সবজি, মাংস- রান্নার যে কোনো উপকরণ টুকরা বা কাটার করা জন্য প্লাস্টিক ও কাঠের দুই ধরনের বোর্ড ব্যবহারের প্রচলন রয়েছে।
তবে কোনটা বেশি নিরাপদ?- এরকম প্রশ্ন মাথায় আসতেই পারে। কারণ প্লাস্টিক পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর একথা সবারই জানা।
এই বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ‘ন্যাশনাল এনভায়রনমেন্টাল হেল্থ অ্যাসোসিয়েশন’য়ের নিরাপদ খাদ্য-বিষয়ক জ্যেষ্ঠ বিশেষজ্ঞ মেলিসা ভাকারো রিয়েলসিম্পল ডটকম’য়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলেন, “দুই ধরনের বোর্ড-ই সব ক্ষেত্রে ব্যবহার যোগ্য, নিরাপদ ও স্থায়ী। যদি সঠিকভাবে যত্ন নেওয়া যায় তবে বছরের পর বছর টিকতে পারে।”
আর যত্ন নেওয়ার পদ্ধতির ওপর নির্ভর করবে পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার বিষয়টা।
যেভাবে পরিষ্কার করতে হয়
যুক্তরাষ্ট্রের ‘ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এফডিএ)’য়ের নির্দেশনা অনুসারে- যে কোনো ধরনের বোর্ড প্রতিবার ব্যবহারের পর ধুয়ে পরিষ্কার করতে হবে।
ভাকারো বলেন, “সঠিক নিয়ম হল ধুয়ে, পরিষ্কার করে বাতাসে শুকানো। আর ধোয়ার ক্ষেত্রে যে কোনো ধরনের সাবান ব্যবহার করা যাবে।”
জীবাণু মুক্ত রাখতে প্লাস্টিকের বোর্ডে ব্যবহার করা যায় ব্লিচ গোলানো পানি। আর কাঠের বোর্ডে ভিনেগার; কারণ এই তরল জীবণু দূর করতে ভালো কাজ করে।
তবে কাঠের বোর্ড কখনও পানিতে চুবিয়ে রাখা যাবে না। রাখলে কাঠ পানি শুষে নিয়ে নষ্ট হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা বাড়বে।
কখন ফেলে দিতে হবে
এফডিএ’য়ের নির্দেশনা হল- যখন বোর্ডের ওপরে বেশি দাগ পড়ে যাবে, আস্তর ওঠার মতো অবস্থা হবে, ধুয়ে পরিষ্কার করলেও ময়লা উঠবে না ঠিক মতো তখন অবশ্যই সেটা বদল করতে হবে।
ভাকারো বলেন, “বোর্ডের ওপর বেশি গভীর দাগ পড়লে পরিষ্কার করা কঠিন হয়ে যায়। ফলে সেখানে জীবাণু জন্মানোর পরিবেশ পায়। যা খাবারে চলে যাওয়ার সম্ভাবনা বাড়ায়।”
এছাড়া প্লাস্টিকের বোর্ড থেকে আঁশ বা ক্ষুদ্র কণা উঠলে, সেগুলো খাবারে লেগে পেটে যেতে পারে। যা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর।
কাঠের বোর্ডের সুবিধা
প্লাস্টিকের বোর্ডের মতো সহজে দাগ পড়ে না। প্লাস্টিকের বোর্ডের চাইতে বেশি টেকশই। প্রাকৃতিকভাবেই ব্যাক্টেরিয়া-রোধী। সহজেই মেরামত করা যায়, যদি উপরিভাগে দাগ পড়ে, তবে ঘষে ওপরের স্তর ফেলে দিলে পুনরায় ব্যবহারযোগ্য করা যায়।
কাঠের বোর্ডের অসুবিধা
বেশি যত্নের প্রয়োজন। কাঠের জিনিস বলে সূক্ষ্ম রন্ধ্র থাকে, ফলে ভেতরে বেশি ময়লা জমতে পারে। প্লাস্টিকের চাইতে ভারী। বাসনপত্র ধোয়ার সাবান দিয়ে ধোয়া নিরাপদ না।
প্লাস্টিকের বোর্ডের সুবিধা
কাঠের চাইতে হালকা বলে ব্যবহার সহজ। কাঠের চাইতে স্থায়িত্ব বেশি। আর্দ্রতা নিরোধক। থালাবাসন ধোয়ার সাবান দিয়ে পরিষ্কার করা যায়। দামে সস্তা। প্লাস্টিক বলে পানি, সাবান বা খাবারের ক্ষুদ্র কণা শোষণ করে না।
প্লাস্টিকের বোর্ডের অসুবিধা
কাঠের বোর্ডের চাইতে বেশি দাগ পড়তে পারে। এই কারণে দ্রুত বদলানোর প্রয়োজন হতে পারে। সময়ের সাথে দাগ গভীর হয়, যেখানে ময়লা জীবাণু লেগে থাকার পরিমাণ বাড়ে। পুরানো হলে প্লাস্টিকের ক্ষুদ্র কণা খাবারে মিশে যেতে পারে।
তাহলে কোনটা ব্যবহার করা নিরাপদ?
আসল বিষয় হল- পরিষ্কার করা, ভালো মতো ধোয়া ও জীবাণু মুক্ত রাখা। সঠিকভাবে যত্ন নিলে কোন ধরনের বোর্ড ব্যবহার করা হচ্ছে সেটা গুরুত্বপূর্ণ থাকে না।
কাঠ কিংবা প্লাস্টিকের ‘কাটিং বোর্ড’ প্রতিবার ব্যবহারের পর ভালো মতো ধুয়ে পরিষ্কার করে বাতাসে শুকাতে হবে। তাহলেই চলবে অনেকদিন।