এবার এইচএসসি ও সমমানের কিছু পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে। আর কিছু বিষয়ের পরীক্ষা বাতিল করা হয়েছে। বাতিল পরীক্ষাগুলোর নম্বর নির্ধারণ করা হয়েছে এসএসসির ফলাফলের ভিত্তিতে। এ পদ্ধতি অনুসরণ করে এরই মধ্যে ফল প্রস্তুত করেছে শিক্ষা বোর্ডগুলো। মঙ্গলবার (১৫ অক্টোবর) বেলা ১১টায় একযোগে সব বোর্ড এ ফল প্রকাশ করবে।
শিক্ষা বোর্ড সূত্র বলছে, বাতিল পরীক্ষাগুলোর ক্ষেত্রে এসএসসি ও এইচএসসিতে যেসব বিষয়ের নামে হুবহু মিল রয়েছে, সেগুলোতে শতভাগ এসএসসির নম্বরই শিক্ষার্থীরা এইচএসসিতে পেয়েছেন। যদি কারও বিষয়ের ও বিভাগের (বিজ্ঞান, মানবিক ও বাণিজ্য) মিল না থাকে, সেক্ষেত্রে ‘সাবজেক্ট ম্যাপিং নীতিমালা’ অনুসরণ করা হয়েছে।
আন্তঃশিক্ষা বোর্ড পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক কমিটির প্রধান এবং ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অধ্যাপক আবুল বাশার জাগো নিউজকে বলেন, দুই পদ্ধতি অনুসরণ করে বাতিল পরীক্ষাগুলোর ফল তৈরি করেছি আমরা। প্রথমত খুবই সরল একটা প্রক্রিয়া, সেটা হলো—এসএসসিতে ওই বিষয়ে শিক্ষার্থী যে নম্বর পেয়েছিল, এইচএসসিতে সেই নামে বিষয় থাকলেই তাতে এসএসসির প্রাপ্ত নম্বর পেয়ে যাবে।
‘দ্বিতীয়ত প্রক্রিয়াটিও খুব জটিল নয়। এটা করোনাকালে ফল তৈরিতে যে সাবজেক্ট ম্যাপিং ছিল, সেটা অনুসরণ করে করা হয়েছে। এতে কেউ বঞ্চিত হবে না’ বলেও উল্লেখ করেন পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক।
সাবজেক্ট ম্যাপিং যেভাবে
কোনো পরীক্ষার্থী এসএসসি ও এইচএসসিতে একই বিভাগের হলে ফল তৈরি এসএসসির ভিত্তিতে। কেউ যদি এসএসসিতে বিজ্ঞান বিভাগে থাকার পর এইচএসসিতে বাণিজ্য বা মানবিক বিভাগে চলে আসে সেক্ষেত্রে কীভাবে ফল নির্ধারণ করা হবে, তা নিয়ে জানার আগ্রহ বেশি শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের।
বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটির সভাপতি অধ্যাপক তপন কুমার সরকার জাগো নিউজকে বলেন, ‘এটা সাবজেক্ট ম্যাপিং নীতিমালায় স্পষ্ট করে বলা আছে। ধরুন— কেউ বিজ্ঞান বিভাগ থেকে এইচএসসি দিয়েছিল। তিনি সেখানে পদার্থবিজ্ঞানে ৮৫ নম্বর পেয়েছিল। এবার সে এইচএসসিতে মানবিক বিভাগে চলে এসেছে। তার হয়তো পদার্থবিজ্ঞানের জায়গায় পৌরনীতি বা সমাজকল্যাণ আছে। অথবা অন্য কোনো বিষয়। তাকে পৌরনীতিতে এবার পদার্থবিজ্ঞানে এসএসসিতে যে নম্বর ছিল, সেটা পুরোটা দেওয়া হবে।’
‘একইভাবে কেউ এসএসসিতে উচ্চতর গণিত পড়েছে, পরীক্ষা দিয়েছে এবং তাতে ৭৫ নম্বর পেয়েছে। কিন্তু এইচএসসিতে সে বাণিজ্য বিভাগে চলে এসেছে। তাহলে তাকে উচ্চতর গণিতের ওই নম্বরটা হিসাববিজ্ঞান বা ব্যবস্থাপনা বিষয়ে দেওয়া হবে। এভাবে বিভাগ পরিবর্তন করা পরীক্ষার্থীদের কোন বিষয়ের পরিবর্তে কোন বিষয়কে ধরা হবে, তা নীতিমালায় আছে। কেউ এতে বঞ্চিত হবেন না’ যোগ করেন বোর্ড চেয়ারম্যান অধ্যাপক তপন কুমার সরকার।
তিনি আরও বলেন, ‘এটা নিয়ে কোনো ধোঁয়াশা বা রহস্য সৃষ্টির সুযোগ নেই। আমাদের করোনাকালীন ফল প্রকাশের অভিজ্ঞতা রয়েছে। বিশেষজ্ঞ কমিটি, টেবুলেশন শিট তৈরি ও মাঝপথে পরীক্ষা বাতিল হওয়ার বিষয়ে বোর্ডের সুস্পষ্ট নীতিমালা রয়েছে। নীতিমালা মেনেই বোর্ড ফল প্রস্তুত করেছে। কেউ বঞ্চিত হওয়ার সুযোগ নেই।’
প্রথা ভেঙে ভিন্ন আঙ্গিকে ফল প্রকাশ
