দুর্বার গণ-আন্দোলনের মাধ্যমে সরকারের পতন ঘটিয়ে বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে দলের নেতাকর্মীদের রাজপথের আন্দোলনে নামতে প্রস্তুত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস।
তিনি বলেছেন, বিএনপির আন্দোলন চলছে, আন্দোলন থাকবে না। সরকার যত অজুহাতে বাধা দেবে, খালেদা জিয়ার মুক্তির আন্দোলন ততই তরান্বিত হবে। করোনার দোহাই দিয়ে আন্দোলন দমানো যাবে না। যখনই আন্দোলন শুরু হয়, তখনই করোনার সংক্রমণ বাড়ে। জনগণ এখন সবই বোঝে। কোনো বাধা সৃষ্টি করে খালেদা জিয়ার মুক্তি আটকানো যাবে না। আমরা আর মুক্তি চাই না। আমরা গণ-আন্দোলন করে খালেদা জিয়াকে মুক্ত করব। এই সরকারের পতন ঘটাব ইনশা আল্লাহ। এখন মুক্তি নয়, খালেদা জিয়াকে মুক্ত করা হবে।
বুধবার (১২ জানুয়ারি) বিকেলে রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার বুড়িরহাট ঈদগাহ্ মাঠে অনুষ্ঠিত সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন। দলীয় চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি ও বিদেশে সুচিকিৎসার দাবিতে কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে রংপুর জেলা বিএনপি এই সমাবেশের আয়োজন করে।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে মির্জা আব্বাস বলেন, মাফিয়ারা দেশ চালাচ্ছেন। এই সরকার দেশকে মাফিয়া রাজ্যে পরিণত করেছে। সেনাবাহিনীর সাবেক প্রধান জেনারেল আজিজ সেনাবাহিনীকে কলঙ্কিত করেছেন। তার দুই ভাই হারেস ও জোসেফ মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি। তাদের রাষ্ট্রপতি মাফ করে দেন। অথচ একটি ছোট মামলায় তিনবারের প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার মুক্তি হয় না। এটা মেনে নেওয়া যায় না।
ফাঁসির দণ্ডাদেশপ্রাপ্ত আসামি, খুনি-সন্ত্রাসী, গডফাদাররা মুক্তি পায়, কিন্তু খালেদা জিয়ার বেলায় সেই আইন প্রয়োগ করা হয় না। আমাদের তারেক রহমানের নেতৃত্বে আরেকটা মুক্তিযুদ্ধ করব। এ দেশকে লুটেরা, চোরের দলের হাত থেকে রক্ষা করতে হবে। সরকার পতন ঘটিয়ে জেলের তালা ভেঙে খালেদা জিয়াকে মুক্ত করে বিদেশে চিকিৎসার জন্য নেওয়া হবে।
অবাধ সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হলে আওয়ামী লীগের কাউকে খুঁজে পাওয়া যাবে না দাবি করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই নেতা। তিনি দাবি করেন, খালেদা জিয়া বহুদলীয় গণতন্ত্রের অতন্দ্র প্রহরী। তার হাতেই সংসদীয় ব্যবস্থার প্রবর্তন হয়েছে। তিনি আপসহীন বলেই তাকে জেলে আটকে রেখে তিলে তিলে মেরে ফেলার ষড়যন্ত্র করছে সরকার। ভোটার-বিহীন সরকার বিএনপিকে ভয় পায়। তাই অবৈধ সরকার করোনার দোহাই দিয়ে বিএনপিসহ বিরোধী দলগুলোর সভা-সমাবেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। যদি সত্যিই করোনা বেড়ে থাকে, তাহলে বিএনপি দেশের মানুষের কথা ভেবে এমনিতেই তা বন্ধ রাখবে। কারণ, বিএনপি এই দেশ ও দেশের মানুষকে ভালোবাসে।
