শ্রম আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে দায়ের করা মামলা নিয়ে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, সরকার বারবার বলছে এই মামলা সরকার করেনি ৷ কিন্তু এই মামলা সরকার করল নাকি শ্রমিক করল আপনারা তো কিছুই বললেন না। কলকারখানা অধিদপ্তর সরকারের। এ মামলা তারাই করেছে। শ্রমিকরা এ মামলা করেনি।
রোববার (২৮ জানুয়ারি) কাকরাইলে শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনালে খালাস ও জামিন চাইতে গিয়ে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন ইউনূস। শ্রম আইন লঙ্ঘন মামলার রায়ে ৬ মাসের সাজার বিরুদ্ধে ২৫টি যুক্তি দেখিয়ে খালাস চেয়ে আপিল করেন তিনি।
এ মামলার শিকার কীভাবে হলেন? এমন প্রশ্নের উত্তরে ড. ইউনূস বলেন, আমরা একটা স্বপ্নের পেছনে ছুটেছি। এই স্বপ্ন বুনতে গিয়ে কারো বিরাগভাজন হয়েছি। কিন্তু কেন এই মামলা করল সেটা বলতে পারব না। আমার প্রত্যাশা হচ্ছে আমরা নতুন পৃথিবী গড়ব। তিন শূন্যের পৃথিবী গড়ব। এ মামলার সাজা একটি ছোটখাটো ব্যাপার, এ নিয়ে আমাদের মাথাব্যথা নেই৷
ড. ইউনূস বলেন, শিক্ষা ব্যবস্থাকে সম্পূর্ণরূপে পাল্টে ফেলতে হবে। শিক্ষার্থীরা চাকরির জন্য লেখাপড়া করছে কিন্তু উদ্যোক্তা হবার জন্য লেখাপড়া করছে না। তরুণরাই আমাদের ভবিষ্যৎ। তারাই আগামীর পৃথিবী গড়বে। তাদের নিয়েই আমরা থ্রি জিরো ক্লাব করেছি। দেড় বছর আগে শুরু করা থ্রি জিরো ক্লাব আজ ৩৫টি দেশে শুরু হয়েছে। আমাদের সামনে অনেক কাজ রয়েছে। আজ তরুণরা এগিয়ে আসছে। সারা বিশ্ব থেকে এ কাজে বড় একটি সমর্থন পাচ্ছি। বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এগিয়ে আসছে। ১০৭টি বিশ্ববিদ্যালয়ে ইউনূস সোশ্যাল বিজনেস সেন্টার সৃষ্টি করা হয়েছে। ৩৭টি দেশে ইউনূস সেন্টার করা হয়েছে। রাশিয়াতেও ইউনুস সেন্টার শুরু হচ্ছে। আজকে আমরা যে সমস্যা ফেস করছি সেটা একাডেমিকরা সৃষ্টি করেছে, তাদেরকেই এর সমাধান দিতে হবে। তা না হলে এটা পাল্টাবে না। এ কারণেই আমরা একাডেমিকদের সঙ্গে কাজ করছি।
এদিকে ড. ইউনূসের আইনজীবী আবদুল্লাহ আল-মামুন বলেছেন, আজকে আদালত আমাদের আপিল শুনানির জন্য গ্রহণ করেছেন এবং নিম্ন আদালতের রায় সাসপেন্ড করেছেন। একইসঙ্গে আগামী ৩ মার্চ নিম্ন আদালতের সেসব নথি আনার জন্য তারিখ নির্ধারণ করেছেন। আর আপিল শুনানি শেষ না হওয়া পর্যন্ত সবাইকে স্থায়ী জামিন দেওয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, আজ আমরা আদালতে জামিন প্রার্থনা করেছি এবং আপিল করেছি। রাষ্ট্রীয় সর্বমহলে এমনকি বিদেশিদের কাছেও বলা হচ্ছে এ মামলা সরকার করেনি, শ্রমিকরা করেছে। কিন্তু ঘটনাটা সঠিক নয়। সরকার তার প্রতিষ্ঠান কলকারখানা অধিদপ্তরের মাধ্যমে এ মামলা করেছে। শ্রমিকদের চাকরি স্থায়ী করা হয়নি, বর্ধিত ছুটি দেওয়া হয়নি এবং লাভ্যাংশের ৫ শতাংশ দেওয়া হয়নি এমন তথ্য দিয়ে এ মিথ্যা মামলা করা হয়েছে। সরকারি নির্দেশে সরকারি প্রতিষ্ঠান এ মামলা করেছে।
মামলায় যে রায় হয়েছে সেটা সম্পূর্ণ অবৈধ। ৩০৭ ধারা অনুযায়ী এ মামলায় শাস্তি দেবার বিধান নেই। কারণ লেবার আইনের ২৩৬ ধারা অনুযায়ী কেবল এ মামলার শাস্তির বিধান আছে। এ ধারাতেই বলা আছে যদি বকেয়া থাকে তাহলে সেটা পরিশোধের জন্য নির্দিষ্ট সময় দেওয়া হবে। এটা না করলে ১ লক্ষ টাকা জরিমানা, প্রতিদিন ৫ হাজার টাকা করে। পাবলিক ডিমান্ড রিকভারি আইন অনুযায়ী এটা আদায় করা হবে। কিন্তু সেসব ভায়োলেট করে বিশ্বের কাছে নন্দিত নোবেলজয়ী ড. ইউনুস ও তার বন্ধুদের সামাজিক ব্যবসা ধ্বংস করার জন্য এ সাজা দেওয়া হয়েছে।