দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ পুনরায় বেড়েছে। আমরা ইতোমধ্যেই জেনেছি, করোনার বিরুদ্ধে জয়ী হতে হলে প্রথমেই প্রয়োজন সচেতনতা। এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট নির্দেশনাও রয়েছে। এর অন্যতম হলো মাস্ক পরিধান করা। এখন প্রশ্ন হলো- সব ধরনের মাস্ক কি করোনার বিরুদ্ধে সমান কার্যকর?
যুক্তরাষ্ট্রের রোগতত্ত্ব বিষয়ক অন্যতম শীর্ষ প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল (সিডিসি) এ বিষয়ে গবেষণা করেছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থারও এ বিষয়ে গবেষণা রয়েছে। মূলত বিভিন্ন রোগের প্রাদুর্ভাবের সময় যখনই মাস্ক ব্যবহারের প্রসঙ্গ এসেছে এবং সেইসঙ্গে নানান প্রশ্নের সূত্র ধরে গবেষণা হয়েছে।
২০১৪ সালে এক গবেষণায় দেখা গেছে, এন-৯৫ মাস্ক শতকরা ৯৫ ভাগ ক্ষুদ্র কণা আটকে রাখতে সক্ষম। অর্থাৎ যে কণাগুলোর আকৃতি ০.৩ মাইক্রন সেগুলোর জন্য এই মাস্ক নিরাপদ। যদিও ক্ষুদ্র কণার আকৃতি নিয়ে দ্বিমত রয়েছে।
সার্জিক্যাল মাস্ক এই মহামারির সময়ে সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হচ্ছে। গবেষণায় দেখা গেছে, সার্জিক্যাল মাস্ক এক্ষেত্রে শতকরা ৪০ ভাগ কার্যকর। ডেন্টাল মাস্ক কার্যকর শতকরা ৬০ ভাগ। গবেষণায় বলা হয়েছে, সুতি কাপড়ের মাস্ক শতকরা ৩০ ভাগ কার্যকর। রুমালের ক্ষেত্রে বলা হয়েছে, এক পরতের পাতলা রুমাল কার্যকর শতকরা ২ ভাগ। কিন্তু চার পরতের রুমাল শতকরা ১৩ ভাগ কার্যকর।
২০১০ সালে এনআইওএসএইচ পরিচালিত একই রকম আরেকটি স্টাডিতে দেখা গেছে টি-শার্টের কাপড় দিয়ে বানানো মাস্ক শতকরা ১০ ভাগ সুরক্ষা দিচ্ছে। গবেষণায় আরও বলা হয়েছে, তোয়ালে শতকরা ৪০ ভাগ এবং স্কার্ফ ১০ থেকে ২০ ভাগ সুরক্ষা দেয়। সর্বশেষ ২০২০ সালে ৩ এপ্রিল নেচার মেডিসিন-এর গবেষকরা দেখেছেন সার্জিক্যাল মাস্ক ফুসফুসে সংক্রমণযোগ্য ভাইরাসের উপস্থিতি কমায়। ২০১১ সালে বেইজিংয়েও সার্জিক্যাল মাস্কসহ অন্যান্য গবেষণায় প্রায় একইরকম তথ্য পাওয়া গেছে।
এটা প্রায় নিশ্চিত যারা স্বাস্থ্যকর্মী, রোগীর সেবা করছেন তাদের জন্য এন-৯৫ মাস্ক সবচেয়ে কার্যকর। তবে এটি পরে কাজ করা সহজ নয়। সাম্প্রতিককালে ডাবল মাস্ক ব্যবহারের বিষয়টি বেশ গুরুত্ব পাচ্ছে। যে কোনো পাবলিক ট্রান্সপোর্টে মাস্ক ব্যবহার করতে বলা হয়েছে। তার মানে হচ্ছে, বাস ট্রেন প্লেন সব জায়গাতেই মাস্ক ব্যবহার করতে হবে। তাছাড়া অফিসে, বদ্ধ ঘরে মাস্ক ব্যবহারের নির্দেশনা আছে। কারণ এন-৯৫ মাস্ক ছাড়া আর কোনো মাস্ক এককভাবে খুব বেশি সুরক্ষা দিতে পারছে না। কিন্তু এটাও মনে রাখতে হবে এন-৯৫ মাস্ক দৈনন্দিন ব্যবহারের জন্য উপযোগী নয়।
এখন প্রশ্ন উঠতে পারে- তাহলে সুরক্ষা মিলবে কীভাবে? এর কারণ জানতে ইতোমধ্যে বেশ কিছু গবেষণা হয়েছে। এসব গবেষণার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে ডাবল মাস্ক। ডাবল মাস্ক নিয়ে এই গবেষণায় মূলত বাজারে যেসব কাপড়ের মাস্ক এবং সার্জিক্যাল মাস্ক রয়েছে সেগুলো নিয়েই গবেষণা হয়েছে। গবেষণায় কাপড়ের ওপর কাপড়ের মাস্ক, সার্জিক্যাল মাস্কের ওপর সার্জিক্যাল মাস্ক বা কাপড়ের ওপর সার্জিক্যাল মাস্ক অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। গবেষণায় দেখা গেছে, সার্জিক্যাল মাস্কের ওপর কাপড়ের মাস্ক ব্যবহারে সবচেয়ে বেশি সুরক্ষা পাওয়া যায়।
কাপড়ের মাস্কের ব্যাপারে যে কথাটি বলা হয়েছে, কাপড়ের মাস্ক হবে দুই স্তরের। মাস্ক এমন কাপড় দিয়ে তৈরি হবে যার ভেতর দিয়ে শ্বাস নেয়া যায়। এমনভাবে ডিজাইন করতে হবে যাতে মুখমণ্ডলের ওপর লেগে থাকে। মাস্কের নাকের অংশে ‘নোজ ওয়্যার’ থাকতেই হবে। এটি নাকের অংশ দিয়ে বাতাস বেরিয়ে যাওয়া বন্ধ করবে। তবে খুব বেশি মোটা কাপড়ের মাস্ক, যা দিয়ে শ্বাস নিতে কষ্ট হয় সেটি ব্যবহার করতে নিষেধ করা হয়েছে। যে মাস্কে বাইরের দিকে বাতাস বেরিয়ে যাওয়ার ভালব বা ভেন্ট রয়েছে সেগুলো ব্যবহার করতে বারণ করা হয়েছে। কারণ এই ভালব দিয়ে জীবাণু বেরিয়ে আসতে পারে। প্রথমদিকে ফেসশীল্ড ব্যবহারের কথা বলা হলেও এখন এটি ব্যবহারে উৎসাহিত করা হচ্ছে না। কারণ এটির কার্যাকারিতার বিষয়ে এখনো নিশ্চিত হওয়া যায় নি।
শিশুদের নিয়েও রয়েছে আলাদা গবেষণা। সিডিসি দুই বছরের নিচের শিশুদের মাস্ক ব্যবহার না করার পরামর্শ দিয়েছে। তবে এর উপরের বয়সের শিশুদের মাস্ক পরতে হবে। তারা দুই স্তরের কাপড়ের মাস্ক ব্যবহার করবে। শুধু তাই নয়, তাদের এমনভাবে মাস্ক ব্যবহার করতে হবে যেটি নাকের উপরিভাগ এবং মুখমণ্ডলের চারপাশ এবং থুতনির নিচের অংশ ঢেকে রাখে।