এমন না যে খুব শীতল অনুভূতি হবে। তবে অস্বস্তিকর গরম লাগার ভাবটা কমবে।
বিদ্যুৎ না থাকা, বেশি গরমে থাকা বা পয়সা বাঁচানোর চিন্তা- বিষয় যেটাই হোক, কৃত্রিম পন্থার আশ্রয় না নিয়েও গরমে আরামে থাকার চেষ্টা করা যায়।
‘ইউএস ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অফ হেল্থ’য়ের বরাত দিয়ে সিএনএন ডটকম’য়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে জানানো হয়- দেহ বেশিক্ষণ গরমের মধ্যে থাকলে মস্তিষ্কসহ বিভিন্ন অঙ্গ প্রত্যঙ্গের ক্ষতি হয়।
শরীর ঠাণ্ডা রাখার স্বাভাবিক প্রক্রিয়া হল ঘাম হওয়া। তবে এই পদ্ধতি যখন যথেষ্ট কাজ করে না তখন গরম সংক্রান্ত নানান সমস্যা দেখা দেয়; যাকে বলে ‘হাইপারথার্মিয়া’। এর লক্ষণের মধ্যে রয়েছে- খেঁচুনি হওয়া বা পেশিতে টান পড়া, হিট এডিমা বা গরমে হাত পা ফুলে যাওয়া এবং হিট স্ট্রোক।
গরমের সাথে বাতাসে অতিরিক্ত আর্দ্রতা থাকলে অসুস্থ হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে। কারণ আর্দ্র বাতাস ত্বকে ঘাম হওয়ার পরিমাণ বাড়িয়ে দেহের স্বাভাবিক শীতল হওয়ার প্রক্রিয়াতে বাধা তৈরি করে।
এই ক্ষেত্রে কিছু পন্থা জানা থাকলে দেহ যেমন শীতল রাখা যায় তেমনি ঘরের গরম পরিবেশও নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব হয়।
আর্দ্র থাকা
“গরম লাগলে আর ঘাম হলে প্রথম পদক্ষেপ হলো নিজেকে আর্দ্র রাখা, মানে পর্যাপ্ত পানি পান করতে হবে” একই প্রতিবেদনে পরামর্শ দেন ‘ইউনিভার্সিটি অফ ফ্লোরিডা’র কৃষি ও জৈবিক প্রকৌশলের অবসরপ্রাপ্ত জ্যেষ্ঠ অধ্যাপক ওয়েনডেল পোর্টার।
তিনি আরও বলেন, “পানির তাপমাত্রা এক্ষেত্রে কোনো বিষয় না। কারণ দেহ পানি পাওয়ার পর সেটা জৈবিক নিয়মে গরম করে। যদি গরমে কষ্ট হয় তবে দেহ ঠাণ্ডা রাখতে পানির প্রয়োজন হবে। কারণ ঘামের মাধ্যমে দেহ নিজেকে ঠাণ্ডা রাখে।”
শীতল বা স্বাভাবিক তাপমাত্রার পানিতে গোসল
পোর্টার বলেন, “শীতল পানিতে গোসল করার মাধ্যমে দেহের সার্বিক তাপমাত্রা কমানো যায়।”
এই প্রক্রিয়াকে আরও আরাম দিতে পারে মিন্টধর্মী কোনো সাবান ব্যবহার করে। পেপারমিন্ট তেলে থাকা মেন্থল মস্তিষ্টেক শীতল অনুভূতি পাঠায়। ফলে দেহ মনে করে ঠাণ্ডা কোনো কিছু খাওয়া হচ্ছে।
হাতে ঘাড়ে ঠাণ্ডা ভাপ দেওয়া
কব্জি বা ঘাড়ের আশপাশ ‘আইস ব্যাগ’ দিয়ে ঠাণ্ডা ভাপ দেওয়া বা ভেজা তোয়ালে দিয়ে মুছলে শরীরে ঠাণ্ডা অনুভূতি হয়। কারণ এসব ‘পাল্স’ বা নাড়ীর জায়গায় থাকা রক্তের শিরা ত্বকের খুব কাছাকাছি থাকে, যে কারণে দ্রুত দেহ ঠাণ্ডা হতে পারে।
টেবিল বা স্ট্যান্ড ফ্যান ব্যবহার
জানলার দিকে ফেরানো অবস্থায় ফ্যান বা এই ধরনের পাখা ব্যবহারের মাধ্যমে ঘরের ভেতরের গরম বাতাস বের করে দেওয়া যায়। ফলে সেখানে জায়গা দখল করে অপেক্ষাকৃত শীতল বাতাস।
