বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশন দেশের পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর কর হার আরও সাড়ে ৭ শতাংশ কমিয়ে ১৫ শতাংশে নামিয়ে আনার প্রস্তাব করেছে।
মঙ্গলবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর সেগুনবাগিচায় রাজস্ব ভবন সভাকক্ষে জাতীয় রাজস্ব বোডের্র (এনবিআর) সঙ্গে আগামী ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রাক-বাজেট আলোচনায় এ প্রস্তাব তুলে ধরেন বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো. ছায়েদুর রহমান।
এসময় বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো. ছায়েদুর রহমান বলেন, বর্তমানে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর করপোরেট কর হার ২২ দশমিক ৫০ শতাংশ। কিন্তু এই কর হারেও অনেক ভাল ভাল প্রতিষ্ঠান পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হতে উৎসাহিত হচ্ছে না। অথচ বাজারে মৌলভিত্তি সম্পন্ন ভাল প্রতিষ্ঠানের যথেষ্ট অভাব রয়েছে। তাই বাজারে ভাল প্রতিষ্ঠানকে আগ্রহী করে তুলতে এই কর হার ১৫ শতাংশে নামিয়ে আনার প্রস্তাব করছি।
তিনি আরও বলেন, এখন দেশে এমন অনেক প্রতিষ্ঠান আছে যারা ভাল ব্যবসা করেও কম কর দিচ্ছে। বিভিন্ন রকম সুযোগ সুবিধা ভোগ করে কম কর দিচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে করের হার কমিয়ে এসব প্রতিষ্ঠানকে বাজারে তালিকাভুক্ত করা গেলে সর্বোপরি সরকারের রাজস্ব আরও বাড়বে।
প্রসঙ্গত, বর্তমানে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত নয় এমন প্রতিষ্ঠানের কর হার ৩০ শতাংশ, তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠানের কর হার ২২ দশমিক ৫০ শতাংশ।
এসময় মার্চেন্ট ব্যাংকের ওপর চলমান কর হার ৩৭ দশমিক ৫০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২৫ শতাংশে নামিয়ে আনার প্রস্তাবও করেন মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি।
আলোচনায় বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স অ্যাসোসিয়েশনের কার্য নির্বাহী সদস্য ও এশিয়া ইন্স্যুরেন্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইমাম শাহীন বলেছেন, ২০১৪ সালের আয়কর অধ্যাদেশ অনুযায়ী, দেশের সকল লাইফ ইস্যুরেন্স কোম্পানির পলিসি হোল্ডারদের মুনাফার উপর ৫ শতাংশ গেইন ট্যাক্স আরোপ করা হচ্ছে। এই কর বাতিল করার প্রস্তাব করেন তিনি।
মুনাফার ওপর এই কর আরোপের ফলে দেশের সকল লাইফ ইন্স্যুরেন্সের বীমার গ্রাহক ক্রমাগত হ্রাস পাচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, এ কর প্রত্যাহার করা না হলে লাইফ ইন্স্যুরেন্সের ব্যবসার পরিধি প্রতিনিয়ত হ্রাস পাবে এবং প্রতিষ্ঠানগুলোর পক্ষে টিকে থাকা কষ্টসাধ্য হয়ে উঠবে।
এ খাতের করপোরেট কর কমানোর প্রস্তাব করে ইমাম শাহীন বলেন, আয়কর আইন অনুযায়ী তালিকাভুক্ত ব্যাংক, ইস্যুরেন্স এবং অন্যান্য অর্থিক প্রতিষ্ঠানের করহার ৩৭ দশমিক ৫ শতাংশ।
এই কর হার অনেক বেশি উল্লেখ করে তিনি জীবন বীমার ক্ষেত্রে ৩০ শতাংশ এবং জীবন বীমা নয়, এমন বীমার ক্ষেত্রে ৩৫ শতাংশ করপোরেট কর ধার্য্য করার প্রস্তাব দেন।
এদিকে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা (সিওও) সাইফুর রহমান মজুমদার পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর করপোরেট কর হার ১৭ দশমিক ৫০ শতাংশে নামিয়ে আনার প্রস্তাব দেন। তিনি বলেন, করের হার কমে গেলে এসব প্রতিষ্ঠানের হিসাবে পুরোপুরি স্বচ্ছতা আসবে। এতে রাজস্ব বাড়ার পাশাপাশি শেয়ার হোল্ডাররাও লাভবান হবেন।
এসময় অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগের সুযোগ বহাল রাখার প্রস্তাব তুলে ধরে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) জিএম গোলাম ফারুক বলেন, নির্দিষ্ট হারে কর দিয়ে শেয়ার বাজারে বিনিয়োগকৃত অর্থের উৎস সম্পর্কে প্রশ্ন না তোলা হলে বাজারে বিনিয়োগ বাড়বে।
এছাড়াও লভ্যাংশের ওপর উৎসে কর বাতিল, করমুক্ত আয়ের সীমা ১ লাখ টাকায় উন্নীতকরণ এবং এসএমএ কোম্পানি তালিকাভুক্ত হলে প্রথম তিন বছর কর ছাড় এবং পরবর্তীতে ১৫ শতাংশ কর নেওয়ার প্রস্তাব করেন তিনি।
অনুষ্ঠানের শেষের দিকে এনবিআর সদস্য মাসুদ সাদিক বলেন, এসব খাতের সকল প্রস্তাব বিশ্লেষণ করে নতুন বাজেটে কি সুবিধা দেওয়া যায়, সে বিষয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সিন্ধান্ত গ্রহণ করবে।
এনবিআর সদস্য (শুল্ক নীতি) মো. মাসুদ সাদিকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত প্রাক-বাজেট আলোচনায় বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স অ্যাসোসিয়েশন, ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) এবং চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) প্রতিনিধিগণ অংশ নিয়ে নতুন বাজেটের জন্য বিভিন্ন প্রস্তাব তুলে ধরেন। এছাড়া এনবিআর সদস্য (ভ্যাট নীতি) জাকিয়া সুলতানা সদস্য এবং সামসুদ্দিন আহমেদ সদস্য (আয়কর নীতি) উপস্থিত ছিলেন।
সূত্র: বাসস
পিএসএন/এমঅাই