তার (বাদী) নিকট ২৫ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে আসছিল। উক্ত চাঁদা না দিলে বাড়ি থাকতে পারবে না মর্মে বাদীকে হুমকি দেয়। চাঁদা দিতে অস্বীকার করায় আসামিরা তার ওপর ক্ষিপ্ত হয় এবং তাকে খুন ও ঘর-বাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়ার হুমকি দেয়। ঘটনার দিন গত রোববার তিনি স্থানীয় পাতড্ডা বাজারের একটি ফার্মেসিতে বসা ছিলেন। আসামিরা ওই ফার্মেসীতে গিয়ে টানাহেচড়া করে স্থানীয় কুলিয়ারা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নিয়ে স্কুলের একটি কক্ষে জোরপূর্বক তাকে আটক রেখে কিল, ঘুষি, লাথি মেরে মারাত্মক জখম করে। এক পর্যায়ে আসামিরা বাদীকে মেঝেতে শুইয়ে জবাই করে হত্যার চেষ্টা করে। এ সময় বাদী ওই কক্ষ হতে বের হয়ে স্কুলের সামনে আসলে আসামিরা কিছু পুরানো জুতা দিয়ে একটি মালা তৈরি করে তার গলায় পরিয়ে স্কুলের মাঠে ও রাস্তায় হাঁটায়। পরে এলাকার লোকজন তাকে আসামিদের কবল হতে উদ্ধার করে। এজাহারে বাদী আরও উল্লেখ করেন, এ ঘটনায় তার ১০০ কোটি টাকার সম্মানহানি হয়েছে।
মামলার বাদী মুক্তিযোদ্ধা আবদুল হাই কানু জানান, মঙ্গলবার ফেনী আদালত ভবনের সামনে থেকে মামলার অভিযোগের কপি ছিনতাই করা হয়। অসুস্থতা ও নিরাপত্তাজনিত কারণে আমি থানায় যেতে পারিনি। তাই চৌদ্দগ্রামের সাবেক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার প্রমথ রঞ্জন চক্রবর্তীর নেতৃত্বে কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা ও আত্মীয়ের মাধ্যমে বুধবার অভিযোগটি থানায় প্রেরণ করি।
আব্দুল হাই কানুর ছেলে যুবলীগ নেতা গোলাম মোস্তফা ভূঁইয়া বিপ্লব বলেন, যার নেতৃত্বে ঘটনা সেই আবুল হাসেমসহ অন্য আসামিরা এখনো গ্রেপ্তার হয়নি। যারা দাঁড়িয়ে ঘটনা প্রত্যক্ষ করেছিল, এমন চার জনকে পুলিশ আগে গ্রেপ্তার করেছে। ঘটনার পর থেকে ফেনীতে গিয়েও বাবাকে নিয়ে শঙ্কিত আছি। যে কোনো সময় আবারও হামলা হতে পারে।
বুধবার সন্ধ্যায় চৌদ্দগ্রাম থানার ওসি এটিএম আক্তার-উজ জামান জানান, মামলাটি রেকর্ড করা হয়েছে। এ মামলার এজাহারনামীয় আসামিদের গ্রেপ্তারে পুলিশের অভিযান অব্যাহত আছে।