যদি সকাল ও সন্ধ্যার তাপমাত্রা কমে তবে ঘরের দুপাশের জানালা খুলে দিতে হবে। এতে বাইরের ঠাণ্ডা বাতাস একদিক দিয়ে ঢুকে অন্য দিক দিয়ে বের হয়ে যাবে। ফলে ঘরের ভেতরটা হবে ঠাণ্ডা। এই সময় পাখা ছেড়ে রাখলে ঠাণ্ডা হওয়ার কাজটা দ্রুত ঘটবে।
আর সকালে এই পন্থা অবলম্বন করলে সূর্যের তাপ বাড়ার আগেই জানালার পর্দা টেনে দিন। আর ফ্যানের যত কাছাকাছি থাকা যায় ততই শরীর ঠাণ্ডা হবে। যে কারণে সিলিং ফ্যানের চাইতে টেবিল বা স্ট্যান্ড ফ্যান গরমে বেশি আরাম দেয়।
পর্দা টেনে রাখা
যেদিকে বেশি রোগ পড়ে সেদিনের জানলার পর্দা টেনে রাখতে হবে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত।
পোর্টার বলেন, “সূর্যের আলো সরাসরি যাতে ঘরে না ঢুকে সে ব্যবস্থা করতে হবে।”
এক্ষেত্রে ঘরে এয়ারকন্ডিশনার থাকলে ২১ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে তাপমাত্রা না কমানোর পরামর্শ দেন অস্ট্রেলিয়া-ভিত্তিক গৃহসজ্জার গবেষণামূলক প্রতিষ্ঠান ‘স্পেসেস অ্যালাইভ’য়ের সামান্থা হল।
তিনি বলেন, “তাপমাত্রা কমিয়ে এসি ছাড়লে ঘরের ভেতরটা ঠাণ্ডা করতে বেশি সময় নেবে। ফলে বিদ্যুৎ খরচ বাড়বে। তাই যতটা সম্ভব উচ্চ তাপমাত্রায় এসি ছেড়ে রাখতে হবে। এতে আরাম মিলবে।”
আরামদায়ক কাপড়ে ঘুমানো
যেসব কাপড়ে বাতাস চলাচল করতে পারে সেগুলোতে ঘুমাতে হবে। এক্ষেত্রে সুতির বিছানার চাদর বেশ কার্যকর। কারণ এসবে বাতাস চলাচল করতে পারে ভালোভাবে। আর রাতে দেহ ঠাণ্ডা রাখতে পারে।
অব্যহৃত ঘরের দরজা বন্ধ রাখা
বাসার কোনো ঘর যদি ব্যবহার না হয় তবে সেই ঘরের জানলা দরজা বন্ধ করে রাখার পরামর্শ দেন পোর্টার। এতে গরম বাতাস জমার পরিমাণ যেমন কমবে তেমনি ঘরে ঠাণ্ডা বাতাস ঢুকে বাড়তে জায়গা দখল করবে না।
এক্সজস্ট ফ্যান ব্যবহার
রান্নাঘর বা বাথরুমের গরম বাতাস বের করে দেওয়ার জন্য এক্সজস্ট ফ্যান ব্যবহার করা উপকরী।
জ্বলানি সাশ্রয়ী বাল্ব লাগানো
অন্যান্য বৈদ্যুতিক আলোর তুলনায় এলইডি বাল্বে তাপ উৎপন্ন হয় কম। যে কারণে এসব জ্বালানি সাশ্রয়ী আলো ব্যবহার করলে ঘরের ভেতর গরম কম লাগে।
রান্না করুন সকালে অল্প আঁচে
দিনের শুরুতে গরম কম থাকে। তাই সকালের মধ্যে সারাদিনের রান্ন শেষ করে ফেলে, ঘরে রান্নাঘরের উত্তাপ কম ছড়ায়। আর ওভেনের তাপ সারা ঘরে বেশি ছড়ায়। যে কারণে চুলায় অল্প আঁচে খাবার গরম করার চেষ্টা করতে হবে।
ঠাণ্ডা কিছু খাওয়া
আইসক্রিম বা এই ধরনের ঠাণ্ডা খাবার তাৎক্ষণিকভাবে দেহ ঠাণ্ডা করতে পারে।
তবে পোর্টার বলেন, “অতিরিক্ত গরমে বেশি মিষ্টি দেওয়া ঠাণ্ডা খাবার এড়াতে হবে। কারণ চিনি দেহের তাপমাত্রা বাড়িয়ে দেয়।”
তাই আইস ক্রিম খাওয়া হয়ত আনন্দদায়ক তবে চিনি নয়।