করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউ আরও মারাত্মকভাবে ছড়িয়ে পড়ছে। শুধু এদেশেই নয়, পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের জনসংখ্যার উপর মারাত্মক প্রভাব ফেলছে ভাইরাসটি। হাসপাতাল ও চিকিত্সা সংকটকের কারণে করোনায় আক্রান্তরা চিকিৎসার অভাবেই মারা যাচ্ছেন।
তাই এ সময় সবারই সচেতন থাকা জরুরি। আপনার সামান্য ভুলের কারণে ছড়িয়ে পড়তে পারে ভাইরাসটি। করোনার বিস্তার রোধ ব্যবস্থা গ্রহণ করার দায়িত্ব সবার।
করোনা কীভাবে ছড়ায়?
সার্স কোভ-২ একটি অত্যন্ত সংক্রামক ভাইরাস। শুধু যে আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে আসলে আপনি আক্রান্ত হবে, তা কিন্তু নয়। বিশেষজ্ঞদের মতে, শুধু সংস্পর্শেই নয়, এয়ারোসোলের (ভাইরাসের সূক্ষ্ম কণা) মাধ্যমেও করোনা ছড়িয়ে পড়তে পারে। যখন কেউ মাস্ক ছাড়া হাঁচি-কাশি দেয়, কথা বলে বা হাসে; তখন তার মুখ থেকে এয়ারোসোল ছড়িয়ে পড়ে বাতাসে।
দ্য ল্যানসেট জার্নালে প্রকাশিত একটি সমীক্ষা অনুসারে, করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে বেশিরভাগ মানুষই এয়ারোসোলের মাধ্যমেই আক্রান্ত হচ্ছেন। একই সমীক্ষায় উল্লেখ করা হয়েছে, করোনায় আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বাইরের তুলনায় অনেক বেশি কম বায়ুচলাচল ঘরের মধ্যে।
রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কেন্দ্র (সিডিসি) অনুসারে, ল্যাব স্টাডির প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে জানা গেছে কোনো ব্যক্তিকে স্পর্শ না করেও করোনায় আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা আছে। বাতাসের মাধ্যমেও ভাইরাসটি শরীরে প্রবেশ করতে পারে।
করোনা থেকে বাঁচতে এবং অন্যকে নিরাপদ রাখার দায়িত্ব এখন সবার উপরেই। করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে প্রয়োজনীয় সতর্কতামূলক পদক্ষেপ করতে হবে। এজন্য যা যা করণীয়-
ভালো মাস্ক পরুন
এয়ারোসোলের মাধ্যমে করোনার সংক্রমণ হতে পারে। তাই ভিড়ের মধ্যে বা কারও সঙ্গে কথা বলার সময় অবশ্যই মাস্ক পরবেন। এজন্য ৩-৪ স্তরবিশিষ্ট মাস্ক ব্যবহার করার চেষ্টা করবেন। সিডিসি এরই মধ্যে ভাইরাসটির বিস্তার রোধে ডাবল মাস্কিংয়েরও পরামর্শ দিয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বিশ্বাস করেন, এই ভাইরাস এড়ানোর সর্বোত্তম পন্থা হলো অতিরিক্ত স্তরের মাস্ক ব্যবহার করা।
সামাজিক দূরত্ব মেনে চলুন
সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন (সিডিসি) এর মতে, একে অপরের থেকে ৬ ফুট দূরত্ব বজায় রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এতে ভাইরাসের বিস্তার রোধ হবে। এর ফলে যেসব করোনা আক্রান্তরা লক্ষণ ছাড়াও পজেটিভ; তাদের কাছ থেকেও সংক্রমণের ঝুঁকি কমবে। এ ছাড়াও কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত কারও কাছে যাওয়া এড়িয়ে চলুন, এটি সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ।
জরুরি প্রয়োজন ব্যতীত বাইরে নয়
লকডাউনের সময়সীমা বাড়ছে। এই সময় বাড়িতে থাকাই ভালো। ঘন ঘন বাইরে যাবেন না। এখন যেহেতু মার্কেট খোলা, তাই অনেকেই হয়তো কেনাকাটা করতে মার্কেটে যেতে পারেন। তবে সাবধান, সেখান থেকেও কিন্তু আপনি আক্রান্ত হতে পারেন। জরুরি প্রয়োজন ব্যতীত এ সময় বাইরে বের হবেন না।
নিয়মিত হাত ধুতে হবে
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, করোনাভাইরাস বস্তু বা পৃষ্ঠে বেশ কয়েক ঘণ্টা পর্যন্ত জীবিত থাকে। তাই ঘরে থাকলেও যেকোনো কাজ করার পরপরই হাত ধুয়ে নিন। ঘন ঘন স্পর্শ করা জিনিসগুলোর উপরিভাগ জীবাণুমুক্ত রাখুন। স্বাস্থ্যবিধি বজায় রাখতে ভুলবেন না।
ঘরে বায়ু চলাচলের ব্যবস্থা করুন
বিভিন্ন গবেষণায় বলা হয়েছে, বাইরের চেয়ে বদ্ধ ঘরের মধ্যে করোনা ছড়ানোর ঝুঁকি বেশি। বিশেষ করে অফিসগুলোতে। এজন্য বদ্ধ ঘরে এ সময় থাকবেন না। খোলামেলা বা বাতাস প্রবেশ করতে পারে; এমন ঘরে থাকবেন।