গত বছরগুলোতে সব শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান গণভবনে প্রধানমন্ত্রীর কাছে ফলাফলের সারসংক্ষেপ তুলে দিতেন। সেখান থেকে প্রধানমন্ত্রী ফল প্রকাশের ঘোষণা দিতেন। এরপর শিক্ষামন্ত্রী আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট অথবা সচিবালয় থেকে এইচএসসির ফলাফল বিস্তারিতভাবে গণমাধ্যমের সামনে তুলে ধরতেন। এ প্রক্রিয়া এক রকম রীতি হয়ে উঠেছিল। এতে অনেক সময় ফল প্রকাশে দেরি হতো।
এবার সেই ধারায় পরিবর্তন আনছে অন্তর্বর্তী সরকার। সম্পূর্ণ ভিন্ন আঙ্গিকে এইচএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশ করতে যাচ্ছে শিক্ষা বোর্ডগুলো। যেখানে থাকছে না কোনো আনুষ্ঠানিকতা। সরকারপ্রধান বা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপদেষ্টাও ফলাফল প্রকাশের কোনো অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন না। সব প্রথা বা রীতি ভেঙে স্ব স্ব বোর্ড চেয়ারম্যনরা ফল ঘোষণা করবেন।
এ প্রসঙ্গে আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটির সভাপতি অধ্যাপক তপন কুমার সরকার জাগো নিউজকে বলেন, ‘এবার আগের সিস্টেমে (নিয়ম) ফল প্রকাশ হবে না। সম্পূর্ণ ভিন্নভাবে ফল প্রকাশ করা হবে। সরকারের কোনো ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ফল প্রকাশে অনুষ্ঠান করবেন না। আমরাও কোনো কথা বলবো না।’
তিনি বলেন, ‘ঠিক বেলা ১১টায় সব বোর্ডের ওয়েবসাইটে ফল প্রকাশ করা হবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে গেলেও শিক্ষার্থীরা ফল পাবেন। আর ১১টি বোর্ডের সমন্বিত যে ফল, তার সংক্ষিপ্তসার ঢাকা বোর্ড থেকে দেওয়া হবে। কোনো সংবাদ সম্মেলন বা ব্রিফিং করবো না আমরা। শুধু ফলাফলের সারসংক্ষেপটা আমরা সাংবাদিকদের দিয়ে দেবো।’
যেভাবে অনলাইনে ফল পাওয়া যাবে
ফল প্রকাশের দিন অর্থাৎ, মঙ্গলবার ফাতেহা-ই-ইয়াজদাহম উপলক্ষে কলেজ ছুটি। দুর্গাপূজার যে ছুটি চলমান, তা এদিনও থাকবে। ফলে কলেজে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি থাকবে না। সেদিক বিবেচনায় অনলাইনে কীভাবে ফলাফল জানা যাবে, তা বিস্তারিত জানিয়েছে শিক্ষা বোর্ড।
শিক্ষা বোর্ডের তথ্যানুযায়ী—এসএমএসের মাধ্যমে ফল পেতে মোবাইল ফোনের মেসেজ অপশনে গিয়ে ইংরেজি অক্ষরে এইচএসসি লিখে স্পেস দিয়ে বোর্ডের নামের প্রথম তিন অক্ষর লিখে স্পেস দিয়ে রোল নম্বর লিখে আবার স্পেস দিয়ে পাসের বছর লিখতে হবে। এরপর ১৬২২২ নম্বরে সেন্ড করতে হবে।
উদাহরণ—HSC DHA 123456 2023 লিখে পাঠাতে হবে ১৬২২২ নম্বরে। সঙ্গে সঙ্গেই ফিরতি এসএমএসে ফল জানিয়ে দেওয়া হবে।
অন্যদিকে ওয়েবসাইটের মাধ্যমে ফলাফল জানতে শিক্ষার্থীকে প্রথমে www.educationboardresults.gov.bd-এ ওয়েবসাইটে প্রবেশ করতে হবে। সেখানে থাকা ফলাফল অপশনে ক্লিক করে রোল ও রেজিস্ট্রেশন নম্বর দিয়ে সাবমিট করলেই শিক্ষার্থীরা তার পুরো রেজাল্ট শিট দেখতে পাবেন।
গত ৩০ জুন এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষা শুরু হয়। এতে পরীক্ষার্থী ছিলেন ১৪ লাখ ৫০ হাজার ৭৯০ জন। প্রথম প্রকাশিত রুটিন অনুযায়ী—৮ দিন পরীক্ষা হওয়ার পর কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে ১৮ জুলাইয়ের সব পরীক্ষা স্থগিত করা হয়। এরপর তিন দফায় পরীক্ষা স্থগিত করে সরকার।
সূচি অনুযায়ী—মোট ৬১ বিষয়ের পরীক্ষা গ্রহণ বাকি ছিল। বিভিন্ন বিভাগের (বিজ্ঞান, মানবিক ও বাণিজ্য) বিভিন্ন বিষয় থাকায় এতগুলো পরীক্ষা স্থগিত এবং পরে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে তা বাতিল করা হয়।