মামলা একাধিক রয়েছে, তবু এক সপ্তাহ ধরেই জোর গুঞ্জন— গ্রেফতার হচ্ছেন ব্যবসায়ী আদম তমিজী হক। কিন্তু তার গুলশানের বাসায় তল্লাশি চালাতে গিয়ে ব্যর্থ হয়েছে র্যাব।
বুধবার সন্ধ্যার পরও তমিজীর বাড়ির বাইরে সাধারণ পোশাকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের ঘোরাফেরা করতে দেখা গেছে। পাশের সড়কে গাড়ি নিয়ে টহল দিতে দেখা গেছে র্যাব সদস্যদের।
তবে হক গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আদম তমিজী গ্রেফতার হননি। স্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে দিব্যি ওই বাড়িতেই তিনি আছেন।
তাকে একজন ‘বিস্ময়কর’ মানুষ হিসেবে বর্ণনা করে র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেছেন, ‘পরিস্থিতি বুঝে’ তাকে আইনের আওতায় আনার চেষ্টা করবেন তারা।’
গত সেপ্টেম্বরে, যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেলের বিরুদ্ধে সম্পত্তি দখলের অভিযোগ তুলেন আদম। এর জবাবে প্রতিমন্ত্রী রাসেল বলেছিলেন, নির্বাচন সামনে রেখে এটা তার বিরুদ্ধে একটি ‘চক্রান্ত’।
সেই সময় ফেসবুক লাইভে এসে ক্ষোভ ঝাড়েন আদম তমিজী। এমনকি তার বাংলাদেশি পাসপোর্টও পুড়িয়ে ফেলেন, যা নিয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া হয়। আওয়ামী লীগ থেকে তাকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হয়।
দেশে ফেরার পর গ্রেফতার এড়াতে তিনি ফেসবুক লাইভে এসে আত্মহত্যার হুমকি দেন। সম্প্রতি নিজেকে একজন ‘ইহুদি’ ঘোষণা করে তিনি আশ্রয় চান ইসরাইলের কাছে, যা নতুন আলোচনার জন্ম দেয়।
২০১৭ সালে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র নির্বাচনে তিনি আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন। সেই মনোনয়ন না পেলেও ২০২০ সালে দলটির ঢাকা উত্তর কমিটিতে জায়গা পান।
গত সেপ্টেম্বরে নিজের পাসপোর্ট পুড়িয়ে ফেলার সময় ফেসবুক লাইভে কান্নাজড়িত কণ্ঠে হাতজোড় করে ক্ষমা চান আদম তমিজী। তিনি বলেন, শেখ হাসিনা আমার মা। এ সময় বাংলাদেশে আর আসবেন না বলেও ঘোষণা দেন।
তিনি বলেন, পার্ক সার্কাস কলকাতা গিয়ে দেখো আমরা কেডা। দুই পাশে জমিদারবাড়ি কার? আমাদের হক পরিবারের। তুই আমাদের নাবাবো… বলেও বুক চাপড়ে কাঁদতে দেখা যায় এই ব্যবসায়ীকে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, আওয়ামী লীগ সম্পর্কেও বিভিন্ন ধরনের মন্তব্য করে তিনি নিজের দলে রোষের মুখে পড়েন।
দল থেকে বহিষ্কারের পর তার এসব কর্মকাণ্ড নিয়ে গত ১৫ নভেম্বর দক্ষিণখান থানায় মামলা করেন স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর আনিসুর রহমান নাঈম।
মামলায় বলা হয়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সম্পর্কে নানা রকম বিরূপ মন্তব্য করেছেন আদম তমিজী হক। তিনি জনশৃঙ্খলা পরিপন্থী কার্যকলাপ, মিথ্যা আক্রমণাত্মক তথ্য-উপাত্ত প্রচারের মাধ্যমে ‘প্রধানমন্ত্রীকে হত্যার হুমকি’ দিয়ে আসছেন।
ওই মামলার অগ্রগতি জানতে চাইলে পুলিশের উত্তরা বিভাগের উপকমিশনার মোহাম্মদ মোর্শেদ আলম বলেন, তমিজীর বিরুদ্ধে সাইবার নিরাপত্তা আইনে একটি মামলা হয়েছে। মামলায় নতুন কোনো অগ্রগতি নেই।
তিনি বলেন, আমরা তদন্ত করছি, যার বিরুদ্ধে অভিযোগ তার সঙ্গে এখনো কোনো যোগাযোগ করার সময় হয়নি।
অবশ্য র্যাব আদম তমিজীর গুলশানের বাসায় অভিযানে গিয়েছিল তার স্ত্রীর করা এক মামলায় আদালতের নির্দেশে কিছু নথিপত্র উদ্ধারের জন্য। কিন্তু তমিজী তখন ফেসবুক লাইভে এসে ‘নাটকীয়তার সৃষ্টি করেন’, বলেন র্যাবের মুখপাত্র খন্দকার আল মঈনের ভাষ্য।
তিনি বলেন, নিয়ম মেনেই তারা তল্লাশি করতে গিয়েছিলেন। কিন্তু তমিজী একপর্যায়ে চাকু নিয়ে আত্মহত্যার হুমকির পাশাপাশি জানালার কাচ ভেঙে এক পা বাইরে বের করে লাফ দেওয়ার হুমকি দেন।
অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে আমরা সেখান থেকে চলে আসি, বলেন মঈন।
আদম তমিজীরর স্ত্রী সাইরা সিদ্দিকী তানহা আদালতে গিয়ে ওই মামলা করেন গত অক্টোবরে। তবে পুলিশ বলছে, তানহা যে অভিযোগ করেছেন, এখন আর তার কোনো যৌক্তিকতা দেখছে না তারা।
মামলায় তমিজী ছাড়াও তার বাড়ির ঠিকানায় মো. বাশার এবং হযরত আলী আহসান নামের দুজনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে।
আদালতের নির্দেশনার বিষয়ে গুলশান থানার ওসি শেখ সাহানুর রহমান বলেন, এ বিষয়ে কাজ করতে গিয়ে জানা যায়, যে বাসায় তল্লাশি চালানোর জন্য আদালত নির্দেশনা দিয়েছে, সেই বাসায় তমিজী তার স্ত্রীকে নিয়েই অবস্থান করছেন। তাদের মধ্যে মিটমাট হয়ে গেছে।
ওসি জানান, তারা যে স্বামী-স্ত্রী মিলে গেছেন, তা ফেসবুক লাইভে তমিজী দেখিয়েছেন। তা ছাড়া যিনি অভিযোগকারী, তিনি আর পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করেননি। এ ব্যাপারে আদালতকে পরবর্তী তারিখে অবহিত করা হবে।