সমাবেশে প্রধান বক্তা হিসেবে বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির যুগ্ম মহাসচিব হাবিব উন নবী খান সোহেল সরকারপ্রধানসহ সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টির কঠোর সমালোচনা করে বলেন, আওয়ামী লীগের ‘ডার্লিং’ জাতীয় পার্টি। নির্বাচন এলে তাদের (জাতীয় পার্টির) কদর বাড়ে। জাতীয় পার্টি হাতে চুড়ি, কপালে টিপ আর গলায় মালা ছাড়া আওয়ামী লীগের ডাকে সাড়া দেয় না। এবারও একইভাবে আওয়ামী লীগ তাদের ‘ডার্লিং’ জাতীয় পার্টিকে নিয়ে ক্ষমতায় যাওয়ার স্বপ্ন দেখছে। কিন্তু এবার আর কোনো লাভ হবে না। আওয়ামী লীগ-জাতীয় পার্টির বিয়ে বসার এই সম্পর্ক টিকবে না।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে উদ্দেশ করে তিনি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, যদি বেগম খালেদা জিয়ার কিছু হয়, আমরা তা কেউই মানব না। তাহলে আপনিও বাঁচবেন না। আমরা তো কেউই বাঁচব না, সবাই মারা যাব। এ সময় তিনি নির্বাচন গঠন নিয়ে রাষ্ট্রপতির সংলাপ নিয়েও সমালোচনা করেন।
সোহেল আরও বলেন, রাষ্ট্রপতি, নতুন ইসি গঠন নিয়ে ধানাইপানাই বাদ দিন। যদি এই দেশের মানুষদের জন্য কিছু করতে চান, তাহলে অনতিবিলম্বে নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের প্রক্রিয়া শুরু করুন। এরপর সেই তত্ত্বাবধায়ক সরকার নির্বাচন কমিশন গঠন করবে। তা নাহলে নির্বাচন হতে দেওয়া হবে না। বিএনপি রাজনৈতিকভাবে অনেক শক্তিশালী। আজকের এই জনসভাই তার প্রমাণ।
রংপুর জেলা বিএনপির সভাপতি সাইফুল ইসলামের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক রইচ আহমেদের সঞ্চলনায় সমাবেশে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বিএনপির রংপুর বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক উপমন্ত্রী অধ্যক্ষ আসাদুল হাবীব দুলু, সহসাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ জাহাঙ্গীর আলম ও আব্দুল খালেক, যুবদল কেন্দ্রীয় কমিটির সহসভাপতি চৌধুরী মেহেবুল্লাহ আবু নুর, স্বেচ্ছাসেবক দল কেন্দ্রীয় সহসভাপতি অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ, কৃষক দল কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পদাক উম্মে
হাবিবা, ছাত্রদলের রংপুর বিভাগীয় টিম প্রধান সহসভাপতি মামুন খান প্রমুখ।
এ ছাড়া বক্তব্য রাখেন রংপুর মহানগর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি সামসুজ্জামান সামু, সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম মিজু, জেলা যুবদল সভাপতি নাজমুল আলম নাজু, মহানগর যুবদল সভাপতি মাহফুজ উন নবী ডন, মহানগর ছাত্রদল সভাপতি নুর হাসান সুমন, সাধারণ সম্পাদক জাকারিয়া ইসলাম জিম, জেলা ছাত্রদল সভাপতি মনিরুজ্জামান হিজবুল, সাধারণ সম্পাদক শরীফ নেওয়াজ জোহা প্রমুখ।
সমাবেশে রংপুর জেলা ও মহানগর বিএনপিসহ অঙ্গসংগঠনের নেতারা ছাড়াও বিভাগের আট জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে দলের নেতাকর্মী ও সমর্থকরা অংশ নেন। এর আগে দুপুর থেকে বুড়িরহাট ঈদগাহ মাঠে বিএনপিসহ অঙ্গ-সহযোগী সংগঠন যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, ছাত্রদল, কৃষক দল, মহিলা দল, ওলামা দল, শ্রমিক দলের নেতারা মিছিল নিয়ে আসেন।
পিএস/এনআই